Advertisement
E-Paper

পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ‘জামতাড়া গ্যাং’

সাইবার প্রতারণার ‘ঘাঁটি’ বলে পরিচিত জামতাড়া। কিন্তু সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় তথ্য মিলেছে, ‘জামতাড়া গ্যাং’ আর শুধু জামতাড়ায় সীমাবদ্ধ নেই। এমন প্রতারণার চক্র চালানো হচ্ছে পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় বসেও। কী ভাবে চলছে এই চক্র? কেনই বা বন্ধ করা যাচ্ছে না?

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৪ ০৮:২১
Share
Save

‘জামতাড়া গ্যাং’ আর জামতাড়ায় সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে। বিশেষ করে ঝাড়খণ্ড পেরিয়ে পশ্চিম বর্ধমানের খনি-শিল্পাঞ্চলেও বিছোচ্ছে জাল। আসানসোল, অন্ডাল, দুর্গাপুর থেকে পর পর জামতাড়া গ্যাংয়ের সদস্য সন্দেহে কয়েক জন ধরা পড়ার পরে এমনটাই মনে করছে পুলিশের একাংশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে মোবাইলে আসা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) জেনে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়াই জামতাড়া গ্যাংয়ের কর্মপদ্ধতি। পুলিশের তরফে গ্রাহকদের ওটিপি কাউকে না জানানোর বিষয়ে সচেতন করা হয়। কিন্তু কোনও না কোনও নতুন ফন্দি বার করে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে এই গ্যাং। তদন্তকারীদের দাবি, ইদানীং জামতাড়ায় পুলিশের নজরদারি বেড়েছে। আর সে কারণেই দুষ্কৃতীরা শুধু জামতাড়ায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। তারা ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়। ধরা পড়ার আগে পড়শিরাও টের পাচ্ছেন না, পাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে এসে এমন কারবার চালাচ্ছিল জামতাড়া গ্যাংয়ের কোনও সদস্য।

গত জুন মাসের মাঝামাঝি আসানসোলের হিরাপুর থানার পুলিশ ইসমাইলের ষষ্ঠীনগরে একটি ভাড়া বাড়ি থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে প্রদুম যাদব ও সন্তোষ যাদব জামতাড়ার বাসিন্দা। অপর জন বিনয় পাত্রের বাড়ি জামুড়িয়ায়। ধৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু মোবাইল ফোন, লক্ষাধিক টাকা, অনেকগুলি করে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং একটি মোটরবাইক উদ্ধার হয়। এর পরে ২০ জুলাই রাতে অন্ডালের উখড়া সারদাপল্লির ভাড়া বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় তিন জনকে। সেখানেও ধৃত মণীশ মণ্ডল ও সন্তোষ মণ্ডলের বাড়ি জামতাড়ায়। অমর মণ্ডল নামে আর এক জনের বাড়ি দেওঘরে। তাঁদের কাছ থেকেও উদ্ধার হয় বেশ কয়েকটি করে মোবাইল, ডেবিট কার্ড ও সিম কার্ড।

সোমবার গভীর রাতে আবার দুর্গাপুরের ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার ইছাপুরের ভাড়া বাড়ি থেকে ঝাড়গ্রামের পুলিশ তিন যুবককে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। ধরা পড়ে জামতাড়ার বাসিন্দা সরোজ দাস, তার শ্যালক দুর্গাপুরের অমরাবতীর বাসিন্দা আকাশ দাস ও তার আর এক আত্মীয় সরপি মোড়ের বাসিন্দা বিকাশ দাস। মোবাইলের ওটিপি জেনে নিয়ে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দেওয়ার কয়েকটি অভিযোগের তদন্তে নেমে ঝাড়গ্রাম পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগ তাঁদের খোঁজ পায়। তাদের কাছ থেকেও প্রচুর মোবাইল, সিম কার্ড, এটিএম কার্ড-সহ নানা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত হয়। পুলিশের দাবি, সরোজ জামতাড়া গ্যাংয়ের সদস্য।

জামতাড়া থেকে এসে এ ভাবে পাড়ার ভিতরে বসে প্রতারণা চক্র চালানো হচ্ছিল, এমন কথা জানার পরে হতচকিত হয়ে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, পুলিশের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। এ ভাবে বহিরাগতেরা এসে অপরাধমূলক কাজকর্ম চালিয়ে গেলে পাড়ার শান্তি বিঘ্নিত হবে। নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা তো আছেই। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘লাগাতার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বহু সাইবার অপরাধের তদন্তে ইতিমধ্যে সাফল্য পেয়েছে পুলিশ। প্রতারিতদের অনেকে টাকা ফেরতও পেয়েছেন। নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’ তিনি জানান, সাইবার প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন করে তোলার কাজও চলছে ধারাবাহিক ভাবে।

কিন্তু বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময়ে পরিচয় খুঁটিয়ে দেখার বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা কেন তৈরি হচ্ছে না, প্রশ্ন উঠছে সে নিয়ে।

(চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durgapur Jamtara Gang

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}