Advertisement
E-Paper

খাতায় কি সই করানো উচিত, চাপান-উতোর

শনিবার বর্ধমান বাণীপীঠ হাই স্কুলের এক চাকরিহারা শিক্ষিকা স্কুলে গিয়ে মূল হাজিরা খাতায় সই করতে গেলে, প্রধান শিক্ষক তাপস ঘোষ বাধা দেন বলে অভিযোগ।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৬
Share
Save

কার্যত শাঁখের করাতের মতো অবস্থা। চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের হাজিরাখাতায় সই করানো নিয়ে জেলার প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এমনই পরিস্থিতি। তাঁদের সংগঠন-সহ একাধিক শিক্ষক সংগঠনের দাবি, বিভ্রান্তি কাটাতে শিক্ষা দফতরের তরফে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া দরকার।

চাকরিহারা শিক্ষকদের মূল হাজিরাখাতায় সই করতে দিলে আদালত অবমাননার দায়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন প্রধান শিক্ষকদের একাংশ। আবার অনেক প্রধান শিক্ষকের কথায়, শিক্ষা দফতর থেকে ওই রায় সম্পর্কিত কোনও নির্দেশিকা স্কুলে আসেনি। তা হলে কার নির্দেশে এক জন শিক্ষককে হাজিরা খাতায় সই করতে দেওয়া হল না, সে প্রশ্ন উঠলে তাঁদের জবাব দেওয়ার জায়গা থাকবে না। ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর তরফে শিক্ষা দফতরে চিঠি দিয়ে সাম্প্রতিক রায়ের পরে কী ভাবে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের হাজিরার নথি রাখা হবে, সে সম্পর্কে দ্রুত নির্দেশিকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

শনিবার বর্ধমান বাণীপীঠ হাই স্কুলের এক চাকরিহারা শিক্ষিকা স্কুলে গিয়ে মূল হাজিরা খাতায় সই করতে গেলে, প্রধান শিক্ষক তাপস ঘোষ বাধা দেন বলে অভিযোগ। স্কুলের শিক্ষকদের একাংশ এ নিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দেন। তখন আবার ওই শিক্ষিকা হাজিরাখাতায় সই করেন। ওই স্কুলেরই শিক্ষক, তৃণমূলের মাধ্যমিক শিক্ষা সমিতির জেলা সভাপতি অতনু নায়েকের অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষক সই করতে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। আমরা চেপে ধরতে রাজি হন।” প্রধান শিক্ষকের যদিও, “এ সব অপপ্রচার। ওই শিক্ষিকা স্কুলে আসছেন। আগেও সই করেছিলেন। তা হলে আজ বারণ করব কেন?”

তৃণমূলের ওই শিক্ষক সংগঠনের দাবি, কাটোয়ার এক স্কুলে চাকরিহারা শিক্ষিক-শিক্ষিকার গরহাজিরার জন্য খাতায় লাল কালির দাগ দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। সে নিয়েও হইচই হয়। কাটোয়া ২ ব্লকের আউরিয়া চারুচন্দ্র বিদ্যানিকেতন স্কুলের ৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকরি হারিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরে তাঁরা স্কুলে আসছেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, হাজিরাখাতায় তাঁদের নামের পাশে লাল কালির দাগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্ক হলে মূল হাজিরা খাতার বদলে ওই চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য পৃথক খাতা চালু করা হয়। তা নিয়েও বিতর্ক শুরু হওয়ায়, প্রধান শিক্ষক পিছু হঠেন। ওই স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। তাই স্কুলে গেলেও, হাজিরাখাতায় সই করলে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হতে পারে। সব মিলিয়ে আমরাও বিভ্রান্ত। কী করণীয়, বুঝতে পারছি না।” ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপসকুমার ঘোষ বলেন, “পুরো বিষয়টি ওই শিক্ষকদের উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে লাল কালি বা পৃথক খাতার ঘটনা ঠিক নয়।” অতনু নায়েকের কথায়, “শিক্ষা দফতরের নির্দেশ ছাড়া কোনও ভাবেই এক জন শিক্ষকের সই করার অধিকার কাড়া যাবে না।” মেমারির দেবীপুর স্টেশন গার্লস হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, শিক্ষা দফতরের কোনও নির্দেশিকা নেই। তাই করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না।

এ দিনই প্রধান শিক্ষকদের ওই সংগঠনের জেলা স্তরে বৈঠক ছিল। সেখানে প্রধান শিক্ষকেরা হাজিরা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশের দাবি তুলেছেন। ঠিক হয়েছে, প্রধান শিক্ষকেরা এ ব্যাপারে কোনও বিতর্কে জড়াবেন না। চাকরিহারা শিক্ষকদেরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শিক্ষকদের একটি সংগঠনের নেত্রী মনামী ঘোষের বক্তব্য, “শিক্ষকেরা বেতন পাবেন কি না ঠিক নেই। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে মূল হাজিরাখাতায় সই করাটা কি ঠিক? পরে ওই শিক্ষকেরা সমস্যায় পড়তে পারেন।” শিক্ষা ঐক্যমঞ্চের জেলা সম্পাদক সৌমেন্দ্র পাঁজা বলেন, “বিভ্রান্তি কাটানোর জন্য দ্রুত নির্দেশিকা দেওয়া উচিত শিক্ষা দফতরের।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSC Bardhaman

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}