অবসর নিয়েছি অনেক বছর হয়ে গেল। তবে শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে এখনও যুক্ত আছি। কারণ, আমার নিজের একটি পাঠশালা আছে। সেখানে পড়াতাম। আশপাশের গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসত। শিক্ষা ও শিক্ষকের উপরে আমার আলাদা টানা, তা এই ৮৫ বছর বয়সেও অনুভব করি। একটি প্রতিষ্ঠানের কর্তা হয়ে, সমাজের এক জন মানুষ হয়ে ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার এক সঙ্গে চাকরি চলে যাওয়া কি মানতে পারি?
যাঁদের চাকরি গিয়েছে, তাঁরা আমাদের ঘরের ছেলেমেয়ে। তাঁরা আমাদের মধ্যে থেকেই বড় হয়েছেন, পরীক্ষা দিয়েছেন। যোগ্যতার মান পেরিয়ে চাকরি পেয়েছেন। নিজের আনন্দে সংসার করেছেন। এখন যদি চাকরি চলে যায়, তাহলে তাঁদের মতো অসহায় আর কেউ হতে
পারেন না। আমার ব্যক্তিগত ভাবে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি মনে করছি, শিক্ষাব্যবস্থায় আরও স্বচ্ছতা আনা উচিত। তা হলে এ ধরনের গাফিলতি ঘটার প্রবণতা কম হবে।
শিক্ষকেরা আগেও নানা দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছেন। কিন্তু পুলিশকে কখনও তাঁদের প্রতি মারমুখী হতে দেখিনি। নিরস্ত্র শিক্ষকদের বুঝিয়েই শান্ত করত পুলিশ। শিক্ষকদের বুঝিয়ে সরকারের পরিকল্পনায় সাহায্য করেছে। এখন মারপিট, জেলে ভরা হচ্ছে। ওই সব শিক্ষকদের উপরে যা চলছে, তাতে অবসরপ্রাপ্ত এক জন শিক্ষক
হিসেবে ব্যথিত। কষ্ট হচ্ছে। কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসছে। এটা কখনও কাম্য নয়। ওই শিক্ষকেরা তো আমাদেরই ঘরের ছেলেমেয়ে। ওঁরা শিক্ষাব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য
চেষ্টা করেন। শিক্ষাঙ্গনে কোনও সমস্যা হলে ওই শিক্ষকেরাই তা মেটানোর চেষ্টা করেন। তাই শিক্ষকদের উপরে হামলা, থানায় নিয়ে যাওয়া, এগুলো ভাল দৃষ্টান্ত নয়
বলেই এক জন মাস্টারমশাই হিসেবে মনে করি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)