বিক্ষোভকারীদের হঠাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
ভাতা বাড়ানোর দাবি জানাতে যাওয়া শিক্ষকদের উপরে লাঠি চালানোর অভিযোগ উঠল পুলিশ এবং সিআইএসএফের বিরুদ্ধে। শুক্রবার ইসিএলের সদর দফতর সাকতোড়িয়ায় সংস্থা পরিচালিত প্রাথমিক স্কুলগুলির জনা বারো শিক্ষক তাতে জখম হন বলে দাবি। পুলিশ অবশ্য জানায়, বিক্ষোভ কর্মসূচির অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও ওই শিক্ষকেরা গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। পরিস্থিতি সামলা দিতে মৃদু লাঠি চালাতে হয়েছে। ইসিএল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা খনি বেসরকারি হাতে থাকার সময়ে শ্রমিক-কর্মীদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য নানা আবাসন এলাকায় প্রাথমিক স্কুল তৈরি হয়েছিল। সেই সব স্কুলের শিক্ষকেরা ভাতা পেতেন। খনি রাষ্ট্রায়ত্তকরণের পরে সেই সব স্কুল সংস্থার সমাজ কল্যাণ দফতরের অধীনে চালায় ইসিএল। তবে শিক্ষকদের সংস্থার স্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয়নি। তাঁরা এখনও ভাতা পান। সময়ের সঙ্গে সেই ভাতার পরিমাণ বেড়েছে। এখন শিক্ষকদের পাঁচ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। ১৫২টি এই রকম স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন ৬১০ জন।
এই শিক্ষকেরা বেতন বৃদ্ধি-সহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দাবি তুলেছেন। ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯ দফা দাবি জানিয়ে এ দিন শিক্ষকদের তরফে সাকতোড়িয়া সদর কার্যালয়ে সংস্থার সমাজ কল্যাণ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) রামদেব রাওয়ের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ছিল। সে জন্য কয়েকশো শিক্ষক কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। সেখানে আগে থেকেই প্রচুর পুলিশ এবং সিআইএসএফ মোতায়েন করা হয়েছিল। শিক্ষকেরা বিক্ষোভ দেখানোর শুরু করতেই তাদের সঙ্গে কার্যত খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। পুলিশ এবং সিআইএসএফ যথেচ্ছ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ।
কর্মসূচির উদ্যোক্তা ‘কয়লা খাদান শিক্ষক মোর্চা’র সভাপতি সঞ্জয়কুমার চৌধুরী অভিযোগ করেন, তাঁদের যে বেতন দেওয়া হয় তা অত্যন্ত কম। তা-ও আবার নিয়মিত মেলে না। স্বাস্থ্য পরিষেবাও পান না তাঁরা। বেতন বৃদ্ধি-সহ অন্য ভাতার দাবিতে এ দিনের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সঞ্জয়বাবু বলেন, “আমরা ডিসেরগড় স্টেডিয়াম থেকে মিছিল করে সদর কার্যালয়ে পৌঁছই। সেখানে শান্তিপূর্ণ জমায়েত করছিলাম। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পুলিশ এবং সিআইএসএফ বাহিনী আমাদের উপরে লাঠি চালিয়েছে।”
যদিও শিক্ষকদের এই অভিযোগ মানতে চাননি ইসিএলের সমাজ কল্যাণ দফতরের জিএম রামদেব রাও। তাঁর দাবি, তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বিক্ষোভের জায়গায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু খবর পান, শিক্ষকদের একাংশ পুলিশ এবং সিআইএসএফের উপরে হঠাতই চড়াও হয়েছেন। তখনই ধুন্ধুমার বেধে যায়। এর পরে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আর স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়নি। লাঠি চালানোর অভিযোগ উড়িয়ে জিএম পাল্টা দাবি করেন, ওই স্কুলগুলির বেশ কয়েকটিতে এখন আর কোনও পড়ুয়া আসে না। অথচ, সেখানকার শিক্ষকেরা নিয়মিত ভাতা পান। ইসিএল ঠিক করেছে, পড়ুয়া না থাকা স্কুলগুলি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষকদের একাংশ সেই কাজেও বাধা দিচ্ছেন বলে তাঁর অভিযোগ।
পুলিশের অবশ্য দাবি, পরিস্থিতির প্রয়োজনে মৃদু লাঠি চালাতে হয়েছে। এসিপি (পশ্চিম) অভিষেক রায় বলেন, “এ দিন বিক্ষোভ কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও বিক্ষোভ দেখানো ও গেট ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন কয়েক জন। নিরপত্তারক্ষীরা বাধা দিলে তাঁদের ধাক্কাধাক্কি করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে মৃদু লাঠি চালাতে হয়েছে।” তিনি জানান, ইসিএল কর্তৃপক্ষ অশান্তি পাকানোর জন্য লিখিত অভিযোগ করেছেন। তার ভিত্তিতে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy