সরু রাস্তায় যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র
বর্ধমান-বাঁকুড়া রোড হোক বা বাঁকুড়া মোড় থেকে আরামবাগ যাওয়ার রাস্তা, দুর্ঘটনা ঘটছে পরপর। পুলিশের হিসেবে, এ বছরে জনা বারো জন প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পুলিশের হিসেবের চেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে। সেই তালিকায় হুগলির মা-মেয়ে থেকে প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান পর্যন্ত রয়েছেন। প্রতিটি ঘটনাই ঘটছে দিনেরবেলা।
বৃহস্পতিবার সকালে হুগলির জয়রামবাটি যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় মেমারির নবস্থা গ্রামের সুব্রত ও সাবিত্রী মাঝি নামে এক দম্পতির। তার কয়েক দিন আগে ওই রাস্তায় গরু পারাপারের জন্য একটি ম্যাটাডর গতি কমাতেই পিছন থেকে একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই চালকের। তার আগে হুগলির গোঘাটের বালিবেলে গ্রাম থেকে এক দম্পতি সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে ভাতারের শুশুনিয়া গ্রামে যাচ্ছিলেন। ট্রাকের ধাক্কায় মা-মেয়ে প্রাণ হারান। খণ্ডঘোষের দইচাঁদা গ্রামের কাছে ট্রাক ও বাসের মুখোমুখি ধাক্কায় দু’জন প্রাণ হারান। রেষারেষি করতে গিয়ে বাস দুর্ঘটনাও ঘটেছে।
ওই রাস্তার নিত্য যাতায়াতকারী শিক্ষিকা সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায় থেকে স্থানীয় বাসিন্দা কৌশিক খাঁয়েরা বলেন, ‘‘প্রাণ হাতে করে যেতে হয়। বিপদের মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি।’’ স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ ইসমাইল আলি বলেন, ‘‘এই রাস্তা দিয়ে গরু-ছাগল হেঁটে যায়। ফলে, গাড়ির গতি কমে যায়। যানজট হয়। যানজট কাটার পরে সবাই তাড়াহুড়ো করে। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাস, ট্রাক থেকে মোটরবাইক—সবাই ‘ওভারটেক’ করার খেলায় মেতে ওঠে। তাতেই বিপদ বাড়ে। এ ছাড়া রাস্তার দু’দিকে অসংখ্য গ্রাম রয়েছে। সেখানকার রাস্তা থেকে মূল রাস্তায় উঠতে গিয়েও দুর্ঘটনা ঘটে।
দিনের আলোয় এত দুর্ঘটনা কেন? স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পুলিশ, সকলেরইদাবি, সরু রাস্তায় অত্যধিক গাড়ি যাতায়াত করে। তার ফলেই দুর্ঘটনা ঘটছে। পুলিশের হিসেবে, পাশাপাশি দু’টি গাড়ি কোনওমতে যাতায়াত করতে পারে এমন রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার ট্রাক-সহ হাজার পাঁচেক গাড়ি চলে। এর বাইরে রয়েছে মোটরবাইক। এই রাস্তা দিয়ে অনেক ট্রাক, ডাম্পার মেদিনীপুর যায়। দুর্গাপুর ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যেতে হলে তিন জায়গায় টোলট্যাক্স দিতে হয়। তা এড়ানোর জন্যই ভিন রাজ্যের গাড়িগুলি বর্ধমান থেকে আরামবাগ হয়ে ঘাটাল পর্যন্ত চলে যায়। রাতের দিকে এই গাড়ি কম থাকে বলে দুর্ঘটনাও কম, মনে করছেন পুলিশের আধিকারিকেরা।
পুলিশ জানায়, ওই রাস্তায় নিয়মিত নজরদারি চালানো হচ্ছে। এমনকী বাসের ‘ফিটনেস’ও দেখা হচ্ছে। গত তিন দিনে ট্র্যাফিক আইনে প্রায় দু’শো মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাস্তায় সিভিক ভলান্টিয়ার্স থেকে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় রায়না-মাধবডিহি-খণ্ডঘোষ-জামালপুর নিয়ে পৃথক ট্র্যাফিক ‘জোন’ তৈরি করেছেন। ডিএসপি পদমর্যাদার এক আধিকারিককে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেহেরাবাজারে ট্র্যাফিক পোস্ট তৈরি হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ওই রাস্তায় আপাতত গাড়ির গতি কমানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ গতি কমাতে স্পিড ব্রেকার, ট্র্যাফিক ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
তবে গাড়ির চাপ কমানো বা রাস্তা চওড়া করা ছাড়া পরিস্থিতি পুরোপুরি সামাল দেওয়া যাবে না— মনে করছেন এলাকাবাসী থেকে পুলিশ আধিকারিকদের অনেকে। পূর্ত দফতর জানায়, ওই রাস্তা চওড়া করার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। ‘ভারতমালা’ প্রকল্প থেকে চার লেনের রাস্তা তৈরি হবে। বিশদ রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে।
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy