মাল তোলা-নামা রাস্তাতেই। নিজস্ব চিত্র।
শহরের মানুষকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে রানিগঞ্জে বাইপাস রাস্তা তৈরির দাবি ছিল দীর্ঘদিন। ২০০৬ সালে দু’নম্বর জাতীয় সড়কের রানিসায়র মোড় থেকে রানিগঞ্জ স্টেশনের কাছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের গির্জাপাড়া মোড় পর্যন্ত সাত কিলোমিটার রাস্তার উদ্বোধন করেন তৎকালীন এডিডিএ চেয়ারম্যান বংশগোপাল চৌধুরী। কিন্তু বছরখানেকের মধ্যেই সেই রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বারবার আবেদন করা হলেও রাস্তার সংস্কার হয়নি। তার জেরে মেটেনি শহরের যানজটের সমস্যাও।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০০৬ সালে লোকসভা উপনির্বাচনে আসানসোল কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী ছিলেন বংশগোপালবাবু। অভিযোগ, ভোটের আগে তড়িঘড়ি এই রাস্তা তৈরি করে ভোটের আগেই তা উদ্বোধন করেন তিনি। কিন্তু মাসছয়েক পর থেকেই রাস্তার হাল খারাপ হতে শুরু করে। কিন্তু তেমন ভাবে কোনও সংস্কারই হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। রাস্তার হাল খারাপ হওয়ায় এই বাইপাস রাস্তা দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় বড় গাড়ির। গির্জাপাড়া মোড় থেকে জোড়াবটতলা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা খন্দে ভরে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অশোক ঘোষের অভিযোগ, বড় গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ছোট গাড়ি নিয়ে যাতায়াতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ছোটবড় দুর্ঘটনাও লেগে রয়েছে। একই অভিযোগ পুরনো মল থেকে আদিবাসী পাড়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার।
রানিগঞ্জ বণিক সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ খৈতান জানান, বাম আমলে কোটি টাকা খরচ করে এই রাস্তা নির্মাণ হলেও তা মানুষের কাজে লাগেনি। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে রাস্তার হাল ফেরাতে টাকা অনুমোদন হয়েছে বলে শুনেছেন। কিন্তু কবে সেই কাজ শুরু হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে জানান তিনি। বিভিন্ন গাড়ির চালকেরা জানান, ওই রাস্তায় গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার পাশাপাশি গাড়ির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ওই রাস্তায় কেউ গাড়ি নিয়ে যেতে চান না।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এই রাস্তার গির্জাপাড়া মোড় থেকে রানিগঞ্জ মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ শহরের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, যা হওয়ার কথা নয় বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর। সেজন্য ‘মিনিস্ট্রি অব সারফেসে’র তরফে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের গির্জাপাড়া মোড় থেকে মঙ্গলপুর হয়ে একটি বাইপাস তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই বাইপাস-সহ ৪০৩ কিলোমিটার রাস্তার জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। যদিও তা কবে হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে শহরবাসীর। ওই রাস্তার দিয়ে প্রতিদিন বাঁকুড়া, মেদিনীপুর-সহ দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গগামী বহু গাড়ি যাতায়াত করে। দীর্ঘদিন রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ না হওয়ায় ব্যাপক যানজট হয় বলে জানান বাসিন্দারা। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ তাঁদের।
এডিডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান বংশগোপাল চৌধুরী জানান, ২০০৫-০৬ অর্থবর্ষে অস্থায়ী বাইপাস নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে ২০১০ সালে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কাজের জন্য দরপত্রও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু বিধানসভা ভোট এসে যাওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি বলে দাবি তাঁর। তিনি জানান, গির্জাপাড়া মোড় থেকে বক্তারনগরের পাস দিয়ে মঙ্গলপুর পর্যন্ত স্থায়ী বাইপাস তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরের তরফে ২০১০ সালে সমীক্ষা করে হয়েছিল। বংশগোপালবাবুর অভিযোগ, ৮ মাস আগে পর্যন্ত পূর্ত দফতরকে তিন বার চিঠি দিলেও প্রতিবার জেলাশাসকের দফতরের মাধ্যমে জানানো হয়েছে, বিষয়টি তাঁদের নজরে রয়েছে।
এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রানিগঞ্জ বাইপাসের সংস্কারের জন্য এডিডিএ-র তরফে সাড়ে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কাজের পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য নগরোন্নয়ন মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy