জন্মজয়ন্তী পালন। নিজস্ব চিত্র।
বাগান পেরিয়ে বারান্দায় ঢুকলেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সেনার পোশাকে মূর্তি। ফুল, মালা, চন্দন, ধূপ জ্বালানো আসনের কাছে। প্রতিদিনই নেতাজির এ ভাবে পুজো হয় দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গির দত্ত বাড়িতে। আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য ছিলেন পরিবারের প্রয়াত সদস্য সুধাংশুশেখর দত্ত। নিজের বাড়িতে নেতাজিকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করা শুরু করেছিলেন তিনিই। সেই ধারা বজায় রেখেছেন অকৃতদার সুধাংশুবাবু যাঁকে মেয়ের মতো মানুষ করেছিলেন সেই বনশ্রী রায়দাস ও তাঁর পরিবার।
সোমবার নেতাজির জন্মদিনে সকাল থেকেই দত্ত বাড়িতে ছিল সাজো-সাজো রব। বাগানের ফুল দিয়ে মালা গেঁথে বাড়ির মহিলারা সাদা শাড়ি পরে শাঁখ বাজিয়ে নেতাজির মূর্তিতে মিষ্টি, চকোলেট নিবেদন করেন। সামনে রাখা হয় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা আজাদ হিন্দ ফৌজের নানা বই। অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা বনশ্রীদেবী বলেন, ‘‘ছোট থেকেই দেখেছি, জ্যাঠামশাই বরাবর এ ভাবে নেতাজিকে স্মরণ করতেন। তাঁর আর্দশেই জীবনযাপনের চেষ্টা করি।’’
বনশ্রীদেবীরা জানান, আজাদ হিন্দ ফৌজে উঁচু পদে ছিলেন সুধাংশুশেখরবাবু। আসল বাড়ি চন্দননগরে। পঞ্চাশের দশকে এক বেসরকারি সংস্থায় চাকরি নিয়ে চলে আসেন দুর্গাপুরে। ১৯৬৬ সালে ভিড়িঙ্গিতে বাড়ি করেন। ১৯৬৭ সালে ইস্পাতনগরীর আকবর রোডে নেতাজির স্মরণে এক অনুষ্ঠানে সুধাংশুবাবুর হাতে ওই মূর্তিটি তুলে দেওয়া হয়। তা বাড়িতে এনে সুধাংশুবাবু পুজো শুরু করেন। স্বামী বিবেকানন্দ, ঋষি অরবিন্দের মতো মণীষিদেরও পুজো হয় এই বাড়িতে।
বনশ্রীদেবী সুধাংশুবাবুর বন্ধু অমূল্যকুমার রায়ের মেয়ে। তিনি জানান, সুধাংশুবাবু তাঁকে নিজের মেয়ের মতোই মানুষ করেছেন। পরে তিনি পাকাপাকি ভাবে এই বাড়িতে চলে আসেন। বনশ্রীদেবী বলেন, ‘‘জ্যাঠামশাইয়ের কাছে নেতাজি নিয়ে কত কথা শুনেছি তার শেষ নেই। এক বার নাকি টানা যুদ্ধ চলছে। জুতো-মোজা বহু দিন না খোলায় নেতাজির পায়ে ঘা হয়ে গিয়েছিল। জ্যাঠামশাই জোর করে গরম জল দিয়ে তা পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন।’’ নেতাজিকে নিয়ে একটি বইও লিখেছিলেন সুধাংশুবাবু। বনশ্রীদেবীর পারিবারিক বন্ধু মধুমিতা গুহ বলেন, ‘‘নেতাজিই ওই পরিবারের ধ্যানজ্ঞান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy