Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কিছুই নেই, শহর ছেড়ে যাচ্ছেন বহু

পুর-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও ডাক্তারের দেখা মেলে না। ফলে দুর্ঘটনা হোক বা প্রসবযন্ত্রণা ছুটতে হয় কাটোয়ায়। কলেজ নেই। রাস্তাঘাট সরু, তারও অর্ধেক জুড়ে বসে বাজার। শহরবাসীর ক্ষোভ, বোঝায় যায় না পুর এলাকায় বাস করছেন না গ্রামে। অনেকে শহর ছেড়ে কাটোয়া বা অন্যত্র পাকাপাকি ভাবে চলেও যাচ্ছেন।

এ ভাবে রাস্তার মাঝখানেই দাঁড়িয়ে থাকে বাস। নিজস্ব চিত্র

এ ভাবে রাস্তার মাঝখানেই দাঁড়িয়ে থাকে বাস। নিজস্ব চিত্র

সুচন্দ্রা দে
দাঁইহাট শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫০
Share: Save:

বয়স দেড়শো তবু ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবাটুকুও নেই দাঁইহাট পুরসভায়।

পুর-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও ডাক্তারের দেখা মেলে না। ফলে দুর্ঘটনা হোক বা প্রসবযন্ত্রণা ছুটতে হয় কাটোয়ায়। কলেজ নেই। রাস্তাঘাট সরু, তারও অর্ধেক জুড়ে বসে বাজার। শহরবাসীর ক্ষোভ, বোঝায় যায় না পুর এলাকায় বাস করছেন না গ্রামে। অনেকে শহর ছেড়ে কাটোয়া বা অন্যত্র পাকাপাকি ভাবে চলেও যাচ্ছেন।

১৪টি ওয়ার্ডের এই পুরসভার বাসিন্দা দু’হাজারের বেশি। অথচ স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা, নিকাশি, রাস্তাঘাট, ফেরিঘাটের মতো সমস্ত পরিষেবাতেই ঘাটতি রয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, প্রতি ভোটের আগে সব রাজনৈতিক দলের ইস্তেহারে দাঁইহাটে বাসস্ট্যান্ড ও কলেজ তৈরির প্রতিশ্রুতি মেলে। কিন্তু বাস্তবে সব ফাঁকা বুলি। এখনও ব্লক মোড়ের অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ডেই দাঁড়ায় বর্ধমান, রানাঘাট ও আসানসোল যাওয়ার চারটি বাস। রাতেও ওই মোড়েই তিনটি বাস দাঁড়ায়। বিক্ষিপ্ত ভাবে বাস দাঁড়িয়ে থাকায় রেলগেট লাগোয়া ওই রাস্তায় যানজটও রোজকার ছবি। বছর ছয়েক আগে কলেজ তৈরির জন্য দাঁইহাট হাইস্কুল ছ’বিঘা জায়গা দেয়। স্থানীয় এক ব্যক্তির দেওয়া ২০ লক্ষ টাকায় জমিটি রেজিস্ট্রি হয়ে কলেজ তৈরির বিষয়ে পরামর্শ দানের জন্য একটি কমিটিও গঠিত হয়। অথচ কাজ শুরু হয়নি এখনও। ফাঁকা জমিতে বেআইনি কাজকর্ম বাড়ছে বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ।

নির্দিষ্ট বাজারও নেই গোটা পুর এলাকায়। ফলে পুরোনো কাটোয়া-কালনা রোডের উপরেই বসে আনাজ, মাছ বাজার। রাস্তার উপরেই বাজারের আবর্জনা পড়ে। আবার নির্দিষ্ট পার্কিং এলাকা না থাকায় সকালের দিকে বাজারে আসা সমস্ত সাইকেল ও মোটরবাইকও দাঁড় করানো থাকে ওই রাস্তায়। নোংরা, ভিড়ে গাদাগাদি করে যাতায়াতে নাকাল হন শহরবাসী। তাঁদের আরও দাবি, জেলা পরিষদের অধীনে থাকা দেওয়ানগঞ্জ ফেরিঘাটে শৌচালয়, সিসিটিভি, যাত্রী প্রতীক্ষালয় নেই। সম্প্রতি সাংসদ তহবিলের টাকায় একটি হাইমাস্ট আলো বসানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলেও দাবি বাসিন্দাদের। বকুলতলা, পাতাইচণ্ডীতলা ও টাউন হল মোড়ে পুরসভা পরিচালিত তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সেগুলির অবস্থা তথৈবচ। সপ্তাহে দু’দিন ঘন্টাখানেকের জন্য কেন্দ্রগুলি খোলা হলেও পরিষেবা কিছুই মেলে না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুধুমাত্র পোলিও টিকা দেওয়া হয়। যে কোনও রকম অসুস্থতায় ভরসা ১০ কিলোমিটার দূরের কাটোয়া হাসপাতাল। ফি দিন দুপুরে ও রাত ন’টা বাজতেই ঝাঁপ পড়ে যায় ওষুধের দোকানেও। ফলে রাতবিরেতে কারও শরীর খারাপ হলে গাড়ি ভাড়া করে শহরের বাইরে ছোটা ছাড়া উপায় থাকে না বাসিন্দাদের। ক্ষোভ রয়েছে নিকাশি নিয়েও। বাসিন্দাদের দাবি, অল্প বৃষ্টিতেই ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ভাগীরথীর তুলনায় শহর নিচু হওয়ায় ও জল বেরনোর কোনও জায়গা না থাকায় শহরে জল গঙ্গায় মিশতে পারে না।

আশিস দত্ত ১২ বছর আগে দাইহাট ছেড়ে কাটোয়ার কাবিরাজপাড়ায় বাড়ি করেছেন। দাঁইহাটের টাউন হল পাড়ায় বাড়ি ছিল তাঁর। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘এত বছরেও হয়নি যখন আর ভরসা রাখতে পারি না। পুর নাগরিক হিসেবে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, হাসপাতাল এ টুকু সুবিধা তো চাইতেই পারি!’’

পুরপ্রধান শিশির মণ্ডল বলেন, ‘‘এত দিন অনুন্নয়নের জন্য দাঁইহাটবাসী কাটোয়া বা বর্ধমান চলে গিয়েছেন। জনসংখ্যার অভাবে নসিপুর ও নলাহাটিকে দাঁইহাট পুরসভার অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। দেড়শো বছরের অনুষ্ঠানের আগেই দমকল, বাসস্ট্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।’’ (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Municipality Facility
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE