মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে খাতা দেখতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে বলে অভিযোগ করলেন শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, কোনও স্কুলে একটি বিষয়ের একাধিক শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও তাঁদের মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক কোনও পরীক্ষার খাতাই দেখতে হচ্ছে না। আবার কোনও স্কুলে ওই বিষয়েরই মাত্র এক জন শিক্ষক থাকলেও তাঁকে দু’টি পরীক্ষারই খাতা দেখতে হচ্ছে। এর জেরে স্কুলের পঠন-পাঠনও ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি।
মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে ৩ মার্চ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও শেষ হয়েছে ৩১ মার্চ। এর মধ্যেই মাধ্যমিকের খাতা পরীক্ষক শিক্ষকদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। পয়লা এপ্রিল ছিল শেষ পর্যায়ের খাতা জমা দেওয়ার দিন। উচ্চমাধ্যমিকের খাতার বন্টনও শুরু হয়ে গিয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম পর্যায়ের খাতা জমাও দিয়েছেন অনেকে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, কোনও বিষয়ের একজন পরীক্ষককে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দুটি পরীক্ষার খাতাই দেখতে হচ্ছে। অথচ পার্শ্ববর্তী কোনও স্কুলের ওই বিষয়েরই শিক্ষককে কোনও খাতা দেখতে হচ্ছে না। দুর্গাপুরের লাউদোহা থানার নতুনডাঙা হাইস্কুলে ইংরেজির ২ জন শিক্ষক থাকলেও তাঁদের খাতা দেখতে হচ্ছে না। অথচ দুর্গাপুর প্রজেক্ট টাউনশিপ গার্লস স্কুলে ইংরেজির মাত্র এক জন শিক্ষিকা রয়েছেন। কিন্তু তাঁকে দুটি পরীক্ষারই খাতা দেখতে হচ্ছে। এর জেরে নিয়মিত ক্লাস নিতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানান ওই শিক্ষিকা। একই সমস্যার কথা জানালেন দুর্গাপুরের একাধিক স্কুলের শিক্ষকরা।
খাতা দেখার পাশাপাশি পরীক্ষার মরসুমে গার্ড দেওয়া থেকে শুরু করে সকালে প্রশ্নপত্র আনার মতো গুরুদায়িত্বও পালন করতে হয় অনেক শিক্ষককে। আসানসোলের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানালেন, সাধারণভাবে পর্ষদ বা সংসদের তরফে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও তাঁদের যোগ্যতামান বিষয়ে একটি তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়। স্কুলগুলির সূত্রে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ শিক্ষকের প্রয়োজনীয় যোগ্যতামান থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। দুর্গাপুরের একটি স্কুলে ৩০ জন শিক্ষক থাকলেও খাতা দেখার দায়িত্ব পেয়েছেন মাত্র ১০ জন।
পরীক্ষকদের একটি বড় অংশই জানান, অল্প সময়ের মধ্যে দুটি পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গত বছরেও একই সমস্যায় পড়েন শিক্ষকেরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, “চেষ্টা করেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না। এর জেরে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে পড়ুয়াদেরই।’’ কাঁকসার মলানদিঘি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তন্ময় চট্টোপাধ্যায় বা অন্ডাল হাইস্কুলের শিক্ষক আশিস কুমার মণ্ডলদের দাবি, ‘‘পরীক্ষার খাতা সমভাবে বন্টন করা গেলেই একমাত্র সুষ্ঠু মূল্যায়ন হতে পারে।’’
যদিও সমন্বয়ের অভাব ও সমস্যার কথা মানতে নারাজ উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের জেলার আঞ্চলিক আধিকারিক শৌভিক গড়াই। শৌভিকবাবু বলেন, “সারা বছরে মাত্র ১-২ সপ্তাহ খাতা দেখার চাপ থাকে।” তাঁর আরও দাবি, নিউট্রিশন, এডুকেশন, সংস্কৃত, হোম সায়েন্স বা দর্শনের মতো বিষয়গুলিতে পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষক সংখ্যা কম থাকায় চাপ বেশি পড়ে। অন্যদিকে সমস্যার কথা মেনে নিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের জেলার আঞ্চলিক আধিকারিক অরুণ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, “মাধ্যমিক আগে শেষ হওয়ায় খাতা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা কে পাবেন তা জানার উপায়ও থাকে না।’’ আগামী বছর থেকে সমস্যা রুখতে সংসদের কাছে পরীক্ষকদের তালিকা আগে থেকে চেয়ে পাঠানো হবে বলে জানান অরুণবাবু। মাধ্যমিকের পরীক্ষকদের তালিকাও সংসদে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy