পাঁচ সন্তানের ছোট দু’জনকে নিয়ে অসুস্থ বাবাকে বিহার থেকে দেখতে এসেছিলেন মেয়ে। কিন্তু দুর্গাপুরের তামলা নালায় ডুবে মৃত্যু হয়েছে দুই শিশুরই। দুই শিশু পূজা কুমারী (৭) ও ঋষভ কুমারের (৫) মৃত্যুর পরে শোকে মুষড়়ে পড়েছে তাদের পরিবার, পাড়া-পড়শিরা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুরের মেনগেট এলাকার তামলা বস্তির বাসিন্দা রামচন্দ্র সিংহের মেয়ে লক্ষ্মীদেবীর বিয়ে হয়েছে বিহারের পটনার মানা এলাকার বাচ্চু সিংহের সঙ্গে। তাঁদের চার মেয়ে ও এক ছেলে। ছোট মেয়ে পূজা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল এবং বোন-ভাইদের মধ্যে সবার ছোট ঋষভ ছিল নার্সারির পড়ুয়া। এই দু’জনকে নিয়েই বুধবার অসুস্থ বাবা রামচন্দ্রবাবুকে দেখতে দুর্গাপুর এসেছিলেন লক্ষ্মীদেবী। পূজা ও ঋষভ, এই দু’জনের মধ্যে বয়সের ফারাক বেশি না হওয়ায় তাদের এক সঙ্গেই সবসময় দেখা যেত বলে জানান বাড়ির লোকজন। খেলাধুলো, তা-ও চলত এক সঙ্গেই। ‘ওই খেলতে যাওয়াটাই কাল হল’, কাঁদতে কাঁদতে বারবার সেটাই বলছিলেন লক্ষ্মীদেবী।
নালায় দেহ ভাসছে শুনে ছুটে গিয়েছিলেন পূজা ও ঋষভের মামা মোহন সিংহ। দেহ উদ্ধারের পরে তা ভাগ্নি ও ভাগ্নের দেখতে পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। যাঁরা দেহ দু’টি উদ্ধার করেছেন, সেই রোহিত শর্মা ও দীপক মুর্মুও শোকগ্রস্ত। রোহিতের কথায়, ‘‘এমন ঘটনা ভাবতেই পারছি না। মনে হয়, মাঠে খেলতে যাবে বলেই ওরা দু’জনে নর্দমা পার হতে চেয়েছিল।’’
পড়শিরা জানান, স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা তামলা নালার কোন অংশে কেমন জল রয়েছে, তা জানে। কিন্তু পূজা ও ঋষভের পক্ষে তা জানাটা সম্ভব ছিল না। দীপক অবশ্য বলেন, ‘‘তামলার পাড় বরাবর রাস্তা রয়েছে। আমাদের এলাকার বাচ্চাদের অনেকেই ওই রাস্তা দিয়ে মাঠে যায়।’’
ছোট মেয়ের সঙ্গে একমাত্র ছেলের মৃত্যু সংবাদে মুষড়ে পড়েন লক্ষ্মীদেবী। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘‘চার দিদি মিলে ঋষভকে আগলে রাখত। তা সত্ত্বেও আমার ছেলে-মেয়েটা চলে গেল।’’ নাতি-নাতনির মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন অসুস্থ দাদু রামচন্দ্রবাবুও। কাঁদতে কাঁদতে তিনিও বলেন, ‘‘আমাকে দেখতে এসেই বিপদ হল। চির দিনের মতো ওরা হারিয়ে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy