প্রতীকী ছবি।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক সেবাকেন্দ্রের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠল। সোমবার দুপুর থেকে ওই সেবাকেন্দ্রের গ্রাহকেরা মেমারি থানায় টানা বিক্ষোভ দেখান। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার রাতে ওই সেবাকেন্দ্রের কর্ণধার দেবী ঢালির দাদা গোকুলচন্দ্র ঢালিকে মেমারি থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। আটক করা হয়েছে আরও দু’জনকে। তবে দেবী পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মেমারির তারকেশ্বর রোডের উপরে পারিজাত নগরে ওই ব্যাঙ্কের গ্রাহক সেবাকেন্দ্র বা সিএসপি (কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট) রয়েছে। নিজের বাড়িতেই ২০১৩ সালে ওই সেবাকেন্দ্রটি দেবী ঢালি খোলেন। কিন্তু, আদতে কেন্দ্রটি চালাতেন মহেশডাঙা ১ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা গোকুল ও তাঁর স্ত্রী শর্মিষ্ঠা। পারিজাত নগরের চম্পা বিশ্বাস পুলিশের কাছে দেবী, গোকুল, শর্মিষ্ঠা এবং গোপাল মণ্ডল নামে এক জনের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেন। চম্পাদেবীর দাবি, গত বছর ১৫ জুলাই এক বছরের জন্য ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে এক লক্ষ টাকা ‘ফিক্সড’ করেন।
এ বছর চম্পাদেবীর সুদ-সহ টাকা ফেরত পাওয়ার কথা। নির্দিষ্ট সময়ের পরেও প্রাপ্য টাকা না-পেয়ে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এবং আরও কয়েক জন গ্রাহক ওই ব্যাঙ্কের মেমারির প্রধান শাখায় যোগাযোগ করেন। সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, এক বছরের জন্য টাকা জমা রাখা বাবদ যে সার্টিফিকেট গ্রাহকদের দেওয়া হয়েছিল, তা নকল। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই গ্রাহকদের একটা বড় অংশ ওই সেবাকন্দ্র থেকে টাকা তুলতে ভিড় জমান। কিন্তু প্রতিদিনই ‘লিঙ্ক নেই’ বা ‘টাকা নেই’ বলে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুর থেকে ওই কেন্দ্রটি ঘেরাও করে রাখেন গ্রাহকেরা। টাকা চেয়ে আটকে রাখা হয় গোকুল, শর্মিষ্ঠা এবং সেবাকেন্দ্রের এক কর্মীকে। মঙ্গলবার ভোরে ওই তিন জনকে পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। গ্রাহকেরাও থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। যদিও তাঁরা প্রতারণার অভিযোগ করতে নারাজ ছিলেন। শেষ পর্যন্ত চম্পাদেবী নথি-সহ ওই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ওই নথি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মেমারির প্রধান শাখায় পাঠায়। ওই শাখার ম্যানেজার দেবাশিস মিদ্যা পুলিশকে লিখিত ভাবে জানান, ওই নথি ব্যাঙ্কের আসল নথি নয়। ব্যাঙ্কের কোনও আধিকারিকের সই-স্ট্যাম্প কিছুই নেই। ব্যাঙ্কের বর্ধমান আঞ্চলিক (১) দফতরের এক কর্তা বলেন, “ব্যাঙ্ক ড্রাফটের নথি দিয়েই ফিক্সড করা হয়েছে।’’ এর পরেই পুলিশ নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে।
ধৃত গোপালকে ৭ দিন নিজেদের হেফাজতে চেয়ে বুধবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে পুলিশ। বিচারক ৬ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, গোকুল-সহ অভিযুক্ত চার জনই আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন বর্ধমান জেলা জজের এজলাসে। সেই আর্জিও নামঞ্জুর হয়েছে। দেবী ঢালি এবং গোপাল গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই সেবাকেন্দ্রের প্রায় ১৫০০ গ্রাহক রয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই ভ্যান, টোটো চালান বা বালাপোশ-লেপ তৈরি করেন। মূলত তাঁরাই বিশ্বাস করে ওই গ্রাহক সেবাকেন্দ্রে টাকা জমা দিতেন। তাঁদের পক্ষে আমানতের জাল সার্টিফিকেট বোঝা সম্ভব হয়নি। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ২৩৬ জন গ্রাহকের ২১ লক্ষেরও বেশি টাকা আত্মসাৎ হয়ে থাকতে পারে। পুলিশের দাবি, ধৃত গোকুল জিজ্ঞাসাবাদের সময় টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন। তাঁরা ওই টাকা দিয়ে জমি-সহ অন্যান্য সম্পত্তি কিনেছেন বলে জানিয়েছেন। এখন চাপে পড়ে টাকা ফেরত দেওয়ার কথাও বলেছেন। গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র ওই টাকা ফিরিয়ে না দিলে ব্যাঙ্ক কি টাকা ফিরিয়ে দেবে? ব্যাঙ্কের ওই কর্তা বলেন, “পুলিশের তদন্ত চলছে। এ নিয়ে এখনই মন্তব্য করা যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy