Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বেতন মেলেনি ৯ মাস, ক্ষুব্ধ জেসপের শ্রমিকেরা

দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের অগস্ট মাসে খুলেছে দমদমের জেসপ কারখানা। উৎপাদন শুরু না হলেও সাফসুতরোর কাজ হচ্ছে সেখানে। কিন্তু দুর্গাপুরের জেসপ কারখানা এখনও অন্ধকারে। কারখানায় নিযুক্ত ঠিকাকর্মীদের অভিযোগ, গত ন’মাস মেলেনি বেতন। রাতের আঁধারে কারখানা থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে দামী যন্ত্রাংশ। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে মহকুমা শাসককে স্মারকলিপি দিয়েছে কারখানার দেখভালের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সংস্থা।

জেসপ কারখানা।—ফাইল চিত্র।

জেসপ কারখানা।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৬
Share: Save:

দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের অগস্ট মাসে খুলেছে দমদমের জেসপ কারখানা। উৎপাদন শুরু না হলেও সাফসুতরোর কাজ হচ্ছে সেখানে। কিন্তু দুর্গাপুরের জেসপ কারখানা এখনও অন্ধকারে। কারখানায় নিযুক্ত ঠিকাকর্মীদের অভিযোগ, গত ন’মাস মেলেনি বেতন। রাতের আঁধারে কারখানা থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে দামী যন্ত্রাংশ। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে মহকুমা শাসককে স্মারকলিপি দিয়েছে কারখানার দেখভালের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সংস্থা। মহকুমা প্রশাসন জানিয়েছে, কারখানা কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বার বার চেষ্টা করেও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫৮ সালে দুর্গাপুরে গড়ে উঠেছিল এই জেসপ কারখানা। তৈরি করা হত ফাউন্ড্রি, ক্রেন, রেলের কামরা, রোলার। তখন কর্মী সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে চার হাজার। ১৯৭১ সালে কারখানাটি অধিগ্রহণ করে কেন্দ্রীয় সরকারের ভারী শিল্প মন্ত্রক। কিন্তু নানা কারণে নয়ের দশকের গোড়া থেকেই রুগ্ন হতে শুরু করে সংস্থাটি। ১৯৯৯ সালে পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। ২০০৩ সালে কারখানা চালুর আশ্বাস দিয়ে ১৮ কোটি টাকার বিনিময়ে কারখানার ১১৭ একর জমি কিনে নেয় রুইয়া গোষ্ঠী। তখন বলা হয়েছিল, রেলের যন্ত্রাংশ তৈরি করা হবে এখানে। কিন্তু সেই উৎপাদন এখনও চালু হয়নি। ২০০৮ সালে রুইয়া গোষ্ঠী ওই জমির একাংশের চরিত্র বদল করে আবাসন প্রকল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক গড়ার প্রস্তাব দেয় আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) কাছে। কিন্তু এডিডিএ জানিয়ে দেয়, শিল্পের জমিতে শিল্পই গড়তে হবে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে কারখানার বিদ্যুৎ ও জলের বিল বকেয়া ছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষ সেগুলি মেটানোর উদ্যোগ নেননি। শেষ পর্যন্ত কারখানার বিদ্যুৎ ও জলের সংযোগ ছিন্ন করে দেয় ডিপিএল। বর্তমানে একটি ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা কারখানার নিরাপত্তা, জঙ্গল সাফাই-সহ বেশ কিছু কাজ করে থাকেন। ওই ঠিকাদার সংস্থার অভিযোগ, ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তাদের কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছরের জুন মাসে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের বেতন পেয়েছিলেন কর্মীরা। কিন্তু তার পর আর বেতন মেলেনি। ঠিকাকর্মীদের অভিযোগ, কারখানা কর্তৃপক্ষ দুর্গাপুজোর আগে বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা হয়নি। ঠিকাদার সংস্থার কর্মী মানস কুমার রায়ের অভিযোগ, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ঠিকা কর্মীদের বেতন বকেয়া রয়েছে। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ায় ঠিকা কর্মীদের পরিবারগুলি আর্থিক দুরাবস্থায় ভুগছে। অথচ কারখানা কর্তৃপক্ষ দিনের পর দিন লরি নিয়ে এসে কারখানায় যন্ত্রাংশ সরিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে মহকুমা শাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।”

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্তৃপক্ষ কীভাবে বন্ধ কারখানা থেকে যন্ত্রাংশ সরিয়ে ফেলছেন সে ব্যাপারে স্থানীয় কোক-ওভেন থানাকে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষকেও দ্রুত মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মহকুমা শাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

no wages agitation jessope workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE