হিমসিম। নিজস্ব চিত্র।
দফতরের কর্তা তিনি। কিন্তু তাতে কী! কার্যত দফতরের জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই করতে হয় তাঁকে। তিনি কাটোয়া মহকুমার ভারপ্রাপ্ত সহকারী স্কুল পরিদর্শক (উচ্চমাধ্যমিক) বিপদভঞ্জন মণ্ডল।
বিপদভঞ্জনবাবু আদতে মঙ্গলকোট ব্লকের প্রাথমিক স্কুলগুলির মিড-ডে মিলের পরিদর্শক। তবে গত বছর পুজোর পরে কাটোয়া মহকুমার সহকারী স্কুল পরিদর্শক (উচ্চ মাধ্যমিক) গোলাম মর্তুজা অবসর নেওয়ায় তার জায়গায় বিপদবাবুকে দায়িত্ব দেয় স্কুল শিক্ষা দফতর। বিপদবাবু দায়িত্ব নেওয়ার পরেই এক এক করে অবসর নেন দফতরের কর্মীরা। এ বছরের গোড়াতে কর্মীসংখ্যা এসে ঠেকে এক জনে। জয়দেব মণ্ডল নামে ওই কর্মী আবার স্কুল পরিদর্শক দফতরের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। কিন্তু দফতরের যা হাল তাতে মাঝেমধ্যে কাগজ-কলম নিয়ে বসতে হয় তাঁকেও। ফলে পড়াশোনার মান বজায় রাখা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরায় নজর রাখতে মাঝেমধ্যেই স্কুল পরিদর্শন করা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পেনশনের বিল থেকে কর্মরত শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নিধি প্রকল্পের (পিএফ) ঋণের জন্য প্রয়োজনীয় নথি সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো, মিড-ডে মিল ঠিক মতো চলছে কি না দেখা, স্কুলছুট সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ রাখা, মহকুমা কিংবা জেলায় শিক্ষা সংক্রান্ত বৈঠকে নিয়মিত যোগ দেওয়া ইত্যাদি পাহাড়প্রমাণ কাজের চাপে স্কুল পরিদর্শনের কাজটাই ফাঁক পড়ে যাচ্ছে মনে করছেন শিক্ষক সংগঠনের নেতারা।
কাটোয়া শহরের থানার কাছে বিজলী গ্রিল মোড়ে নিজের দফতরে বসে শিক্ষকদের পিএফ সংক্রান্ত নথি দেখতে দেখতে ভারপ্রাপ্ত এ আই (উচ্চ মাধ্যমিক) বিপদভঞ্জন মণ্ডলও চশমার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে বলেন, “আমার মূল কাজ স্কুল পরিদর্শন বাদ দিয়ে সব কাজই টুকটাক করে পার করে দিচ্ছি।”
কাটোয়া মহকুমার ১২টি মাদ্রাসা ও ১২৩ টি উচ্চবিদ্যালয়ের পরিদর্শক (এ আই) বিপদবাবু। তাঁর দফতরে তিন অবর পরিদর্শক (এস আই) ও চার কর্মী থাকার কথা। কর্মী তো দূরের কথা, একজন এস আইও কাটোয়া মহকুমা স্কুল পরিদর্শক দফতরে নেই। ওই দফতরের একমাত্র কর্মী জয়দেব মণ্ডল বলেন, “আমি ছুটি নিলে বা কোনও কারণে দফতরে আসতে দেরি হলে স্যারই দফতরের তালা খোলেন। আবার স্যারই দফতরের তালা লাগিয়ে বাড়ির পথ ধরেন।” অগ্রদ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুদীপ্ত বাড়ুই বলেন, “আমাদের এআই স্যার একা হাতে দফতর সামলাচ্ছেন। এ ভাবে তো একটা দফতর চলতে পারে না।” শিক্ষকদেরও অভিযোগ, পিএফের ঋণের অনুমতি পেতে তাঁদের সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (ডি আই) দফতর সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, কাটোয়াতে দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চলছে। অন্য মহকুমা থেকে কর্মী দিয়ে সমাধান করা যায় কি না তার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।
দফতরের ভিতর থেকে লাল রঙের ছোট সাইকেলটি নিয়ে রাস্তায় নামতে নামতে বিপদবাবু বলেন, “একার পক্ষে যতটা সম্ভব করছি। এমনকী বাড়ি ভাড়ার টাকাটাও প্রতি মাসের এক তারিখে পকেট থেকে মেটাতে হয়। এই দফতর সামলাতে গিয়ে আমি তো মঙ্গলকোটে মিড-ডে মিল কেমন চলছে খেয়ালই রাখতে পারছি না।” এই সাইকেল নিয়েই তিনি কখনও এসডিও (কাটোয়া) দফতর, কখনও বা সময় বের করে ঢুঁ মারছেন স্কুলের ভিতরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy