Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

এক টানেলের ফাঁসে আটকে রেল শহর

এক দিকে খনির কয়লা। অন্য দিকে নানা শিল্প সংস্থার উৎপাদিত সামগ্রী। সে সব পরিবহণের জন্য রেলপথ পাতা হয়েছিল রানিগঞ্জ পর্যন্ত। কিন্তু তার পরেও দরকার ছিল একটি রেল ইয়ার্ডে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আসানসোল-দুর্গাপুর খনি অঞ্চলে গড়ে ওঠে সেই ইয়ার্ড। আর তাকে ঘিরেই তৈরি হল অন্ডাল জনপদ। ২ নম্বর জাতীয় সড়কে অন্ডাল মোড় থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে দীর্ঘনালা গ্রাম। গা ঘেঁষে সিঙ্গারন নদী। তার পাড়েই অন্ডাল রেল শহর।

দেশের অন্যতম বড় রেল ইয়ার্ড শহর অন্ডালে।

দেশের অন্যতম বড় রেল ইয়ার্ড শহর অন্ডালে।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
অন্ডাল শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১৩
Share: Save:

এক দিকে খনির কয়লা। অন্য দিকে নানা শিল্প সংস্থার উৎপাদিত সামগ্রী। সে সব পরিবহণের জন্য রেলপথ পাতা হয়েছিল রানিগঞ্জ পর্যন্ত। কিন্তু তার পরেও দরকার ছিল একটি রেল ইয়ার্ডে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আসানসোল-দুর্গাপুর খনি অঞ্চলে গড়ে ওঠে সেই ইয়ার্ড। আর তাকে ঘিরেই তৈরি হল অন্ডাল জনপদ।

২ নম্বর জাতীয় সড়কে অন্ডাল মোড় থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে দীর্ঘনালা গ্রাম। গা ঘেঁষে সিঙ্গারন নদী। তার পাড়েই অন্ডাল রেল শহর। দেশে অন্যতম বড় রেল ইয়ার্ডকে ঘিরে তৈরি এই জনপদ সময়ের সঙ্গে বিস্তৃতি লাভ করেছে। রাজ্যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে রামপ্রসাদপুর, অন্ডাল, শ্রীরামপুর ও মদনপুর রেল শহর গেল এই চার পঞ্চায়েতের অধীনে।

এই খনি অঞ্চলে প্রথম কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছিল রানিগঞ্জে। কয়লা পরিবহণের জন্য হাওড়া থেকে রানিগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইন পাতা হয়। সেই সময়ে পান্ডুয়া থেকে অন্ডাল পর্যন্ত নীল চাষেরও রমরমা ছিল। সে দিক থেকেও অন্ডাল রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মাত্র আট কিলোমিটার দূরে রানিগঞ্জে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধা গোড়া থেকে পাচ্ছিলেন অন্ডালের বাসিন্দারা। স্বাধীনতার পরে এখানেই চালু হল ইয়ার্ড।

রেল সূত্রে জানা যায়, এই জনপদে রেল ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য চিহ্ণিত করে সরকার। কারণ, তখন বাষ্পচালিত ইঞ্জিন চলত। কয়লা ছিল একমাত্র কাঁচামাল। সেই কাঁচামাল এখান থেকে সারা ডিভিশনে সহজে সরবরাহ করা সম্ভব ছিল। প্রথমে অন্ডালের ১৩ নম্বর রেল কলোনিতে এই স্টেশনের অফিস ছিল। ১৯৫৬ সালে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট তৈরির আগে এখানে ইয়ার্ড নির্মাণের সময়ে এই অফিস স্থানান্তর হয়ে স্টেশনের কাছে চলে আসে। প্রথমে লোকো শেড তৈরি হয়। বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের ব্যবহার কমে ডিজেল চালিত ইঞ্জিন চালু হয়। ১৯৮১ সালে ডিজেল শেড চালু হয়। বাষ্পচালিত ইঞ্জিন তুলে দেওয়া হয় ১৯৮৬ সালে। তখন লোকো শেডও তুলে দেওয়া হয়।

যাতায়াতে সবচেয়ে বড় সমস্যা এই রেল টানেল। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

নানা খনির কয়লা ছাড়াও দুর্গাপুরের ইস্পাত নানা জায়গায় পৌঁছে যায় এই স্টেশন ইয়ার্ড থেকেই। চাহিদা মেটাতে একের পর এক ইয়ার্ড ও রক্ষণাবেক্ষন কেন্দ্র চালু হয়। সিগন্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউন, ইঞ্জিন, ওয়াগনের রক্ষণাবেক্ষণ হয়। রয়েছে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে ওয়াগান জোড়া লাগিয়ে রেক তৈরির আধুনিক ইয়ার্ডও। খালি ইয়ার্ড থেকে বিভিন্ন কোলিয়ারি ও কারখানার প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ রেক পাঠানো হয়। পূর্ব দিকের শেষ প্রান্ত ওয়ারিয়ার কাছে রয়েছে ‘ওয়েস্ট ডাউন ডিপারচার’, যেখানে মাল বোঝাই ওয়াগন মেরামতি হয়। অন্ডালের ওয়ার্কশপ ১৯৮৬ সালে লিলুয়া ওয়ার্কশপের সঙ্গে একত্র করা হয়। তার পরে অন্ডালে ওয়ার্কশপের জায়গায নির্মিত হয় বক্স অ্যান্ড ডিপো। এখানে এয়ারবেস সিস্টেমে যে ওয়াগন চলে তা আধুনিক উপায়ে রক্ষণাবেক্ষণ হয়। এই বিরাট কর্মযজ্ঞ চালানোর জন্য অন্ডালে রেল শহর গড়ে ওঠে।

প্রায় সাড়ে চার হাজার রেলকর্মী আবাসনের এই জনপদে এখন নানা সমস্যা। সবচেয়ে বড় সমস্যা জাতীয় সড়ক বা স্টেশন থেকে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম রেল টানেলটি। সারা বছর জলে ভরে থাকে এই টানেল। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টেশন তৈরির সময়ে এলাকার নিষ্কাশিত জল বের করার জন্য এই টানেল তৈরা করা হয়েছিল। পরে পরে যে এত বড় জনপদ গড়ে উঠবে, তা হয়তো তৎকালীন রেল কর্তৃপক্ষের ধারণার মধ্যে ছিল না। বর্তমানে সেই টানেল হয়ে উঠেছে শহরের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। শুধু টানেল নিয়ে সমস্যা নয়, পরিষেবা নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই অন্ডালে।

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

rail yard andal nilatpal roychowdhury amar shohor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE