প্রিন্সেপ ঘাটে প্রেসিডেন্সির ২০০ বছর পূর্তি উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু শুক্রবার সেই অনুষ্ঠানে এলেনই না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন এলেন না, তা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই উঠে আসছে নানা বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের কথা।
কীসের ক্ষোভ?
মমতা নিজের মুখে তা জানাননি। তবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ আমন্ত্রণপত্রে তাঁর নাম ছেপে দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী খুব ক্ষুণ্ণ। পার্থবাবু শুক্রবার রাতে বলেন, ‘‘আমি তিন চার দিন আগেই প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, মুখ্যমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর নাম রেখেই আমন্ত্রণপত্র বিলি করা হয়েছে।’’ কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী নিজে তো এ দিনের অনুষ্ঠানমঞ্চে ছিলেন। তা সত্ত্বেও সেখানে তিনি এ কথা বললেন না কেন?
পার্থবাবুর জবাব, ‘‘আমি ওখানে এ-সব কথা বললে ছাত্রসমাজ হয়তো ভুল বুঝত। তারা হয়তো বলত, আমরা মঞ্চকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করতে চাইছি। তাই...।’’
অনুষ্ঠানমঞ্চে শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের কোনও ইঙ্গিতই দেননি। বক্তৃতার প্রথমেই তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই প্রেসিডেন্সিকে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। অত্যন্ত জরুরি কাজে আটকে পড়ায় তিনি আসতে পারেননি। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি এবং উৎকর্ষের লক্ষ্যে তিনি পাশে থাকবেন।’’
অক্টোবরে প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, অন্য সব অনুষ্ঠান ক্যাম্পাসে হলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হবে প্রিন্সেপ ঘাটে। এ দিন সেই অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়াও জানিয়ে দেন, জরুরি কাজে আটকে যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী আসতে পারেননি।
তবে শিক্ষা শিবিরের একাংশের পর্যবেক্ষণ, মুখ্যমন্ত্রী যে এ দিনের অনুষ্ঠানে গেলেন না, তার পিছনে কিছু বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘খারাপ লাগা’ কাজ করেছে। যেমন, কর্তৃপক্ষ বাকি সব অনুষ্ঠানের আয়োজন ক্যাম্পাসে করে এই অনুষ্ঠান প্রিন্সেপ ঘাটে করায় তাঁর খারাপ লেগেছে। গত বছর প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পাসে গিয়ে ছাত্র-বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বারের উৎসব উপলক্ষে প্রেসিডেন্সির মূল ভবনে বিশিষ্ট প্রাক্তনীদের নাম খোদাই করা হয়েছে। সেখানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং জ্যোতি বসুর নামের নীচে রয়েছে সুভাষচন্দ্র বসুর নাম। এই তথ্য জেনেও খুবই খারাপ লেগেছে মুখ্যমন্ত্রীর।
প্রেসিডেন্সি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী যে এ দিনের অনুষ্ঠানে আসছেন না, গত বৃহস্পতিবারেই মৌখিক ভাবে কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে আসছেন না, তা লিখিত ভাবে এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে।’’ এই অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল তথা প্রেসিডেন্সির আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। রেজিস্ট্রারের ব্যাখ্যা, এই অনুষ্ঠানের বিষয়টি অন্য ভাবে ভাবা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী আসবেন না জেনে এ দিন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চার পড়ুয়াকে দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করানো হবে। সেই অনুসারে প্রিন্সেপ ঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বদলে প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার পড়ুয়াই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy