শুভেন্দু বা সুকান্ত যখন রাজ্যের দুর্নীতি প্রসঙ্গে বেশি সরব হলেন, শাহ তখন সরাসরি হিন্দুদের পথে হাঁটার কথাই বুঝিয়ে দিলেন। — ফাইল চিত্র।
অমিত শাহ প্রায় এক বছর পরে রাজ্যে কোনও রাজনৈতিক সভা করলেন। বীরভূমের সিউড়ির সেই সভায় যে তিনি হিন্দুত্বের পথে হাঁটার পথ দেখাবেন তেমন সম্ভাবনার কথা আগেই জানিয়েছিল আনন্দবাজার। ঠিক সেই পথেই হাঁটলেন অমিত। তাঁর বক্তৃতায় বার বার উঠে এল সেই লক্ষ্যের কথা। তিনি বললেন, ‘‘রামনবমীর মিছিল করার স্বাধীনতা একমাত্র বিজেপিই দিতে পারে।’’
সিউড়ির মঞ্চে শাহের বাঁ দিকে ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং ডান দিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। রাজ্যে সম্প্রতি রামনবমীর মিছিল ঘিরে যে ক’টি অনভিপ্রেত ঘটনা দেখা গিয়েছে সেগুলি নিয়ে দু’জনেই সরব হয়েছিলেন। শাহের আগে শুভেন্দু ও সুকান্তের বক্তৃতায় ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি থাকলেও তাতে মূলত ছিল তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি নিয়ে কথা। শুভেন্দু শুক্রবার শাহের সামনেও ‘নো ভোট টু মমতা’ স্লোগান তুলেছেন। তবে সম্প্রতি তাঁর সব সভায় দেখতে পাওয়া ‘নো ভোট টু মমতা’ লেখা জার্সি দেখা যায়নি। শুভেন্দু বা সুকান্ত যখন রাজ্যের দুর্নীতি প্রসঙ্গে বেশি সরব হলেন, শাহ তখন সরাসরি হিন্দুদের পথে হাঁটার কথাই বুঝিয়ে দিলেন।
সাধারণ ভাবে বিজেপি নেতারা বক্তৃতা শুরু করার আগে উপস্থিত মানুষকে ‘গৈরিক অভিনন্দন’ জানিয়ে থাকেন। ‘ভারতমাতা কি জয়’ ধ্বনি দেন। শাহ এ দিন কিছুটা অন্য পথে হাঁটলেন। বক্তৃতা শুরুর সম্বোধনে বলেন, ‘‘সকলকে আমার তরফে জয় শ্রীরাম।’’
এটা শুরু। এর পরে টেনে আনলেন বাংলায় রামনবমী ঘিরে অশান্তির কথা। উল্লেখ করলেন হাওড়া এবং রিষড়ার নাম। তার পরেই সমাবেশের দিকে তাকিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে প্রশ্ন তুলে দিলেন, ‘‘বাংলায় রামনবমীর মিছিল করার স্বাধীনতা থাকা উচিত, না উচিত নয়?’’ উত্তরের অপেক্ষা না করেই বললেন, ‘‘বিজেপি ক্ষমতায় এলেই মিলবে সেই স্বাধীনতা।’’ একই সঙ্গে তৃণমূল সরকারে বিরুদ্ধে তোষণের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। রাজ্যে অনুপ্রবেশে মদতের অভিযোগ তুলেছেন। তারও সমাধান যে বিজেপি, সে কথা জানিয়ে শাহ বলেন, ‘‘অসমে আজ অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গরু পাচার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’
টেনে এনেছেন অযোধ্যা প্রসঙ্গও। জানিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি অযোধ্যায় রামমন্দির হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রেও তিনি জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছোড়েন, ‘‘অযোধ্যায় রামমন্দির বানানো উচিত, না কি উচিত নয়?’’ এর পরেই বলেন, ‘‘অনেক রাজনীতি হয়েছে। কিন্তু এক দিন সকালে নরেন্দ্র মোদীজি ভূমিপূজন করে দিয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি আকাশচুম্বী মন্দির তৈরি হয়ে যাবে।’’ প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগেই অযোধ্যায় রামজন্মভূমি মন্দির তৈরির লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
শাহ শুক্রবার এ রাজ্য থেকে কমপক্ষে ৩৫টি আসন পাওয়ার লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপিকে। এমন লক্ষ্য আগেই নিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, তার জন্য যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে সংখ্যালঘু ভোট অধ্যুষিত আসনগুলি বাদ রাখা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট বিজেপি যে পাবে না, সেটা ধরে নিয়েই বাংলায় প্রস্তুতি বিজেপির। সেই সঙ্গে গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে জনজাতি ভোটের বড় অংশ বিজেপির ঝুলিতে আসায় তার উপরে আরও বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। শাহ শুক্রবার সেই সম্প্রদায়কে বার্তা দিতে দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি বানানোর কথাও বলেছেন বীরভূমে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy