ধৃত সাহাবুদ্দিন। নিজস্ব চিত্র
রামের কাজটা করার পরে ছোটখাটো কয়েকটা কাজ ছিল। তার পরে বড় কাজ বলতে তো গৌতমই।
পুলিশের খাতায় সে এই মুহূর্তে রাজ্যের অন্যতম শার্প শুটার এবং সম্প্রতি আমডাঙায় পরপর খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। সেই সাহাবুদ্দিন ওরফে সাবু গ্রেফতার হওয়ার পরে বুধবার জেরায় এমনটাই জানিয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কাজ মানে মার্ডার। রামের কাজ মানে রামকে খুন আর গৌতমের কাজ মানে মধ্যমগ্রামে সেলুনের মধ্যে সকলের সামনে পরপর গুলি চালিয়ে গৌতম দে সরকার ওরফে ঢাকাই গৌতমকে খুন করা।’’
ছ’ফুট লম্বা, ফর্সা চেহারার মুখে হাল্কা দাড়ি। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘ধরা পড়ে বিষ দাঁত ভেঙে যাওয়ার পরেও সাপের এই তেজ। এই লোকটাই পিস্তল হাতে যখন কাউকে হুমকি দেয়, খুন করে, তাঁর অবস্থাটা সহজেই অনুমেয়।’’
আক্ষরিক অর্থেই সাপের সঙ্গে এত দিন ঘর করে ধরা পড়েছে সাহাবুদ্দিন। পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোটের বোর্ড গড়া নিয়ে আমডাঙায় পাঁচ জন খুন হওয়ার পরে টানা এক মাস স্থানীয় বর্তি বিলে গা-ঢাকা দিয়েছিল সে। ওই বিলে মাছ ধরাই হোক বা চাষবাস, কেউটের কামড়ে এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে যে স্থানীয়দের মুখে সেটির নামই হয়ে গিয়েছে কেউটে বিল।
আরও পড়ুন: জয়ের পরে খোঁজ ডাঁটো মোরগের, জেলায় ‘ফিস্টি’ কংগ্রেসের
সেই বিলে এত দিন কী ভাবে ছিল সাহাবুদ্দিন? পুলিশকর্তার জেরায় তার জবাব, ‘‘ভাল মাছ ধরতে পারি। সাপেরা তেমন কিছু করত না। কিছু কিছু সাপ কামড়েছে বটে, তবে অসুবিধা তেমন হয়নি।’’ আমডাঙার ঘটনার পরে সাহাবুদ্দিনকে ধরতে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স, পুলিশ একযোগে বিল ঘিরে তল্লাশি চালিয়েছিল। পুলিশের গুলির পাল্টা হিসেবে গুলি-বোমার প্রত্যুত্তর দিয়েছিল সাহাবুদ্দিনও। তার পরে বারবার হানা দিয়েও তাকে গ্রেফতার করা যায়নি।
পুলিশের দাবি, জেরায় সাহাবুদ্দিন জানিয়েছে, সে পাটকাঠি মুখে গুঁজে কখনও থাকত বিলের গভীর জলের নীচে। কখনও ওই বিশাল বিলের আলে (ডাঙায়) উঠে ঘুমতো। বিলের কলা, ফল, আনাজ খেয়েই চলে যেত পেট। এর মধ্যেই এক দিন এলাকায় ঢুকে একটি স্টোভ, কেরোসিন আর এক বস্তা চাল নিয়ে এসেছিল সে। মাঝেমধ্যে সেই স্টোভে চলত রান্নাবান্না।
জেরায় পুলিশের প্রশ্ন ছিল, আমডাঙায় খুনোখুনির পরেও এলাকায় ঢুকে চাল-ডাল কিনতে গিয়ে মরে যাওয়ার ভয় ছিল না? পুলিশের দাবি, সাহাবুদ্দিন জানিয়েছে, দেখার পরেও তাকে মারবে বা খুন করবে, এমন ভাবার সাহসটুকুও কারও ছিল না। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কথায়, ‘‘সাহাবুদ্দিনের এতটাই গুন্ডা ‘ইমেজ’ ছিল যে তাকে দেখেই ভয়ে সিঁটিয়ে যেতেন এলাকার মানুষ।’’
আরও পড়ুন: সোমেন-অধীর ঐক্যের ছবি, কানায় কানায় জমায়েত, মমতাকে তীব্র কটাক্ষ কংগ্রেসের
বুকে ঠেকিয়ে গুলি করা পছন্দ ছিল না সাহাবুদ্দিনের। বরং দূর থেকে ‘টার্গেটে’ গুলি করায় তার জুড়ি মেলা ছিল ভার। একের পর এক খুনের ঘটনায় পুলিশের খাতায় তাই শার্প শুটার হিসেবে উঠে এসেছিল সাহাবুদ্দিনের নাম।
পুলিশ জানিয়েছে, মধ্যমগ্রামে ঢাকাই গৌতমকে খুনের চেষ্টা হয়েছিল দু’বার। কিন্তু প্রতি বারই নিজেকে বাঁচিয়ে নেয় গৌতম। পুলিশ সূত্রের খবর, সে জন্য চলতি বছরের গোড়ায় শেষ বার ‘টার্গেট’ গৌতমকে খুনের জন্য বরাত দেওয়া হয় সাহাবুদ্দিনকে। এর জন্য তাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল বলেও জেরায় জানিয়েছে সাহাবুদ্দিন।
মাছ ধরা এবং অন্যান্য কাজ করতে পারায় এক বার ধরা পড়ার পরে সাহাবুদ্দিনকে ভালো কাজের প্রস্তাব দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু তাদের দাবি, জেরায় সাহাবুদ্দিন জানিয়েছে, ওই সব কাজে ঝামেলা বেশি। তার চেয়ে তার মনপসন্দ কাজটাই সে করতে চায়। আর সেই কাজ বলতে, মানুষ খুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy