নব মহাকরণ ভবনে ডিএ আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশের আন্দোলন অব্যাহত। সেই আবহে ‘কর্মসংস্কৃতি’ ফেরাতে সরকারি কর্মীদের জন্য নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নবান্ন। টিফিন বিরতির সময়েও অফিসের বাইরে পা রাখা যাবে না। অফিসের বাইরে যেতে হলে অনুমতি নিতে হবে। অন্যথা হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। রাজ্য সরকারের এমন বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদেই সরব হয়েছেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার কলকাতায় নব মহাকরণ ভবন, খাদ্য ভবন, পঞ্চায়েত দফতরে টিফিনের সময় প্রতিবাদ প্রদর্শন করেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। বুধবার তাঁরা সল্টলেকের করুণাময়ীতেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে বকেয়া ডিএ-র দাবিতে ধর্মতলায় শহিদ মিনারের নীচে অবস্থান করছেন আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে কখনও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ প্রদর্শন করেছেন, আবার কখনও কর্মবিরতির পথে হেঁটেছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। এ বার রাজ্যের বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদে সরব হলেন তাঁরা।
গত শনিবার রাজ্যের অর্থসচিব মনোজ পন্থ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়েই দফতরে আসতে হবে সরকারি কর্মচারীদের। নির্দিষ্ট সময়ের আগে দফতর থেকে বেরোতে পারবেন না তাঁরা। দুপুর দেড়টা থেকে ২টো পর্যন্ত, টিফিনের ওই সময়েও বেরোনো যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে অফিস থেকে বেরোতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে বলেও জানানো হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। নিয়মের অন্যথা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এমনকি নির্দিষ্ট দিনের জন্য সেই কর্মচারীকে ‘অনুপস্থিত’ হিসাবে দেখানো হবে বলেও জানানো হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। সরকারি এই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবি, সরকার সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এর প্রতিবাদে তাঁরা টিফিন বিরতিতে বিক্ষোভ দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোমবার থেকেই এই প্রতিবাদ শুরু করেছেন ডিএ আন্দোলনকারীরা।
কোথায় কোথায় বিক্ষোভ
রাজ্য সরকারের এই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বকেয়া ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনরত সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। সোমবার কলকাতা পুরসভা, মহাকরণে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। মঙ্গলবার কলকাতায় নব মহাকরণ ভবন, খাদ্য ভবন, পঞ্চায়েত দফতরে টিফিনের সময় প্রতিবাদ প্রদর্শন করেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে এ কথা জানিয়েছেন ভাস্কর ঘোষ। বুধবার সল্টলেকের করুণাময়ীতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন তাঁরা। বকেয়া ডিএ-র দাবি এবং সরকারি বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদে তাঁদের এই বিক্ষোভ ধারাবাহিক ভাবে রাজ্যে চলবে বলে জানিয়েছেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সদস্য সঞ্জীব ঘোষ। সোমবার থেকে তাঁরা কোনও কর্মবিরতি করছেন না বলেও জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। কোঅর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী জানিয়েছেন, সরকার যে ভাবে অফিসে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, তার প্রতিবাদে তাঁরা টিফিন বিরতিতে বিক্ষোভ দেখাবেন। স্বচ্ছ নিয়োগ এবং বকেয়া ডিএ-র দাবিতে মঙ্গলবার বিকাশ ভবন অভিযান করেন রাজ্য বিজেপির শিক্ষক সংগঠনের সদস্যেরা।
কী রয়েছে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে
শনিবার রাজ্যের অর্থসচিব মনোজ পন্থের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়েই দফতরে আসতে হবে সরকারি কর্মীদের। আবার নির্দিষ্ট সময়েই দফতর থেকে বেরোতে পারবেন না তাঁরা। দুপুর দেড়টা থেকে ২টো পর্যন্ত, টিফিনের সময়ও বেরোনো যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে অফিস থেকে বেরোতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে বলে জানানো হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। শনিবার আরও একটি বি়জ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনীয় অনুমতি না নিয়ে কর্মবিরতিতে যোগ দিলে সংশ্লিষ্ট কর্মীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে এ-ও জানানো হয়েছে যে, সোমবার থেকেই বকেয়া ডিএ-র দাবিতে কর্মবিরতির পথে হাঁটছেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। সোমবার থেকে চারটি নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া ছুটি নিতে পারবেন না সরকারি এবং সরকার পোষিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। কোনও কর্মী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে, পরিবারে নিকটাত্মীয় কেউ মারা গেলে কিংবা কেউ মাতৃত্বকালীন এবং অসুস্থতাজনিত ছুটিতে থাকলে, তাঁদের ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না।
কোন পথে ডিএ আন্দোলন
বকেয়া ডি-র দাবিতে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ধর্মতলায় শহিদ মিনারের নীচে অবস্থান করছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। চলতি মাসের শুরুতেই সেই আন্দোলন ১০০ দিন পার করেছে। অবস্থানের পাশাপাশি ৪৪ দিন ধরে অনশনও করেছিলেন তাঁরা। পাশাপাশি, ডিএ-র দাবিতে ধর্মঘট করেছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। তাঁরা কর্মবিরতিও পালন করেছেন। একই সঙ্গে ‘ডিজিটাল অসহযোগিতা’র পথেও হেঁটেছেন আন্দোলনকারীরা। গত ৬ মে দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড়ে মিছিল করেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। ওই মিছিল যায় হরিশ মুখার্জি রোড ধরে। যেখানে রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশের পাড়া। ওই রাস্তা ধরে মিছিল করে হাজরা মোড়ে সভা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। ওই সভায় যোগ দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, কংগ্রেসের কৌস্তুভ বাগচীরা।
ডিএ নিয়ে আইনি লড়াই
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সমান হারে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের ডিএ দেওয়ার দাবি দীর্ঘ দিনের। এই নিয়ে মামলা-মকদ্দমাও হয়েছে। ‘ডিএ সরকারি কর্মীদের অধিকার’ বলে জানিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। পরে এই মামলা গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। আগামী ১৪ জুলাই শীর্ষ আদালতে ডিএ মামলার শুনানি। ২০২২ সালের মে মাসে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ৩১ শতাংশ হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য। রাজ্যের যুক্তি, হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত মেনে ডিএ দিতে হলে প্রায় ৪১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। যা রাজ্য সরকারের পক্ষে এই মুহূর্তে বহন করা কঠিন। কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের কর্মীদের ডিএ-র ফারাক ৩৬ শতাংশ।
মুখ্যমন্ত্রীর ডিএ মন্তব্য
ডিএ আন্দোলনের আবহে বেশ কয়েক বার নানা মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, ‘‘আমরা তো ম্যাজিশিয়ান নই। টাকাটাও জোগাড় করতে হবে। অনেকে বলে, এটা পেলাম, ওটা দাও, এটা পেলাম, ওটা দাও। আরে যেটা পেলে সেটাকে ধরে রাখতে গেলে যে টাকার প্রয়োজন সেটা কোথা থেকে জোগাড় হবে? কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না। বঞ্চনা করছে আর মিথ্যা কথা বলছে।’’ আবার কখনও বলেছিলেন, ‘‘টাকা আকাশ থেকে পড়বে না।’’ আবার এ-ও বলেছিলেন, ‘‘আমি যদি ভালবেসে দিই, নিশ্চয়ই দেব।’’ কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি খুঁজে নিন না, তা হলে আরও বেশি বেতন পাবেন, আরও বেশি ডিএ পাবেন। আমাদের রাজ্য সরকারের চাকরিতে যখন ঢুকেছেন, তখন এখানে যা নিয়মকানুন রয়েছে সেই মতো করছি।’’ চলতি বছরের রাজ্য বাজেট পেশের দিনেই ৩ শতাংশ হারে ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করে সরকার। মার্চ মাসের বেতন থেকে তা দেওয়াও শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy