সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এক
ধাক্কায় চাকরি গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৫ জনের। শুক্রবার থেকে আর তাঁরা স্কুলে যেতে
পারছেন না। পরবর্তী পদক্ষেপ কী? ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছেন? জেলায় জেলায় বৈঠকে বসেছেন
চাকরিহারারা। তাঁদের সংগঠন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’ আগামী ৭ এপ্রিল
নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি এখনও
আলোচনাধীন। নেতাজি ইন্ডোরে তাঁরা আদৌ যাবেন কি না, গেলে
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় তাঁদের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে এখনও কোনও স্থির সিদ্ধান্ত
হয়নি। শুক্রবারের বৈঠক এ বিষয়ে দিশা দেখাতে পারবে, আশাবাদী চাকরিহারাদের একাংশ।
দুর্নীতির অভিযোগে এসএসসি-র ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতা হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তা-ই বহাল রাখা হয়েছে। এই রায়ের পর বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি বঞ্চিতদের পাশে আছেন। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই আবেদনেই সাড়া দিতে আগামী সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে যাবেন, জানান মমতা। তাঁর এই ঘোষণার পর নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে চাকরিহারাদের মধ্যে। অনেকে বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। অনেকে আবার দলগত সিদ্ধান্তের উপর বিষয়টিকে ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আবেদন কে কবে করেছেন, তা-ই জানেন না! যদিও ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর এক জন বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, তাঁদের তরফেই শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকরিহারা বলেন, ‘‘আমাদের জেলাভিত্তিক বৈঠক চলছে। শুক্রবার সারা দিনই বিভিন্ন জেলায় বৈঠক হবে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যাব কি যাব না, গেলে সেখানে আমাদের বক্তব্য কী হবে, এই বৈঠকেই তা ঠিক হচ্ছে। বৈঠকের পর আমাদের সমাজমাধ্যমের পেজে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘বঞ্চিত’ শিক্ষকদের সংগঠনের ডাকে তিনি সোমবার বেলা সওয়া ১২টায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে যাবেন। নবান্ন থেকে মমতা বলেন, ‘‘যাঁরা বঞ্চিত শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেছেন, তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, আমি যাতে তাঁদের কাছে যাই। কথা শুনতে তো কোনও দোষ নেই। আমি তাঁদের কথা শুনতে যাব এবং বলতে যাব, ধৈর্য হারাবেন না। মানসিক চাপ নেবেন না।’’ মমতার এই আশ্বাসকে চাকরিহারাদের একাংশ ‘ইতিবাচক’ হিসাবে দেখছেন না। বৃহস্পতিবারই এক জন বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো আগেই পাশে থাকতে পারতেন। তা হলে তো এখন এই দিনটা দেখতে হত না। রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি। এখন চিতায় ঢোকার উপক্রম হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী পাশে থাকার কথা বলছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাসে কতটা সুরাহা হবে আমি জানি না।’’ আর এক চাকরিহারার কথায়, ‘‘আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে বারংবার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তখন তিনি বিষয়টি দেখেননি। মুখ্যমন্ত্রী আরও আগে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করলে, সরকার আদালতে সঠিক তথ্য দিলে আমাদের এই অবস্থার মধ্যে পড়তে হত না।’’ অনেকে আবার মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ভরসা রাখতে চাইছেন। মমতা কী বলেন, সে দিকেই তাকিয়ে আছেন তাঁরা। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি যদি কিছু করতে পারেন, ভালই হয়। আমরা নেতাজি ইন্ডোরে যেতে চাই এবং ওঁর বক্তব্য শুনতে চাই।’’
‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’ অন্যতম সদস্য মেহবুব মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের জেলাভিত্তিক বৈঠক শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে যাব কি না, গেলে কী আবেদন থাকবে, আমরা জানিয়ে দেব। কেন্দ্র-রাজ্যের সংঘাতে আমাদের বলির পাঁঠা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আমরা হতাশ। দু’জন আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন। আমরা কী করব, সেটা এখনও আলোচনাধীন। বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।’’
সুপ্রিম কোর্টের ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্তের পরেই নবান্নে শিক্ষামন্ত্রীকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মমতা। সেখানে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ-সহ রাজ্য সরকারের আমলা, আইনজীবীরাও ছিলেন। তার পরে সাংবাদিক বৈঠক থেকে নেতাজি ইন্ডোরে যাওয়ার কথা জানান। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী, মুখ্যসচিবও। সমাজের বিভিন্ন অংশের বিশিষ্টেরাও থাকবেন তাঁদের সঙ্গে। সেখান থেকে মমতা কী বার্তা দেন, চাকরিহারারাই বা কী অবস্থান নেন, সে দিকে নজর থাকবে।
- ২০১৬ সালের এসএসসিতে নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট। বলল, পুরো প্রক্রিয়ায় কারচুপি করা হয়েছে। ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।
- এসএসসি-র শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাই কোর্ট এই সংক্রান্ত শুনানির পর ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছিল।
- রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি (আদতে ২৫,৭৫২) বাতিল করে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
-
নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে ‘দাগিদের’ বাদ দেওয়ার রায়কে চ্যালেঞ্জ, ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য এবং এসএসসি
-
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সংশোধন এসএসসির, জেনারেলের মতোই আবেদন করতে হবে ওবিসিদের
-
আদালত অবমাননার আশঙ্কা, তাই নির্দেশ মতো পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি আইনি লড়াই চলবে, বললেন মমতা
-
উত্তরপত্রে কারচুপি থাকলে পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, ‘অযোগ্য’দের আর্জি খারিজ করে জানাল সুপ্রিম কোর্ট
-
থানায় হাজিরা দিতেই হবে দুই চাকরিহারা শিক্ষককে! বিকাশ ভবনের সামনে লোকসংখ্যাও কমাতে হবে, বলল হাই কোর্ট