Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

সন্তান জন্মের পরে অনেকেই বন্ধ করেন আয়রন ট্যাবলেট

মাসখানেক আগে ছেলে হয়েছে বনগাঁর চালকি গ্রামের বাসিন্দা প্রমীলা অধিকারীর। ছেলের জন্মের আগে আয়রন ট্যাবলেট খেয়েছিলেন। কিন্তু ছেলের জন্মের পর থেকে আর সেই ওষুধ খাননি। 

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৮
Share: Save:

মাসখানেক আগে ছেলে হয়েছে বনগাঁর চালকি গ্রামের বাসিন্দা প্রমীলা অধিকারীর। ছেলের জন্মের আগে আয়রন ট্যাবলেট খেয়েছিলেন। কিন্তু ছেলের জন্মের পর থেকে আর সেই ওষুধ খাননি।

সন্তান জন্মানোর পরে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার দরকার নেই বলেই জানেন তিনি। প্রমীলার কথায়, ‘‘সিজারের সেলাই শুকিয়ে গিয়েছে। এখন আর আয়রন ট্যাবলেট খাব কেন? ছেলে হওয়ার আগে আয়রনের তরল ওষুধ কিছু দিন খেয়েছিলাম। প্রচণ্ড গন্ধ, খাওয়া যায় না।’’

ন্যাশনাল হেলথ প্রোফাইল, ২০১৮-র রিপোর্ট জানাচ্ছে, রাজ্যের ৭১.৯ শতাংশ প্রসূতি আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডের ট্যাবলেট পান না। বনগাঁ ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার তিন মাস পর থেকে সন্তান না হওয়া পর্যন্ত ও সন্তান প্রসবের পরে ৬ মাস পর্যন্ত নিয়ম করে রোজ আয়রন ট্যাবলেট এবং ক্যালসিয়াম খাওয়া জরুরি। দিনে দু’টি আয়রন ট্যাবলেট ও একটি ক্যালসিয়াম খাওয়ার কথা।

কিন্তু বনগাঁ ব্লকের প্রসূতি বা সদ্য মা হওয়া মহিলারা বেশির ভাগই এই নিয়ম মেনে চলছেন না। আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া নিয়ে মহিলাদের সমস্যা ঠিক কোথায়? কেউ একমাস কেউ দু’মাস আয়রন ট্যাবলেট খেয়েছেন। আবার অনেকেই সন্তান জন্মানোর পরে একেবারেই আর আয়রন ট্যাবলেট খাননি।

এমনই এক মহিলা বালিয়াডাঙা গ্রামের বাসিন্দা সোনিয়া মণ্ডল। তাঁর ন’মাসের ছেলে। বললেন, ‘‘গর্ভবতী অবস্থায় তিনমাস থেকে ন’মাস পর্যন্ত আয়রন ট্যাবলেট খেয়েছিলাম। পরে আর খাওয়া হয়নি। কেউ বলেনওনি।’’ কেন আয়রন ট্যাবলেট নিয়ে এ হেন অনীহা? চিকিৎসকেরা জানান, অনেকেরই এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তা ছাড়া, আয়রন ট্যাবলেট খেলে কালো পায়খানা হয়, খিদে কমে যায়, ঠিকমতো ঘুম হয় না, তরল আয়রনের বিকট গন্ধের জন্যেও অনেকে এই ওষুধ খান না। মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী ও আশাকর্মীরা অবশ্য নিময় করে প্রসূতিদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার কথা বলেন বলেই মহিলারা জানিয়েছেন।

বাবলি বিশ্বাস নামে এক আশাকর্মীর কথায়, ‘‘প্রসূতিদের আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে আসি, তাঁর ও সন্তানের জন্য আয়রন ট্যাবলেট খাওয়াটা জরুরি। না খেলে স্বাস্থ্যহানি হতে পারে বলে বোঝানো হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বেশির ভাগই প্রসূতি ট্যাবলেট নিয়ে যান।’’

নতিডাঙা মুখ্য উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ইনচার্জ তথা স্বাস্থ্যকর্মী কাকলি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রত্যেক মাকে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার কথা বোঝানো হয়। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। কোনও প্রসূতি হয় তো দূরে বাপের বাড়ি চলে যান। সেখান থেকে সন্তান প্রসব হয়। তখন তাঁরা আর আয়রন ট্যাবলেট খান না। এলাকায় না থাকায় আমরা বোঝাতেও পারি না।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ ব্লকে ৫৫টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সেখান থেকে প্রসূতিদের নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম বিনামূল্যে দেওয়া হয়।

বনগাঁর বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক সাহা রায় বলেন, ‘‘আয়রন ট্যাবলেট খেলে পায়খানা কালো হয়। প্রসূতিরা মনে করেন, কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সে জন্যও অনেকে এই ওষুধ খেতে চান না। অনেকে আবার মনে করেন, সরকারি ওষুধ ভাল নয়। বাইরে থেকে একই ট্যাবলেট অনেকে কিনে খান। আশাকর্মীরা বোঝানোর পরে হয় তো একদিন দু’দিন তাঁরা ট্যাবলেট খান।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Iron Tablet Pregnant Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE