ভিড়ে ঠাসা বাসে গলদঘর্ম যাত্রী। ডায়মন্ড হারবারে তোলা নিজস্ব চিত্র।
২১ জুলাই শহিদ সমাবেশ উপলক্ষে বিভিন্ন রুট থেকে বাস, ট্রেকার-সহ যাত্রিবাহী গাড়ি তুলে নেওয়ায় ভোগান্তির শিকার হলেন নিত্যযাত্রীরা। বিভিন্ন সরকারি অফিসগুলিতেও অন্যদিনের তুলনায় কর্মীদের হাজিরা এ দিন কম দেখা গিয়েছে। সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে বেসরকারি অফিসের কর্মচারী এবং স্কুল পড়ুয়াদের।
স্কুলে যাওয়ার সময়ে এ দিন হাতে সময় নিয়ে বেরিয়েও অনেকে সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছতে পারেনি। বেসরকারি অফিস যাত্রীদের কথায়, ‘‘ঠিক সময়ে অফিস যাব বলে খুব সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাস কম থাকায় বেশি টাকা খরচ করে অনেক ভোগান্তি সহ্য করে আসতে হল।’’ এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের সব ক’টি রুটেরই বাস তুলে নেওয়া হয়েছিল। ফলে ওই রুটে বাস কম চলেছে। তার সঙ্গে অন্যান্য যাত্রিবাহী ছোট গাড়িও এ দিন রাস্তায় কম দেখা গিয়েছে। অফিস টাইমে বিটি রোডে যানজটের সৃষ্টি হয়। এমনিতেই দু’দিকে আবর্জনা পড়ে থাকায় এখানে মানুষকে এই পথে রোজ যানজটে পড়তে হয়। তারমধ্যে বাস কম এবং যানজট— দুইয়ে মিলে অনেকেই সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি। রাস্তায় গাড়ি কম চলায় কলকাতাগামী ট্রেনেও খুব ভিড় দেখা গিয়েছে।
এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিঙের বিভিন্ন রুট থেকে বাস ও ছোট গাড়ি তুলে নেওয়ায় সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা। ক্যানিং মহকুমার ঝড়খালি-বারুইপুর, চুনোখালি-বারুইপুর, গদখালি-বারুইপুর, ক্যানিং-বারুইপুর রুটে প্রতিদিন প্রায় ৬০টি বাস চলাচল করে। এ দিন এই সমাবেশ উপলক্ষে প্রায় ৪০টি বাস তুলে নেওয়া হয়। ক্যানিং থেকে সোনাখালি রুটে নিত্য যাতায়াত করেন বরুণ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে অটোতে করে যেতে হয়েছে।’’ ক্যানিঙের আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি সুশীল সর্দার বলেন, ‘‘সমাবেশ উপলক্ষে কিছু বাস তুলে নেওয়া হলেও যাত্রীদের অসুবিধার কথা ভেবে সব রুটে বাস চলাচল করেছে। অন্য দিনের তুলনায় বাস কম ছিল ঠিকই তবে বাস ঘন ঘন চালানো হয়েছে।’’
ট্রেনে চেপে সমাবেশের পথে। বনগাঁয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের এই সমাবেশ উপলক্ষে ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৬৫০টি ছোট, বড় গাড়ি গিয়েছে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিভিন্ন সরকারি দফতরে ১৫-২০ শতাংশ কর্মীর হাজিরা কম ছিল। মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, ‘‘অন্যান্য দিনের মতো এ দিনও সব দফতরে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে।’’ ক্যানিঙের বাসন্তী, গোসাবা তো আছেই, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও সোমবার রাতেই মানুষ পায়ে হেঁটে, নৌকো করে, গাড়ি করে সমাবেশের দিকে রওনা দেন। গোসাবার সাতজেলিয়া, কুমিরমারি, বালি, ছোটমোল্লাখালি, বাসন্তীর ঝড়খালি, চুনোখালি, আমঝাড়া এলাকার মানুষের উপস্থিতিও এই সভায় ছিল। ডায়মন্ড হারবার বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরপাল্লার বাস প্রায় ছিলই না। ফলে বাসস্ট্যান্ডে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও কলকাতা, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমার বাস পাননি যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ছোট গাড়ি নিয়ে রওনা দিয়েছেন। অনেককে ঝুঁকি নিয়ে ভিড়ে ঠাসা বাসেই উঠতে হয়েছে। সারা দিনে হাতে গোনা কিছু সরকারি বাস চলেছে। এক যুবক বলেন, ‘‘আমার মা কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রক্ত নিয়ে গেলে তবেই তাঁর অস্ত্রোপচার হবে। কিন্তু যেতেই পারছি না। প্রায় এক ঘণ্টা হতে চলল বাসের দেখা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy