রবিবার অনুষ্ঠানের পরে সমুদ্রতটে পড়ে আবর্জনা। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র
একশো দিনের কাজের বকেয়া-সহ নানা বিষয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও রাজ্যের শাসক তৃণমূলের বিবাদ চলছেই। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হল গঙ্গাদূষণ। গঙ্গাসাগরে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা দূষণ রোধে কর্মসূচির নামে আরও বেশি করে দূষণ করছে বলে অভিযোগ তুলল তৃণমূল। পাল্টা বিঁধেছে বিজেপিও। দূষণ হয়নি বলে দাবি করেছে আয়োজক সংস্থাও।
রবিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের উদ্যোগে গঙ্গাসাগর কপিলমুনির মন্দিরের সামনে গঙ্গা সংস্কৃতি যাত্রার আয়োজন করা হয়। সারা দেশ জুড়ে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ রাজ্যে পাঁচ জায়গার মধ্যে গঙ্গাসাগর ছিল। তার অঙ্গ হিসেবে সন্ধ্যা আরতির ফলে সমুদ্রতটে জমেছে আবর্জনার স্তূপ। তা নিয়েই সরব হয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার যুব সভাপতি বাপি হালদার বলেন, ‘‘দূষণ রোধের বার্তা দিতে এসে নিজেরাই দূষণ করে দিয়ে গিয়েছে। পুজোর উপাচার সমুদ্রে ফেলেছে। বিজেপিকে আগে নিজেদের সচেতন হতে হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল কর্মসূচিতে। কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের দাবি ছিল, গঙ্গাসাগর মেলা ও সারা বছর ধরে পুণ্যার্থীদের আগমনে গঙ্গা যে ভাবে দূষিত হচ্ছে, তা ঠেকাতেই এই সচেতনতা প্রচার করা হয়েছে।
তবে, বাস্তব ছবি ছিল আলাদা।
গঙ্গা আরতি হয়েছিল সমুদ্রতটের ৩ ও ৪ নম্বর স্নান ঘাটে। সোমবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সমুদ্রতট প্লাস্টিকে ভরা। স্থানীয় মানুষ জানালেন, আরতির সময়ে নারকেল, শাড়ি, সিঁদুর, ভোগ, শস্যা গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। জলদূষণ তাতে আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।
বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গাদূষণ ক্রমবর্ধমান। ব্যতিক্রম নয় গঙ্গাসাগরও। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, যাঁরা সচেতন বার্তা দিতে এসেছিলেন, তাঁরাই নিয়মভঙ্গ করেছেন। গঙ্গা আরতিতে ১০৮ জন পুরোহিতের পুজোর উপাচার নদীতে ফেলা হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, এ থেকে দূষণ বাড়লে সেই দায় কে নেবে? বাপির কথায়, ‘‘শুধুমাত্র গঙ্গাদূষণ যাত্রা আয়োজন করলে দূষণ রোধ হবে না। সে জন্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে।’’
দূষণের কথা স্বীকার করলেও তৃণমূলকে পাল্টা বিঁধেছে বিজেপি। স্থানীয় বিজেপি নেতা অরুণাভ দাস বলেন, ‘‘গঙ্গা আরতির সময়ে পুজোর উপাচার সমুদ্রে ফেলা উচিত হয়নি। যাঁরা দায়িত্ব নিয়ে এই অনুষ্ঠান করেছিলেন, তাঁদের আরও সচেতন হতে হবে।’’ পাশাপাশি, তৃণমূলকে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘যারা প্রশ্ন তুলছে দূষণ নিয়ে, গঙ্গাসাগর মেলায় দূষণ ঠেকাতে তারা কী কী ব্যবস্থা নেয়?’’ স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে দাবি, প্রতিনিয়ত সমুদ্রতট সাফ করা হয়। নদীতে যাতে কোনও নোংরা জল না ঢোকে, সেই ব্যবস্থা করা হয়।
এ ছাড়া, সাফাইকর্মীদের দিয়ে
সমুদ্রতট পরিষ্কার করে ব্লিচিং ছড়ানো হয়।
পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের নির্দেশক আশিস গিরির দাবি, ‘‘স্থানীয় পুরোহিত ও লোকজন সন্ধ্যা আরতির আয়োজন করেছিলেন। আমরা কিছু করিনি। কোথাও কোনও আবর্জনা নেই, আমি নিজে দেখেছি, সব পরিষ্কার আছে।’’ সংস্কৃতি যাত্রা করে কি গঙ্গা দূষণ রোধ করা যায়? আশিসের জবাব, ‘‘এ ভাবে দূষণ রোধ হয় না ঠিকই, কিন্তু হাজার হাজার মানুষকে সচেতন করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy