Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Governor CV Ananda Bose

উপহারের বিড়ম্বনা! বঙ্গের রাজ্যপাল হিসাবে দু’বছর ভরসাফুর্তি-বিতর্ক মূর্তিতে, পর পর ব্যাখ্যা রাজভবনের

গত শনিবার বাংলার রাজ্যপাল হিসাবে দু’বছর পূর্ণ করেছেন বোস। জাদুঘরের কর্তাদের উপস্থিতিতে রাজভবনে নিজের একটি মূর্তি নিজেই উন্মোচন করেন রাজ্যপাল। তা নিয়ে ঘোর বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাঁকে।

Governor CV Ananda Bose in irony over the bust, Raj Bhavan explained with a statement

দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে উপহার পাওয়া নিজের মূর্তি উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:২৫
Share: Save:

মন্ত্রী ব্রাত্য বসু লিখেছেন, ‘‘এ তো পুরো জটায়ু। রাজভবনে ম্যাকমোহন।’’ কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘নিজেই নিজের সাংবিধানিক পদের অবমাননা করেছেন।’’ দিকে দিকে এমনই রসিকতার রোল। এতটাই যে, অনেক রসিক সহ-নাগরিক সত্যজিতের ছবির ‘ভরসাফুর্তি’ উৎসবে হীরকরাজের নিজের মূর্তি নিজে উন্মোচনের সঙ্গে তুলনা টানতে বসেছিলেন।

কারণ, উপলক্ষ একই— মূর্তি উন্মোচন! গত শনিবার রাজভবনে যে মূর্তি উন্মোচন করেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। দ্বিতীয় উপলক্ষ: বর্ষপূর্তি (গুপি-বাঘার কথায় ‘ভরসাফুর্তি’)। আসলে দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসাবে তাঁর দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি।

কিন্তু রাজভবনের ব্যাখ্যা বলছে, ‘ফুর্তি’ নয়। আসলে ‘বিড়ম্বনা’। উপহারের বিড়ম্বনা।

কারণ, রাজ্যপাল রাজভবনে নিজের মূর্তি নিজে বসাননি। তিনি মূর্তিটি উপহার পেয়েছিলেন। সেই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেছেন মাত্র। তবে সে উপহার যে রাজ্যপালকে ‘বিড়ম্বনায়’ ফেলেছে, তাতে সন্দেহ নেই। কারণ, ঘটনাচক্রের ‘ব্যাখ্যা’ দিতে রবি এবং সোমবার দু’টি বিবৃতি জারি করেছে রাজভবন।

গত এক পক্ষকাল ধরে কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে ‘অপনা ভারত, জাগতা বেঙ্গল’ শীর্ষক এক প্রদর্শনী চলছে। পার্থ সাহা নামের এক শিল্পী রাজ্যপালের একটি আবক্ষ মূর্তি তৈরি করেছেন। সেটি ওই প্রদর্শনীতে ছিল। রাজ্যপালের কার্যকালের দু’বছর পূর্তিতে সেটি রাজভবনে পাঠানো হয়। গত শনিবার জাদুঘরের কর্তাদের উপস্থিতিতে রাজভবনে নিজের মূর্তি নিজেই উন্মোচন করেন রাজ্যপাল। তার পরেই শুরু হয় রসিকতা।

হালচাল দেখে রবিবার রাজভবন একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি জারি করে। তাতে বলা হয়, ‘‘অনেক শিল্পী তাঁদের শিল্পকর্ম মাননীয় রাজ্যপালকে উপহার দেন। অনেক চিত্রশিল্পী মাননীয় রাজ্যপালের প্রতিকৃতি এঁকে তাঁকে উপহার দিয়েছেন। অনুরূপ ভাবে, এক সৃষ্টিশীল ভাস্কর মাননীয় রাজ্যপালের একটি মূর্তি তৈরি করে উপহার দিয়েছিলেন।’’

কিন্তু তাতে বিড়ম্বনার ভবি ভোলেনি। অগত্যা সোমবার দীর্ঘ বিবৃতি জারি করেছে রাজভবন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজ্যপাল কী ভাবে ‘জনতার রাজ্যপাল’ হয়ে উঠেছেন। মূর্তি উন্মোচন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘‘আবক্ষ মূর্তির উন্মোচন ছিল একান্ত ভাবে একজন সাধারণ মানুষের হৃদয়ের ইচ্ছাকে পূর্ণতা দেওয়ার মুহূর্ত। এটি কোনও আনুষ্ঠানিক আত্ম উন্মোচন ছিল না। বরং ছিল বিনম্রতা এবং জনতার সম্মিলিত আবেগকে সম্মানজ্ঞাপন।’’

উপহার নিয়ে বিড়ম্বনা অবশ্য এই প্রথম নয়। এর উজ্জ্বল উদাহরণ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমে থাকাকালীন তাঁকে উপহার-বিতর্কে পড়তে হয়েছিল। তখন রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ডার্বি দেখতে গিয়েছিলেন। গ্যালারিতে বসা ঋতব্রতের ছবিতে তাঁর পকেট থেকে একটি ম ব্লাঁ কলমের মুন্ডু উঁকি মারছিল। সিপিএমের মধ্যে এই প্রশ্ন উঠেছিল, কমিউনিস্ট পার্টির নেতার পকেটে কেন ওই মহার্ঘ কলম? কেন কব্জিতে অ্যাপলের আই ওয়াচ? ঋতব্রত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, ওই কলম তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারি। তাতে বিতর্ক থামেনি। কিন্তু বিতর্ক অন্য পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। ঘটনাচক্রে, তার কয়েক বছরের মধ্যেই ঋতব্রত সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হন।

বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন তরুণ সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষও। বিষয়: দামি গাড়ি। সিপিএমের সর্বক্ষণের কর্মী কী ভাবে ২২ লক্ষ টাকা দামের এসইউভি কিনলেন, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। শতরূপ দাবি করেন, গাড়িটি কিনেছিলেন তাঁর বাবা, কিন্তু পুত্রের নামে সেটি কেনা হয়েছে। সেটিও প্রকারান্তরে ‘উপহার’ হিসাবেই দেখাতে চেয়েছিল সিপিএমের একটি অংশ। তাতে লাভ হয়নি। গাড়ি রাস্তায় গড়ানোর আগেই তাতে সওয়ার হয়ে গিয়েছিল ‘বিড়ম্বনা’।

রাজ্যপালের মূর্তি উন্মোচনের পরে আলোচনায় চলে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। গুজরাতের মোতেরায় নিজের নামাঙ্কিত ক্রিকেট স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেছিলেন মোদী নিজেই! বিজেপি অবশ্য বলে, মোদী চাননি। গুজরাতের মানুষ চেয়েছিলেন। যেমন সিপিএম বলে। সিপিএমের হুগলি জেলার প্রাক্তন সম্পাদক বিজয় মোদক জীবিত থাকাকালীনই তাঁর নামাঙ্কিত কলেজ তৈরি হয়েছিল বলাগড়ে। সিপিএম বলেছিল, ‘‘বিজয়দা চাননি। স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদানের কথা মাথায় রেখে জেলা পার্টিই জোর করে ওই নামকরণ করেছিল।’’

যেমন রাজভবন পিঠোপিঠি বিবৃতিতে জানাল, রাজ্যপাল আত্মপ্রচারের জন্য মূর্তি উন্মোচন করেননি। সেটি ছিল ভাস্করের প্রতি তাঁর সম্মান।

সম্মান এবং ভরসা। ভরসা এবং ফুর্তি। বর্ষপূর্তিতে ভরসাফুর্তি।

অন্য বিষয়গুলি:

Governor CV Ananda Bose Raj Bhavan Controversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy