Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বিড়ির খরিদ্দার সেজে ডাকাতি স্বরূপনগরে

গরুর ব্যবসায়ী খরিদ্দার বিড়ি কিনতে চাইছে। তাই রাত হলেও দোকানের দরজা খুলেছিলেন কৃষ্ণপদ গাইন। সেটাই কাল হল। খরিদ্দার সেজে আসা ৭-৮ জনের দুষ্কৃতী দলটি দোকানে ঢুকে কৃষ্ণপদবাবুকে মারধর করে তাঁকে বেঁধে দোকান ও দোকান লাগোয়া বাড়িতে লুঠপাট চালিয়ে গয়নগাটি, নগদ টাকা নিয়ে চম্পট দিল।

লুঠপাঠের পরে লন্ডভন্ড ঘর। ছবি: নির্মল বসু।

লুঠপাঠের পরে লন্ডভন্ড ঘর। ছবি: নির্মল বসু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০১:২০
Share: Save:

গরুর ব্যবসায়ী খরিদ্দার বিড়ি কিনতে চাইছে। তাই রাত হলেও দোকানের দরজা খুলেছিলেন কৃষ্ণপদ গাইন। সেটাই কাল হল। খরিদ্দার সেজে আসা ৭-৮ জনের দুষ্কৃতী দলটি দোকানে ঢুকে কৃষ্ণপদবাবুকে মারধর করে তাঁকে বেঁধে দোকান ও দোকান লাগোয়া বাড়িতে লুঠপাট চালিয়ে গয়নগাটি, নগদ টাকা নিয়ে চম্পট দিল। চলে যাওয়ার সময় দোকান থেকে চানাচুরও সাবাড় করে যায় তারা।

সোমবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর থানার নির্মাণ গ্রামে। দুষ্কৃতীদের মারে গুরুতর জখম কৃষ্ণপদবাবুকে স্থানীয় শাঁড়াপুল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কৃষ্ণপদবাবুর দাবি, দুষ্কৃতীরা নগদ প্রায় ১০ হাজার টাকা এবং এক ভরির মতো সোনার অলঙ্কার নিয়ে গিয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও পুলিশ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এই নিয়ে গত দু’মাসে স্বরূপনগরের ভাদুড়িয়ায় এক সার ব্যবসায়ী, হঠাত্‌গঞ্জের সানাপাড়া, খর্দ্দরসিং, নির্মাণ গ্রামে একের পর ডাকাতি, লুঠপাট মারধরের ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। সেইসঙ্গে আতঙ্কিতও।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে গিয়েছে, স্বরূপনগরের নির্মাণ গ্রামে হাকিমপুর রাস্তার পাশে মুদির দোকান কৃষ্ণপদবাবুর। দোকান লাগোয়াই তাঁর টালির বাড়ি। স্ত্রী আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ায় বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বাড়িতে ছিলেন কৃষ্ণপদবাবু। রাত দেড়টা নাগাদ বাড়ির সামনে একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নামে ৭-৮ জনের একটি দল। সকলেরই মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল। তাদের একজন নিজেকে গরু ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বিড়ি কিনতে এসেছি বলে দোকানের দরজা খুলতে বলে। খরিদ্দার মনে করে কৃষ্ণপদবাবু দরজা খুলতেই দুষ্কৃতীরা তাঁকে ধাক্কা দিয়ে দোকানে ঢুকে পড়ে রিভলভার বের করে তাঁর মাথায় ঠেকায়। কৃষ্ণপদবাবুর কথায়, “ওরা আমার হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে কোথায় কত টাকা আছে জানতে চায়। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় দরজার হাঁক দিয়ে বেদম মারে। এরপর বাক্স ভেঙে টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে নেয়। চলে যাওয়ার সময়ে দোকানে রাখা চানাচুরের প্যাকেট দেখে দুষ্কৃতীদের একজন আর একজনকে বলে দু’প্যাকেট নিয়ে নে। ফেরার পথে জমবে ভাল। এরপর বয়েম থেকে একমুঠো চানাচুর মুখে দিয়ে প্যাকেট দু’টো বগলদাবা করে বাইরে দাঁড়ানো গাড়িতে উঠে চম্পট দেয়।”

পুলিশ জানায় দুষ্কৃতীরা চলে গেলে কৃষ্ণপদবাবুর মা সুভদ্রাদেবী প্রতিবেশী সুব্রত ঢালির বাড়িতে গিয়ে সব জানালে সুুব্রতবাবু প্রতিবেশীদের নিয়ে এসে কৃষ্ণপদবাবুর বাঁধন খুলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে গেলে কৃষ্ণপদবাবু বলেন, ‘‘বড় রাস্তার পাশে দোকান হওয়ায় প্রয়োজনে অনেকেই রাতবিরেতে বিড়ি-সিগারেট বা এটা ওটা কিনতে আসেন। এদিনও তাই ভেবেই দরজা খুলে দিই। তবে দুষ্কৃতীরা যে মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে হাত-পা বেঁধে মারধর করবে ভাবতে পারিনি।’’

স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জন মণ্ডল, স্বপন গাইন বলেন, “সম্প্রতি এলাকায় দুষ্কৃতীদের উপদ্রব ভীষণ বেড়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে বাদল রায়ের বাড়িতে ডাকাতি করতে এসে দুষ্কৃতীরা তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে প্রচণ্ড মারধর করে সর্বস্ব লুঠকরে পালায়। এ দিনও রাতে দুষ্কৃতীরা প্রথমে ডাকবাংলো মোড়ে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে বুঝতে পেরে তাঁরা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এলে দুষ্কৃতীরা পাটখেতে লুকিয়ে পড়ে। পরে গভীর রাতে কৃষ্ণপদ বাবুর বাড়িতে হামলা চালায়। তাঁদের অভিযোগ, বার বার ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ স্রেফ তদন্ত হচ্ছে বলে দায় সারছে। কিন্তু তাঁদের নিরাপত্তা কোথায়?

অন্য বিষয়গুলি:

swaroopnagar robbery camouflage bidi labour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE