Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

সুনামি ধেয়ে এলে উদ্ধার কী ভাবে, দেখাল মহড়া

আকাশে চক্কর কাটছে পাইলটবিহীন বিমান।ব্যাটারি চালিত করাত দিয়ে কাটা হচ্ছে ভেঙে পড়া গাছ।দুর্গত মানুষকে তুলে আনা হয়েছে ত্রাণ শিবিরে। তিন তলায় আটকে যাওয়া শিশুকে উদ্ধার করছে বিপর্যয় মোকাবিলাকারী দল।

ভয় নেই, বোঝাল উদ্ধারকারী দল। সন্দেশখালিতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ভয় নেই, বোঝাল উদ্ধারকারী দল। সন্দেশখালিতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু ও শান্তশ্রী মজুমদার
সন্দেশখালি ও কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:০১
Share: Save:

আকাশে চক্কর কাটছে পাইলটবিহীন বিমান।

ব্যাটারি চালিত করাত দিয়ে কাটা হচ্ছে ভেঙে পড়া গাছ।

দুর্গত মানুষকে তুলে আনা হয়েছে ত্রাণ শিবিরে। তিন তলায় আটকে যাওয়া শিশুকে উদ্ধার করছে বিপর্যয় মোকাবিলাকারী দল।

উদ্ধার কাজের প্রতিটি মিনিটের খবর চলে যাচ্ছে সদর দফতরে।

এক নজরে দেখলে মনে হবে, কয়েক ঘণ্টা আগেই ঘটে গিয়েছে ভয়ানক কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়। দিন কয়েক ধরে টানা বৃষ্টি চলছে বটে, কিন্তু তাতে কী এত বড় বিপর্যয় ঘটে গেল!

বুধবার সকাল থেকে সন্দেশখালি এবং বকখালিতে এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল। পরে উদ্ধারকারী দলের কর্তারা জানালেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়নি এটা ঠিক— তবে সুনামির মতো কোনও বড়সড় বিপর্যয় ঘটলে কী ভাবে উদ্ধার কাজ চালানো হবে, তারই মহড়া চলছে।

রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের বসিরহাট মহকুমা আধিকারিক দীপঙ্কর হালদার বলেন, ‘‘বুধবার হায়দরাবাদে ইন্ডিয়ান সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টারের পরিচালনায় সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত পৃথিবীর ২৫টি দেশে সুনামি পরবর্তী মহড়া হয়েছে। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভারতের ১২টি রাজ্যে এই মহড়া চলে। এ রাজ্য উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ ও পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় মহড়া হয়েছে।’’

এ দিন সকাল থেকেই সন্দেশখালিতে মাইকে করে সুনামির সতর্কতার কথা প্রচার করা হয়। সকাল ১০টা নাগাদ মাইকে ঘোষণা করা হয়, ‘‘প্রবল বেগে জলোচ্ছ্বাস হতে চলেছে। আমরা তৈরি রয়েছি। ভয় পাবেন না।’’ তারপরেই ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের প্রশিক্ষিত কর্মীরা ছোট কলাগাছি নদীর তীরের বাসিন্দা এবং গবাদি পশুদের উদ্ধার করে বিডিও অফিস চত্বরের ফ্লাড সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে রাখা ছিল পর্যাপ্ত খাবার, দুধ, বিস্কুট, পোশাক এবং কম্বল। ছিলেন চিকিৎসক। এরপরে উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা তিন তলা বাড়ির ছাদে আটকে পড়া এক শিশুকে দড়ির সাহায্যে মাটিতে নামিয়ে আনেন। ব্যাটারি-চালিত করাত দিয়ে কাটা হয় বিডিও অফিসের পিছনে ভেঙে যাওয়া গাছ। লাইফ জ্যাকেট পরে স্পিড বোটে করে কয়েক জন শিশুকে আনা হয় ডাঙায়। আকাশে ঘুরতে দেখা যায় পাইলটবিহীন বিমান।

এ দিন একই ছবি ধরা পড়েছে কাকদ্বীপে। সকাল সাড়ে ৮টায়, হায়দরাবাদের জাতীয় সমুদ্র তথ্যকেন্দ্র থেকে ‘বঙ্গোপসাগর উপকুলের দিকে সুনামি ধেয়ে আসছে’— এই বার্তা আসে কাকদ্বীপ মহকুমাশাসকের দফতরে। তারপরেই তৎপরতা শুরু হয়ে যায় বকখালি এবং গঙ্গাসাগরে। এডিআরএফের জওয়ানদের নিয়ে উদ্ধার কাজে নেমে যায় স্থানীয় প্রশাসন। সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সুনামির পরে উদ্ধারের মহড়া চলে।

প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মহড়া চলাকালীন পর্যটকেরা যাতে বিভ্রান্ত হয়ে না পড়েন, সে জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বকখালিতে মাইকে করে মহড়ার কথা বলে দেওয়া হয়েছিল। তাই বুধবার পর্যটকদের সামনেই মহড়ার কাজ চললেও আতঙ্ক ছড়ায়নি। বরং পর্যটকদের কাছে গোটা ঘটনাটা চাক্ষুষ করতে পারা ছিল এক বাড়তি অভিজ্ঞতা।

কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক রাহুল নাথ জানান, সাগর দ্বীপের সমুদ্র লাগোয়া দু’টি পঞ্চায়েতে পুলিশ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের জওয়ানদের সঙ্গে স্বাস্থ্য, পঞ্চায়েত, বিডিও দফতর, উপকুলরক্ষীবাহিনী যৌথ ভাবে অভিযান চালায়। বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে পুরো মহড়া যাচাই করে দিল্লির অফিস।

জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের দ্বিতীয় ব্যাটলিয়নের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ড্যান্ট প্রভাতকুমার গুপ্ত বলেন, ‘‘কাকদ্বীপে জওয়ানদের দু’টি দলে ভাগ করে দেওয়া হয়। তাঁরা উদ্ধার কাজ, আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার কাজ করেন। নিচু এলাকা থেকে মানুষ এবং গবাদি পশু বের করার কাজে প্রশাসনকে সাহায্য করেছি আমরা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Relief camp Victim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE