মনীষার ছবি হাতে মা মাসুদা। নিজস্ব চিত্র।
মনীষার লড়াইয়ে মনের জোর পাচ্ছেন গ্রামের মানুষও। তাঁরা এ বার প্রশ্ন তুলছেন, কেন অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনার পরে সাত মাস কেটে গেলেও এখনও ধরা পড়ল না মূল অভিযুক্ত। কেনই বা যারা ধরে পড়েছিল, তারা সহজেই জামিনে ছাড়া পেয়ে এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে?
জয়নগরের তরুণী মনীষা পৈলানের উপরে অ্যাসিড হামলার ঘটনা এবং তাঁর পরে মনীষার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটা লোকের মুখে মুখে ঘুরছে। বৃহস্পতিবার জয়নগর মজিলপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাসানপুরে গিয়ে দেখা হল মনীষার মা মাসুদার সঙ্গে। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ সঠিক ভাবে মামলা না সাজানোর জন্যই অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি চাই, অপরাধীদের চরম শাস্তি হোক।’’ মনীষার কাকা মতিন বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা এমন ভাবে ঘুরে বাড়াচ্ছে, যেন কিছুই হয়নি। এত বড় কাণ্ডের পরে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই এই সাহস পাচ্ছে ওরা।’’
অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলছেন প্রতিবেশীরাও। মনীষার এক সময়ের সহপাঠী সুমাইয়া পৈলান বলেন, ‘‘ও খুব মিশুকে মেয়ে ছিল। সকলের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করত। ওর উপরে এমন হামলা যারা করেছে, তাদের শাস্তি চাই।’’
পুলিশের বিরুদ্ধে যেখানে এমন অভিযোগ উঠছে, সেখানে কী বলছেন দফতরের কর্তারা?
নিষ্ক্রিয়তার নালিশ মানছেন না তাঁরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত এগোচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জশিটও পেশ করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত সেলিমের খোঁজ চলছে।
২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর তারিখটাই বদলে দিয়েছে মনীষার জীবনের সরলরৈখিক গতিপথ। ওই দিন সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ রথতলা মোড়ে কম্পিউটর সেন্টারে কাজ সেরে বছর বাড়িতে ফিরছিল বছর তেইশের তরুণী মনীষা। ওই মোড় থেকে শুরু পিচের রাস্তা দিয়ে আসার সময়ে বাড়ির অদূরে জামগাছের আড়ালে থাকা কয়েকজন যুবক আচমকা অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে তাঁর মুখে। প্রতিবেশী ও পরিবারের লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরের দিন তরুণীর বাবা মুন্নাপ পৈলান প্রতিবেশী যুবক সেলিম হালদার ও তার মা-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ৬২৬, ৬২৬-এ ৩২৬-বি, ১২০-বি ও ৩০৭ ধারায় মামলা রুজু করে সেলিমের মা সেলিমা-সহ চার যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে সেলিম এখনও অধরা। পেশায় গুজরাতের এক কারখানার শ্রমিক সেলিমের খোঁজে পুলিশ একাধিকবার সে রাজ্যেও পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু হদিস মেলেন, এমনটাই দাবি তদন্তকারী অফিসারদের।
সেলিমা থাকে ওই এলাকারই দুর্গাপুর গ্রামে। তরুণীর প্রতিবেশী দুই যুবক জামির পৈলান ও রহিম পৈলান ছাড়াও কুলতলির দু’জন জামিন পেয়েছে।
মনীষা অবশ্য হাল ছাড়েননি। নিজের কেরিয়ার তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, তাঁকে ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। অসমসাহসী মনীষা এখন বলছেন, অ্যাসিডে শুধু তো তাঁর চামড়াটুকুরই ক্ষতি হয়েছে। মনের জোরে এতটুকু টোল খায়নি।
পুরপ্রধান সুজিত সরখেল বলেন, ‘‘ওই মর্মান্তিক ঘটনায় অপরাধীরা এত অল্প সময়ে জামিন পেয়ে গেল কী করে, তা খতিয়ে দেখা হোক। ওই পরিবারের উপরে কোনও হুমকি এলে পুলিশ তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy