Advertisement
০৯ নভেম্বর ২০২৪

ঘরছাড়াদের ফেরাতে উদ্যোগ কুলতলিতে

সন্ত্রাসের জেরে প্রায় দু’বছর ধরে ঘরছাড়া বেশ কিছু পরিবার। পুলিশের নানা মহলে একাধিক বার জানানোর পরে এ বার সর্বদল সভা করে সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হল স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন।

দিলীপ নস্কর
কুলতলি শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৭ ০২:১১
Share: Save:

সন্ত্রাসের জেরে প্রায় দু’বছর ধরে ঘরছাড়া বেশ কিছু পরিবার। পুলিশের নানা মহলে একাধিক বার জানানোর পরে এ বার সর্বদল সভা করে সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হল স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন।

কুলতলির মেরিগঞ্জ-১ পঞ্চায়েতের বেণীমাধবপুর এবং মেরিগঞ্জ ২ পঞ্চায়েতের কৈলাসপুর গ্রাম দু’টি পাশাপাশি। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা এক সময়ে ছিল সিপিএম-আরএসপি-র দখলে। বাকি অংশে প্রভাব ছিল এসইউসি-র। এলাকায় গোলমালের ইতিহাস পুরনো। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে তৃণমূলের প্রভাব বাড়ে। স্থানীয় মানুষজনের অভিযোগ, এরপর থেকে বিরোধীদের উপরে অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে। বেণীমাধবপুরের ৬-৭ জন আরএসপি কর্মী তৃণমূল শিবিরে ভিড়ে গিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। তাদেরই তাণ্ডবে ২০১৫ সাল থেকে পাশের কৈলাসপুর গ্রামের ১৪টি পরিবারের ৬২ জন সদস্য ঘরছাড়া রয়েছে বলেও অভিযোগ।

কী ধরনের অত্যাচার চলে এলাকায়?

বিরোধী শিবিরের দাবি, মাঠে চাষ করতে গেলে তোলা দিতে হয়। জমি বিক্রি করতে গেলে তোলাবাজি চলে। ঘরোয়া বিবাদেও সালিশি বসায় তৃণমূলের কিছু লোক। নিদান না মানতে চাইলে চলে মারধর। বিরোধী শিবির ছেড়ে কেন তৃণমূলে ভিড়ছে না, এই অজুহাতেই চলে অত্যাচার। দলের কর্মীদের কাছ থেকে জমিজমা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে এসইউসি নেতৃত্বের।

সমস্যার কথা ওঠে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের কানে। তারপরেই সর্বদল বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে কুলতলি বিডিও অফিসে সর্বদল সভা ডাকা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল নেতা গোপাল মাঝি ও গণেশ মণ্ডল। এসইউসি-র জয়কৃষ্ণ হালদার, সিপিএমের নিরঞ্জন দাস, বিজেপির উত্তম হালদার, কংগ্রেসের যুধিষ্ঠির নস্কর, ফরোয়ার্ড ব্লকের অনিল অধিকারী। বিডিও বিপ্লব নাথ, সিআই জয়নগর শ্যামল চক্রবর্তী ও ওসি অরিন্দম ভট্টচার্যের উপস্থিতিতে ঘণ্টা দু’য়েক সভা চলে। ঠিক হয়েছে, দুই পঞ্চায়েতের প্রতিটি দলের একজন করে প্রতিনিধি এবং ব্লক প্রশাসন ও পুলিশের প্রতিনিধি মিলে ১০ এপ্রিল কৈলাসপুরে যাবেন। ঘরছাড়া পরিবারেরগুলির কী অবস্থা, তা খতিয়ে দেখে শান্তি কমিটি তৈরি করে সমস্যা সমাধান করা হবে।

বিডিও বিপ্লব নাথ বলেন, ‘‘ঘরছাড়া পরিবারের যে তালিকা পেয়েছি, তা খতিয়ে দেখা হবে। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভিন রাজ্যে কাজে গিয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।’’

পুলিশের বক্তব্য, মারপিটে কোনও পক্ষই কম যায় না। দু’পক্ষেরই মামলা, পাল্টা মামলা রয়েছে। অনেকে এর আগে ধরাও পড়েছে। অনেকে জামিনে মুক্ত রয়েছে।

এসইউসি নেতা জয়কৃষ্ণ হালদার জানান, ২০১৫ সাল থেকে শাসক দলের আশ্রয়ে থেকে কিছু লোক লাগামছাড়া সন্ত্রাস চালাছে। তাদের দাপটে সন্ত্রস্ত বিরোধীরা। পুলিশ-প্রশাসন সব কিছু দেখেও দেখে না। বহু বার অভিযোগ দায়ের করেও সুরাহা হয়নি। ঘরছাড়ারাও ফিরতে পারেননি। একই অভিযোগ বিজেপি নেতা উত্তম হালদারের। স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক রামশঙ্কর হালদার বলেন, ‘‘স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন শাসক দলের কাছে মাথা নুইয়ে দিয়েছে বলেই এই পরিস্থিতি।’’

তৃণমূল নেতা গোপাল মাঝির বক্তব্য, ‘‘কে বা কারা অত্যাচারিত হয়েছে, তা আমাদের একেবারই অজানা ছিল।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন পুলিশের উপর মহলে অভিযোগ জানানো হল, তা খোঁজ নেওয়া হবে।’’ অর্থাৎ, এলাকায় তাঁদের দলের কেউ অত্যাচার চালাচ্ছে বলে মানতেই চাননি ওই তৃণমূল নেতা।

অন্য বিষয়গুলি:

Homeless People Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE