Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

মাধ্যমিকের মাঝে বিয়ে, রুখল পুলিশ

তবে সে সময়ে আর কথা বিশেষ বাড়াননি পুলিশ কর্মীরা। কারণ, ঘড়ির কাঁটায় তখন ১১টা। এক ঘণ্টার মধ্যে শুরু হবে পরীক্ষা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মন্দিরবাজার শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০২:২২
Share: Save:

বিয়ের দিন সকালে বাড়িতে হাজির পুলিশ। এ দিকে, এ দিনই মেয়ের মাধ্যমিকের ভূগোল পরীক্ষা।

পরীক্ষা দেওয়ার আশা ছেড়েই বসেছিল নাবালিকা মেয়েটি। ‘পুলিশ কাকু’রা গিয়ে বলেন, ‘‘এখুনি স্কুলের ইউনিফর্ম পরে নাও। পরীক্ষা তোমায় দিতেই হবে।’’

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় মেয়েটি। পরিবারও হতভম্ব।

তবে সে সময়ে আর কথা বিশেষ বাড়াননি পুলিশ কর্মীরা। কারণ, ঘড়ির কাঁটায় তখন ১১টা। এক ঘণ্টার মধ্যে শুরু হবে পরীক্ষা। মেয়ের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনকে কথা বলার বিশেষ সুযোগই দেননি পুলিশ কর্মীরা। মেয়েকে গাড়িতে তুলে সোজা তাঁরা রওনা দেন পরীক্ষা কেন্দ্রে দিকে।

শেষমেশ নির্বিঘ্নেই পরীক্ষা দিয়েছে মেয়েটি। তার বাড়িতে গিয়ে পুলিশ পড়ে বুঝিয়ে এসেছে, আঠারো বছর না হলে বিয়ে দেওয়া আইনত অপরাধ। আর তা ছাড়া, মাধ্যমিক পরীক্ষা বন্ধ করে বিয়ে দেওয়ার তো প্রশ্নই নেই।

এর আগের পরীক্ষাগুলিতে বসেছিল মন্দিরবাজার গ্রামের মেয়েটি। সে আমতা আমতা করে জানায়, পরীক্ষা দিতেই চেয়েছিল সে। পড়তেও চায় আরও। কিন্তু অভাবের সংসারে বাবা-মা বিয়ের ঠিক করায় তার কথা কেউ আর বিশেষ কানে তোলেনি।

মন্দিরবাজারের রঘুনাথপুর হাইস্কুলের ছাত্রীটির মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার সিট পড়েছে পাশের ঘাটেশ্বরা ডি কে বিদ্যামন্দিরে। বছর ষোলোর মেয়েটির বাবা গরিব দিনমজুর। অনেক আগে থেকেই মেয়ের জন্য পাত্র ঠিক করে রেখেছিলেন তাঁরা। ঘটনাচক্রে বিয়ের দিনটি ছিল বুধবার, ভূগোল পরীক্ষার দিনই। সকাল থেকে বাড়িতে চলছিল সেই তোড়জোড়।

কিন্তু খবর পৌঁছয় পুলিশ-প্রশাসনের কানে।

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ বাড়িতে হাজির হয় পুলিশের একটি দল। দ্রুত মেয়েটিকে পৌঁছে দেওয়া হয় পরীক্ষাকেন্দ্রে। পরে মেয়ের বাড়িতে ফিরে এসে বাবা-মাকে তারা বোঝায়, ১৮ বছরের নীচে মেয়ের বিয়ে দেওয়া আইনত অপরাধ।

পুলিশ ছাত্রীটির বাবা-মায়ের কাছে থেকে এই মর্মে মুচলেকাও নিয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, মেয়েকে সব বিষয়ে পরীক্ষায় বসতে দেবেন। ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত কোনও ভাবেই পাত্রস্থ করবেন না। সেই মতো ছেলের বাড়িতেও পুলিশ গিয়ে সে কথা জানিয়েছে এসেছে।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়াশোনার প্রতি ওই ছাত্রীর আগ্রহ রয়েছে। সে কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকাও পায়। কিন্তু তারপরেও কেন মেয়ের বিয়ের ঠিক করা হল, তা জেনে বিস্মিত স্কুলের শিক্ষকেরাও।

মন্দিরবাজারের বিডিও অচিন্ত্য ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা বোঝানোর পরে বিয়েটা আটকানো গিয়েছে। মেয়েটিও আরও পড়তে চায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Police Minor Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE