পাকড়াও: বীজপুর থানায় সুভাষ দাস (বাঁ দিকে) ও বিশ্বজিৎ দাস ওরফে সঞ্জু (একেবারে ডান দিকে নীল-সাদা চেক জামায়)। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
মোবাইলে একটি ‘ভুল নম্বর’ থেকে আসা ফোন। সেই সূত্রে আলাপ অঞ্জু-সঞ্জুর। মাস সাতেক আগের আলাপ ক্রমে গ়ড়ায় ঘনিষ্ঠতায়।
শুক্রবার রাতে বীজপুরের ভ্যানচালক বাবুল দাসের খুনের ঘটনায় স্ত্রী অঞ্জুকে গ্রেফতার করে তার মোবাইল কললিস্ট ঘেঁটে প্রেমিক সঞ্জুর ফোন নম্বর পেয়েছিল পুলিশ। টাওয়ার লোকেশন থেকে জানা যায়, তারাপীঠে আছে সে। সঙ্গে সুভাষ দাস নামে এক সঙ্গী। পুলিশের দাবি, সুভাষও হাজির ছিল খুনের সময়ে।
অঞ্জুকে মোবাইল কিনে দিয়েছিল বছর উনিশের প্রেমিক সঞ্জু। প্রেমিকাকে দিয়েই তাকে ফোন করায় পুলিশ। পুলিশের কথা মতো অঞ্জু বলে, ‘পরিস্থিতি এখন ঠিকঠাক। কোনও চাপ নেই। চলে এসো।’ সুভাষকে নিয়ে সঞ্জু সোমবার সকালে আসে নৈহাটির রামচন্দ্রপুরে, নিজের বাড়ির কাছাকাছি এলাকায়। তৈরি ছিল পুলিশের একটি দল। ধরা পড়ে যায় দু’জন।
সঞ্জু ওরফে বিশ্বজিৎ দাস এবং সুভাষকে এ দিন ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ৫ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার কে কান্নান বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে। নিহত যুবক ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যে সাংসারিক অশান্তি ছিল বলে জানা গিয়েছে।’’ অশান্তির এই আবহেই বছর ছ’য়েকের ছোট সঞ্জুর সঙ্গে অঞ্জুর ঘনিষ্ঠতা দ্রুত গাঢ় হয়েছিল বলে অনুমান তদন্তকারীদের।
কী ভাবে আলাপ অঞ্জু-সঞ্জুর, সেটা শুরু থেকেই ভাবাচ্ছিল পুলিশকে। প্রেমিকা-প্রেমিকা দু’জনেই ধরা পড়ায় এ বার ‘অঞ্জু মিট্স সঞ্জু’র রহস্যের পর্দা উঠল বলে দাবি পুলিশের। যা মনে করিয়ে দিচ্ছে বারাসতের অনুপম হত্যাকাণ্ডের কথাও। সেখানেও অনুপমের স্ত্রী মনুয়ার সঙ্গে প্রেমিক অজিতের আলাপ হয়েছিল মোবাইল ফোনে। দু’জনে মিলে ছক কষে খুন করে অনুপমকে। পরে ধরা পড়ে প্রেমিক-প্রেমিকা।
তবে মনুয়া-কাণ্ডে স্ত্রীর সঙ্গে অজিতের প্রেমকাহিনী টের পাননি অনুপম। বীজপুরের ঘটনায় তদন্তকারীদের দাবি, বাবুল জানতেন অঞ্জু-সঞ্জুর ঘনিষ্ঠতার কথা। নৈহাটির মামুদপুরের বাসিন্দা সঞ্জু কাজ করে হ্যাচারিতে। সামান্য টাকা রোজগার। কিন্তু অঞ্জুর সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল বছর উনিশের তরুণ। প্রেমিকার উপরে মদ্যপ স্বামীর নির্যাতনের ঘটনা শুনে মাথায় আগুন জ্বলত তার, জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে সঞ্জু।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে অঞ্জুর হাতে কিছু টাকা দিয়েছিল সঞ্জু। সেই টাকা দিয়ে বাবুল মাংস, ইলিশ মাছ কিনে আনেন। দুপুরে ইলিশ রান্না হয়। রাতের মেনুতে ছিল মাটন। কষা মাংস রাঁধে স্ত্রী। বৃষ্টি-বাদলার দিনে ঘরে বসেই মদ খেতে চেয়েছিলেন বাবুল। কিন্তু মদের ঘোরে চুর হলে তাকে নিকেশ করবে বলে ছক কষেছিল সঞ্জু-অঞ্জুরা। বাড়িতে আসর বসানোয় সমস্যা ছিল। বাবুলকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কাছেই বালিভারায় ভুবন সঙ্ঘের খেলার মাঠের পাশে।
পুলিশের দাবি, জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছে সঞ্জু। গলার নলি কেটে খুনের পরে অঞ্জুকে ফোন করেছিল সে। বলেছিল, ‘‘কাজ শেষ। এখন ক’দিন গা-ঢাকা দিতে হবে। ফিরব তাড়াতাড়ি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy