স্ত্রীকে ভোটার কার্ড গুছিয়ে রাখতে বলে তিনি যাচ্ছিলেন নিজের দোকানের দিকে। কিন্তু পাঁচু সোনকারের ভোট আর দেওয়া হয়নি। একটি বুলেট বাঁ পায়ের গোড়ালি এ ফোঁড় ও ফোঁড় করে চলে গিয়েছে ষাট বছরের পাঁচুবাবুর।
শনিবার সকাল ৮টার ঘটনা। টিটাগড়ের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গোরাফটক নিউ স্ট্যান্ডার্ড এলাকার এক প্রান্তে অ্যাংলো ভার্নাকুলার প্রাইমারি স্কুলের বুথে চলছিল ভোট। স্কুলের আগের গলিতেই বিরিয়ানি বিক্রেতা পাঁচু সোনকারের বাড়ি।
কী হয়েছিল ঘটনাটি?
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পাঁচুবাবু যখন তাঁর দোকানের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন প্রায় ৩০টি মোটরবাইকে চড়ে একদল যুবক বুথের সামনের খোলা চত্বরে ঢুকে পড়ে। এর পরেই তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভোটারদের তাড়াতে শুরু করে দেয়। এর মধ্যে একদল বুথের মধ্যে থাকা সিপিএমের এক পোলিং এজেন্টকে বাইরে এনে মারধর করতে থাকে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ সব দেখে আতঙ্কিত পাঁচুবাবুও বাড়ির দিকে দৌড়তে শুরু করেন। ওই সময়ে একটি গুলি এসে তাঁর বাঁ পায়ের গোড়ালিতে ঢুকে যায়। রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। এলাকার বাসিন্দারা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত বহিরাগত দুষ্কৃতীরাই ওই ঘটনা ঘটায়। আহত পাঁচুবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমরা সাতে পাঁচে না থাকতে চাওয়া সাধারণ মানুষ। কিন্তু এ ভাবেই আমরা রাজনীতির বলি হয়ে যাচ্ছি।’’
তবে পাঁচুবাবুর গুলিবিদ্ধ হওয়া নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং সারা দিনই গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে এ রকম সশস্ত্র বাইকবাহিনী। তাদের দাপটে সাধারণ মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। বস্তুত, এ দিন ভোট শুরু হওয়া মাত্রই টিটাগড়ের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে একের পর এক বুথ দখল ও ছাপ্পা ভোট, বিরোধী দলের এজেন্টদের মারধরের অভিযোগ আসতে শুরু করে। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি থেকেও বেশি অভিযোগ তোলেন টিটাগড়ের বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের অন্যতম মাথা মনীশ শুক্ল ও তাঁর দলবল।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, এ দিন সকাল সাড়ে ৭টার সময় ৭ নম্বর ওয়ার্ডে একটি স্কুলের বুথ থেকে শুরু হয় গোলমাল। সেখানে নির্দল প্রার্থী মনীশের এজেন্টকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। বুথটিও দখল করা হয় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে আধ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিটি রোড অবরোধ করেন মনীশের সমর্থকেরা। পরে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে অবরোধ তুলে দেয়। এই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই ৭ নম্বর ওয়ার্ডের টিটাগড় পুরসভার বুথের সামনে বোমা ও গুলি চলতে শুরু করে। ৪, ৫, ৬, ৭ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে কয়েক রাউন্ড গুলি এবং মুড়িমুড়কির মতো বোমাবাজি হয়। এমনকী পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই মিনিট পনেরো ধরে বোমাবাজি করে দুষ্কৃতীরা।
এর মধ্যে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে তিনটি বুথে ইভিএম মেশিনগুলি ভেঙে ফেলে একদল দুষ্কৃতী। ভোট বন্ধ হয়ে যায় সেখানে। বোমাবাজি হয় টিটাগড়ে তৃণমূল চেয়ারম্যান প্রশান্ত চৌধুরীর দলীয় অফিসেও। এখানে অভিযোগের তির নির্দল প্রার্থী মনীশের দিকে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে মনীশের পাল্টা দাবি, টিটাগড়ের মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি তৃণমূল-ই। তবে দুপুরে এক সময়ে এই উত্তেজনাও হার মানে ভূমিকম্পের দুলুনির কাছে। সেই আতঙ্ক গ্রাস করে যুযুধান দু’পক্ষকেই।
তবে স্রেফ টিটাগড় নয়, বারাকপুর ও উত্তর বারাকপুর পুরসভাতেও শাসক দলের বিরুদ্ধে বুথ দখল, মারধর, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল বাঁচাও কমিটি (নির্দল) থেকে শুরু করে অন্যান্য বিরোধীদলও। তৃণমূল কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে তাঁদের দাবি। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। তবে সকালে ভোটের লাইনে সাধারণ মানুষকে দেখা গেলেও গোলমাল বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষকে আর সে ভাবে বুথমুখী হতে দেখা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy