সাইকেলই সাথী। নিজস্ব চিত্র
বয়স সত্তর। এই বয়সে একশো-দুশো কিলোমিটার সাইকেলে পাড়ি দেওয়া তাঁর কাছে যেন অতি সহজ এক কাজ।
ইতিমধ্যেই তিনি চল্লিশবার সাইকেল চালিয়ে ফুরফুরা শরিফে, একুশবার বাকুলা শরিফে গিয়েছেন। এখনও মাঝে-মধ্যে সাইকেল নিয়ে চলে যান ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থানে।
বসিরহাটের নলকোড়া গ্রামে বাড়ি তাঁর। নাম আবুল বাশার মণ্ডল। অর্থাভাবে বেশি দূর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। দর্জির কাজ করে কোনও রকমে দিন গুজরান করেন। আবুলের তিন ছেলে, এক মেয়ে। সকলেই বিবাহিত। গ্রামের মোড়ে তাঁর বাঁশের কাঠামোর উপর ত্রিপল দিয়ে ছাওয়া ছোট্ট এক দোকানঘর। সেখানে বসে জামা-কাপড়, মশারি ইত্যাদি সেলাই করেন তিনি। স্ত্রী মেহেরুন্নেসাকে নিয়ে থাকেন ‘গীতাঞ্জলী’ আবাসন প্রকল্প থেকে পাওয়া ঘরে।
আবুল বলেন, ‘‘আমার তেমন অর্থবল নেই বলে গাড়ি ভাড়া করে তীর্থস্থানে যেতে পারি না। সাইকেলেই ভ্রমণ করি। ২০১০ এবং ২০১৫ সালে দু’বার অজমের শরিফ গিয়েছিলাম। ৪০ বার গিয়েছি ফুরফুরা শরিফে। ২১ বার বাকুলা শরিফে। আরামবাগের মায়াপুর দরবার শরিফেও বহুবার গিয়েছি।’’ কথা বলতে বলতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন আবুল। সেই অবস্থাতেই আরও জানান, ‘‘তরুণ প্রজন্ম যাতে আমার মতো বৃদ্ধকে সাইকেল চালিয়ে তীর্থভ্রমণ করতে দেখে মনে জোর পায় সে দিকটায় আমার লক্ষ থাকে। আমার শেষ ইচ্ছা, একটি বারের জন্য হলেও মক্কা-মদিনায় রসুল্লার দেশে যেন যেতে পারি।’’
পথে কখনও বিপদের মুখে পড়তে হয়নি?
বৃদ্ধের কথায়, সাইকেলের টিউব ফেটে যাওয়া থেকে আরম্ভ করে দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়া— ঘটেছে সবই। তবে একে বৃদ্ধ, তার উপর সাইকেল ছাড়া তাঁর কাছে বিশেষ কিছু না থাকায় দুষ্কৃতীরা তাঁকে অধিকাংশ সময়েই ছেড়ে দিয়েছে।
এলাকার বাসিন্দা সমাজসেবী হান্নান মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা ওঁকে দেখেছি বিভিন্ন জায়গায় সাইকেল নিয়ে ভ্রমণ করেন। এই বয়সে ওঁর দু’তিন শো কিলোমিটার সাইকেল চালানো দেখে আমরা অবাক হই।’’
আবুলের স্ত্রী মেহেরুন্নেসার কথায়, আমাকে বাড়িতে একা রেখে, এই বৃদ্ধ বয়সে সাইকেলে অজমের শরিফ, ফুরফুরা শরিফ, বাকুলা শরিফ, আরামবাগের মায়াপুর দরবার শরিফ, কখনও দিঘা-পুরী সহ বিভিন্ন জায়গায় চলে যান। ওঁর জন্য চিন্তা হয়। কিন্তু এই বয়সেও মানুষটার মনের জোর দেখে বাধা দিতে মন চায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy