Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
যশোর রোড দু’পাশে নজরদারির অভাব
Dengue

নয়ানজুলিতে ভেসে বেড়াচ্ছে মশার লার্ভা

কোথাও কচুরিপানা। কোথাও ভেসে রয়েছে প্লাস্টিক, আবর্জনা। যশোর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে নয়ানজুলিগলির এমনই অবস্থা। আর তাতেই মশার বাড়বাড়ন্ত।

মশার-চাষ: বিএসএফ ক্যাম্প মোড়ে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

মশার-চাষ: বিএসএফ ক্যাম্প মোড়ে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪২
Share: Save:

কোথাও কচুরিপানা। কোথাও ভেসে রয়েছে প্লাস্টিক, আবর্জনা। যশোর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে নয়ানজুলিগলির এমনই অবস্থা। আর তাতেই মশার বাড়বাড়ন্ত। গ্রামের ভিতরে যদি বা কোথাও কোথাও মশা মারা, জঙ্গল সাফ করার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে, জাতীয় সড়কের ধারে কারও নজরই পড়েনি।

কিন্তু জাতীয় সড়ক-লাগোয়া এলাকার অনেকেই জানালেন, মশার উপদ্রবে দিনের বেলাতেও টিঁকতে পারছেন না। যে কোনও সময়ে রোগ ছড়াতে পারে।

বনগাঁ থেকে গুমা— প্রায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যশোর রোডের নয়ানজুলি এখন ছোটবড় ডোবার আকার নিয়েছে। বৃষ্টির জল এখনও শুকোয়নি। মশার লার্ভা ভেসে বেড়াতে দেখা গেল অনেক জায়গায়। বাসিন্দারা জানালেন, নিকাশির কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই। ফলে রোদে জল শুকনো ছা়ড়া উপায় নেই। সংলগ্ন কৃষি জমিতেও জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে।

বনগাঁ ব্লকের মধ্য ছয়ঘরিয়া এলাকায় সড়কের দু’পাশে জল জমে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রবি দাসের বাড়ির সামনে দু’টি ডোবা। তাঁর বৌমা সোমা দাস বলেন, ‘‘এখানে মশার ভীষণ উপদ্রব। এখনও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মশা মারার তেল দেওয়া হয়নি। নিজেরা একদিন ব্লিচিং দিয়েছিলাম। তাতে কাজ হয়নি।’’ ওই এলাকায় রাস্তার উল্টো দিকে শান্তিপাড়া। সেখানেও রাস্তার পাশে জল। বাসিন্দারা জানান, ওই জল বের হওয়ার কোনও পথ নেই। স্থানীয় বিএসএফ ক্যাম্প মোড়ে ডোবার মধ্যে আবর্জনা পড়ে আছে।

বনগাঁর ১ নম্বর রেলগেট এলাকা ধরে হাবরার দিকে এগোলেই দেখা যাবে সড়কের দু’পাশে নয়ানজুলি অসংখ্য ডোবার পরিণত হয়েছে। বক্সিপল্লি, সিকদারপল্লি, কালুপুর, দোগাছিয়া, মণ্ডলপাড়া, চাঁদপাড়া গাইঘাটা, কলাসীমা, চোংদা, খোশদেলপুর, গুমা— সর্বত্র একই ছবি। নোংরা কালো জল। ডোবার পাশে ঝোপজঙ্গল। সে সবও দীর্ঘ দিন সাফাই হয় না।

গত বছর মণ্ডলপাড়া এলাকায় ডেঙ্গিতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল। সেখানেও মশা মারার তেল দেওয়া হয়নি বলে বাসিন্দারা জানালেন। স্থানীয় বাসিন্দা বঙ্কিম মণ্ডলের বাড়ির সামনে দু’টি ডোবা। কচুরিপানা ভর্তি। তাঁর কথায়, ‘‘জল শুকনোর অপেক্ষায় রয়েছি। তত দিন পর্যন্ত মশার কামড় খেতে হবে।’’ গাইঘাটার বাসিন্দারা জানান, মশা মারার তেল দেওয়া হয় না। আগাছাও সাফ করা হয় না।

অতীতে এই নয়ানজুলির জমা জল বেরিয়ে যেত। এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম ছিল নয়ানজুলিগুলি। কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না। বাসিন্দারা জানান, বেআইনি ভাবে ওই নয়ানজুলি ভরাট করে মাটি ফেলে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। তা ছাড়া, ট্রাক পার্কিং বা ছোটখাটো কারখানা গড়ে উঠেছে নয়ানজুলি ভরাট করে।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বনগাঁ মহকুমার সহকারী বাস্তুকার জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যশোর রোডের দু’পাশের নয়ানজুলিতে জমা জলে মশা জন্মালে তা মারার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পুরসভা ও পঞ্চায়েতের। আমাদের মশা মারার কোনও ব্যবস্থা নেই।’’ তবে নয়ানজুলি বেআইনি ভাবে ভরাটের বিষয়ে তাঁরা পদক্ষেপ করেন বা করছেন বলে জানিয়েছেন।

যশোর রোড সংলগ্ন কয়েকটি পঞ্চায়েত প্রধানেরা জানান, তাঁরা মূলত গ্রামের মধ্যে মশা মারার তেল স্প্রে করছেন। মশা মারার তেলের দাম প্রচুর। প্রশাসন থেকে তা পঞ্চায়েতগুলিকে দেওয়া হচ্ছে না। নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করতে হচ্ছে। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ জানিয়েছেন, এখন থেকে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে যশোর রোডের পাশের ডোবায় মশা মারার ব্যবস্থা করা হবে। হাবরার পুরপ্রধান নীলিমেশ দাসের দাবি, তাঁরা পুর এলাকার মধ্যে থাকা যশোর রোড সংলগ্ন এলাকাতেও মশা মারার কাজ করছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Mosquito Pond Larvae
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE