Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ভোট দিলে কি তৈরি হবে নদীবাঁধ, প্রশ্ন সুন্দরবনের 

ভোট আসে ভোট যায়, কিন্তু সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার নদীবাঁধের দুরাবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় না। দশ বছর আগে আয়লা দেখেছেন সুন্দরবনের মানুষ। দেখেছেন তার ভয়াবহতাও।

বাঁ দিকে, নদীবাঁধের পরিস্থিতি। ডান দিকে, হাল ফেরার অপেক্ষায় এলাকাবাসী। নিজস্ব চিত্র

বাঁ দিকে, নদীবাঁধের পরিস্থিতি। ডান দিকে, হাল ফেরার অপেক্ষায় এলাকাবাসী। নিজস্ব চিত্র

প্রসেনজিৎ সাহা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০২:৩৫
Share: Save:

ভোট দিলে কি আদৌ তৈরি হবে কংক্রিটের নদীবাঁধ? ভরা কোটাল কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের সময় আর ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে না তো—লোকসভা ভোটের আগে কার্যত এই সমস্ত প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা ও বাসন্তী ব্লকের নদীর পাড়ের বাসিন্দারা।

ভোট আসে ভোট যায়, কিন্তু সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার নদীবাঁধের দুরাবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় না। দশ বছর আগে আয়লা দেখেছেন সুন্দরবনের মানুষ। দেখেছেন তার ভয়াবহতাও। সেই কারণে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ফণীর পূর্বাভাস শুনে যথেষ্ট আতঙ্কিত হয়েছিলেন সুন্দরবনের মানুষজন। নদীর পাড়ের বাড়িঘর ছেড়ে ফণীর ভয়ে ফ্লাড সেন্টারগুলিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত এই ঘূর্ণিঝড় ফণী সুন্দরবনের বুকে আছড়ে না পড়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন এই বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন।

তবে এখনও প্রতিটা কোটালে যথেষ্ট আতঙ্কে দিন কাটান সুন্দরবনের সোনাখালি, পুরন্দর, ঝড়খালি, সাতজেলিয়া, রাঙাবেলিয়া, পাখিরালয়, পুঁইজালি এলাকার মানুষজন। এই সমস্ত এলাকায় বাঁধের অবস্থা খারাপ। কংক্রিটের বাঁধ তো দুরস্থান, মাটির তৈরি বাঁধের ও করুণ দশা। কোটালে বা অতি বর্ষায় নদীর জল বাড়লে তা কোথাও কোথাও উপচে গ্রামে ঢুকছে। কোথাও বাঁধ ভেঙে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ছে। সেই নোনা জলের জন্য বসতবাড়ি থেকে শুরু করে চাষের জমি, পুকুর সবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আয়লায় সুন্দরবনের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। প্রায় দশ কিলোমিটারের মতো বাঁধ ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। এরপর আয়লা বাঁধ নির্মাণের জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে ৫০৩২ কোটি টাকা তৎকালীন রাজ্য সরকার পেয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর থেকে সে ভাবে বাঁধ নির্মাণের কাজ হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ হলেও তার পরিমাণ খুবই সামান্য। তাই এখনও সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার বাঁধের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আর সেই কারণেই আয়লা বা ফণীর মতো ঘূর্ণিঝড়ের ভ্রুকুটি দেখা দিলেই আতঙ্কে থাকেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন।

ভোট দিয়ে আদৌ কোনও লাভ হবে কিনা সেই প্রশ্নই তুলেছেন এই সব এলাকার মানুষ। সুন্দরবনের পুরন্দর গ্রামের বাসিন্দা মহাদেব মণ্ডল, লক্ষ্মী গায়েনরা বলেন, “নদীর নোনা জল ঢুকে আমাদের জমিতে চাষ হচ্ছে না। ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনকী পানীয় জলও পাচ্ছি না। সব জায়গাতেই নোনা জল। আর বাঁধের যা অবস্থা কখন বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকে আবার সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সেই আশঙ্কাতেই আমাদের দিন কাটে।’’

তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘ভোট দিলে কি কংক্রিটের নদীবাঁধ আদৌ তৈরি হবে? আমরা কি আদৌ নিশ্চিন্তে থাকতে পারব?” ভোটের সময় রাজনৈতিক দলের নেতারা এসে নদীবাঁধ তৈরি, পানীয় জলের ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট সবকিছুই করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু ভোট মিটলে আর কারও খোঁজ মেলে না বলেও অভিযোগ তুলেছেন এই সমস্ত গ্রামের মানুষজন।

এবারে লোকসভা ভোটের প্রচারে বিদায়ী সাংসদ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিমা মণ্ডলের বিরুদ্ধে এই খারাপ নদীবাঁধকেই প্রচারের হাতিয়ার করেছেন বামপ্রার্থী সুভাষ নস্কর ও বিজেপি প্রার্থী অশোক কাণ্ডারী। সুন্দরবনে কংক্রিটের নদীবাঁধ তৈরির জন্য সাংসদ গত পাঁচ বছরে উদ্যোগী হয়নি বলেও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। যদিও এর পাল্টা হিসেবে গত ৩৪ বছরে কেন বামেরা সুন্দরবনের নদী বাঁধ তৈরি করতে পারেননি সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিমা মণ্ডল।

এ নিয়ে রাজনীতির তরজা চলতে থাকবে ঠিকই, কিন্তু আদৌ কি সুন্দরবনের মানুষের দুশ্চিন্তা দূর হবে? নদীর পাড়ে বিনিদ্র রজনী নয়, কবে একটু শান্তিতে ঘুমোতে পারবেন এই সব এলাকার মানুষজন— সেটাই কোটি টাকার প্রশ্ন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE