Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

পরিকাঠামোর অভাবেই মৃত্যু শ্রমিকের, মনে করছে পুলিশ

মাটি থেকে প্রায় একশো ফুট উপরে থাকা রোপওয়ে মেরামত করতে হলে শ্রমিকদের যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা উচিত, তার প্রায় কিছুই ছিল না রবিবার। যে কারণে অশোকনগরের মিলেনিয়াম সায়েন্স পার্কে বেঘোরে মারা গিয়েছেন এক শ্রমিক।

রবিবার এই রোপওয়েতেই দুর্ঘটনা ঘটে। নিজস্ব চিত্র।

রবিবার এই রোপওয়েতেই দুর্ঘটনা ঘটে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
অশোকনগর শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০৮
Share: Save:

মাটি থেকে প্রায় একশো ফুট উপরে থাকা রোপওয়ে মেরামত করতে হলে শ্রমিকদের যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা উচিত, তার প্রায় কিছুই ছিল না রবিবার। যে কারণে অশোকনগরের মিলেনিয়াম সায়েন্স পার্কে বেঘোরে মারা গিয়েছেন এক শ্রমিক।

ঘটনার তদন্ত নেমে এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা। পাশাপাশি ওই শ্রমিকের সঙ্গে আরও যে শ্রমিকেরা কাজ করছিলেন, তাঁরা রোপওয়ে সারানোর কাজে কতটা দক্ষ, তা নিয়েও তদন্তকারীদের সংশয় আছে।

অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা সূত্রে আবার দাবি করা হয়েছে, শিবু সাউ নামে যে শ্রমিক মারা গিয়েছেন, তিনি নিজেই বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে রোপওয়ে মেরামতির কাজ করায় আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল তাঁর। এমনটা পুলিশের একাংশেরও ধারণা।

প্রশ্ন উঠছে দমকল বাহিনীর পরিকাঠামো নিয়েও। কারণ, হাবরা ও বারাসত থেকে দমকলের ইঞ্জিন এলেও তাদের কাছে অত উঁচুতে ওঠার মতো মই ছিল না। বারাসতের দমকল কর্মীরা যে মই এনেছিলেন, সেটি মাত্র ৩০ ফুট উচ্চতার। ফলে উদ্ধার করতে অনেক দেরি হয়ে যায়। অশোকনগরে কোনও দমকল কেন্দ্র না থাকাটাও একটা সমস্যা। এই এলাকায় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে সেই হাবরা ও বারাসতের দমকলের উপরেই নির্ভর করতে হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সাতজন শ্রমিক রোপওয়ে মেরামত করছিলেন। উপরে উঠেছিলেন তিনজন শ্রমিক। নীচে ছিলেন চারজন। নীচ থেকে চারজন শ্রমিক কেব‌্ল তার দু’দিক থেকে টানছিলেন। সে সময়ে কোনও ভাবে উপরে কপিকলের মধ্যে থাকা শিবুর উরুতে ওই তার ঢুকে যায়। বাকি দুই শ্রমিক নামতে পারলেও শিবু নামতে পারেননি।

এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘ওই তার টানার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। কখনও তার আলগা করতে হয়। কখনও আবার টেনে ধরতে হয়। সময়ের সামান্য হেরফেরে বিপদ ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়ে থাকতে পারে।’’

রোপওয়ে সারাতে কলকাতার মিন্টো পার্কের ‘রোপওয়েজ অ্যান্ড রিসোর্স প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থার হয়ে এসেছিলেন শ্রমিকেরা। ওই সংস্থাই রোপওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ করে। এ বাবদ পুরসভা পার্কের আয়ের লভ্যাংশ দেয় তাদের।

ঘটনার পরে পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার থানায় ওই সংস্থার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছেন থানায়। তাঁর কথায়, ‘‘দমকল, পুলিশ ও পুরসভার কর্মীরা রোপওয়েতে ওঠার পথ দিয়ে অনেক পরিশ্রম করে কপিকল থেকে ওই শ্রমিককে উদ্ধার করেন।’’ মার্চ মাসের মধ্যে অশোকনগরে দমকলের নিজস্ব একটি স্টেশন চালু হয়ে যাবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন পুরপ্রধান।

রোপওয়েটি খারাপ থাকায় ১১ জানুয়ারি পুরসভার পক্ষ থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বছরে ওই সংস্থাকে পুরসভার পক্ষ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। টিকিট বিক্রির ৫০ শতাংশ টাকাও তাঁরা পায়। অভিযোগ, এরপরেও রোপওয়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ঢিলেমি ছিল। আর শ্রমিকদের কাজের জন্য নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়নি।

পুলিশের পক্ষ থেকে সোমবার সংস্থার প্রতিনিধিদের থানায় এসে তদন্তে সাহায্যের জন্য আসতে বলা হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ আসেননি বলে থানা সূত্রে জানানো হয়েছে। সংস্থার কারও সঙ্গে যোগাযোগও করা যায়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Millennium park Infrastructural negligence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE