ভাঙড়ের রাস্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। চলছে নাকা চেকিং। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
কাঁঠালিয়া ঢোকার মুখেই পুলিশের ব্যারিকেড। রাস্তাঘাট প্রায় সুনসান। লোকজন নেই বললেই চলে। গোটা এলাকা থমথমে। দোকানপাট সবই প্রায় বন্ধ। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীও। চলছে পুলিশের নাকা চেকিং, গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি। ভাঙড় জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে যে! এ সবের মধ্যেই ঝাঁপ খোলা একটি মিষ্টির দোকানের। শোকেসে মিষ্টির ভাঁড়ারও ‘বাড়ন্ত’। একটা ট্রে-তে পড়ে রয়েছে কিছুটা বোঁদে। এই অশান্তির মধ্যেও দোকান খুলেছেন! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকানি বলছেন, ‘‘খুললাম। কী আর করব!’’
মঙ্গলবার পঞ্চায়েতের ভোটগণনার রাত থেকেই ফের অশান্ত হয়ে ওঠে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। কাশীপুর, ভাঙড় এবং ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানা নিয়ে ভাঙড় বিধানসভা। পুলিশ-প্রশাসন প্রথম দু’টি থানা এলাকাতেই ১৪৪ ধারা জারি করেছে। তার মধ্যে কাশীপুর থানার অন্তর্গত কাঁঠালিয়া যেন একটু বেশিই আঁটসাঁট। মঙ্গলবার রাতে এই কাঁঠালিয়ার স্কুলের গণনাকেন্দ্রেই তৈরি হয় উত্তেজনা। রাতভর পুলিশের সঙ্গে আইএসএফ কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তার পরেই বুধবার সকালে কাঁঠালিয়া ঢোকার মুখে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। ভাঙড় ঢুকতেই চোখে পড়ল, এ রাজ্যের সঙ্গে রয়েছেন ভিন্রাজ্যের পুলিশকর্মীরাও। রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারাও রয়েছেন সেখানে। সকালবেলাতেই ভাঙড় পৌঁছন রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সিদ্ধনাথ গুপ্ত। কাজ করছে বম্ব ডিজ়পোজ়াল স্কোয়াড। ইতিমধ্যে কাঁঠালিয়া স্কুলের আশপাশ থেকে ন’টি তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। কাশীপুর থানার পিছনে সেগুলি নিষ্ক্রিয় করেছে বম্ব ডিজ়পোজ়াল স্কোয়াড। স্কুলের পাশে একটি লাইটপোস্টে বোমা ফাটার দাগ এখনও স্পষ্ট।
স্থানীয়েরা জানাচ্ছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে একের পর এক বোমা ফাটতে শুরু করে ভাঙড়ে। গণনাকে কেন্দ্র করে কাঁঠালিয়ায় পুলিশ এবং রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই স্থানীয়েরা প্রচণ্ড আতঙ্কে। স্কুলের ঠিক পাশের বাড়ি ‘স্মৃতি ভবন’-এর গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সেই আতঙ্কের অনেকটাই আঁচ পাওয়া গেল। রাত গড়িয়ে দুপুর, ভয়টা এখনও কাটেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই এক মহিলা জানালেন, তাঁর স্বামীর ডায়লিসিস চলছে। গত কাল থেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। পুলিশ অশান্তির সময় বার বার বাড়ির ভিতরে থাকতে বলেছিল। তাঁরা ঘরের সব দরজা বন্ধ করে ভিতরের ঘরে চলে গিয়েছিলেন। যদিও এ সব নিয়ে ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে চাননি তিনি। ক্যামেরা চালু করতেই শুধু বললেন, ‘‘আমি তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!’’
১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে ভাঙড়ে। তার মধ্যে তৃণমূলের দখলে এসেছে ১৮টি। আইএসএফ এবং জমিরক্ষা কমিটির জোট পেয়েছে একটি মাত্র পঞ্চায়েত। গন্ডগোলের সূত্রপাত এই ভোটগণনা নিয়ে। আইএসএফ নেত্রী রেশমা খাতুনের অভিযোগ, তাঁদের জেলা পরিষদের এক প্রার্থী জাহানারা খাতুন পাঁচ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বিডিও জানান, জাহানারা ৩৬০ ভোটে হেরে গিয়েছেন। আইএসএফ নেতৃত্বের দাবি, প্রশাসনের সঙ্গে ‘সেটিং’ করেছে তৃণমূল। তাঁরা পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলেন। যদিও তৃণমূল এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। এর পরেই সংঘর্ষ শুরু হয় ভাঙড়ে।
পুলিশের অভিযোগ, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকেরা তাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এলাকায় একের পর এক বিস্ফোরণ হয়। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েছে। রাবার বুলেটও চালায়। আইএসএফের যদিও অভিযোগ, পুলিশ গুলি চালিয়েছে। তাতে তাদের বেশ কয়েক জন কর্মী আহত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে দুই কর্মীর। মৃত আইএসএফ কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন হাসান আলি নামে বছর ছাব্বিশের এক কর্মীর। রাজু মোল্লা নামে আরও এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ৩৫ বছরের রাজুর দেহ উদ্ধার হয়েছে ভাঙড়-২ ব্লক এলাকায়। তাঁর পরিবারের দাবি, তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।
এ সব নিয়ে ভাঙড়ের সাধারণ মানুষ যদিও মুখ খুলতে নারাজ। কথায় কথায় দিন-রাতের ঘটনার কথা উল্লেখ করলেও প্রকাশ্যে বা ক্যামেরার সামনে তাঁরা হয় একেবারেই নীরব, নয়তো বলছেন, ‘‘কিছুই জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy