নিজস্ব চিত্র।
পেট্রাপোল সীমান্তে পৌঁছনোর আগে বনগাঁর মিলন পল্লি মাঠের পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পণ্য-পরিবহণকারী ট্রাকের পার্কিং চার্জ দিন প্রতি ৮০ টাকা থেকে একলাফে বেড়ে ৮০০ টাকা হওয়ায় ক্ষুব্ধ রফতানিকারক সংস্থার মালিকেরা। পার্কিং চার্জ কমানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার অবস্থান-বিক্ষোভ করেন তাঁরা। দিনের পর দিন পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় বহু ট্রাকের পার্কিং বিল ছুঁয়েছে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। এই পরিমাণ টাকা দেওয়ার সামর্থ্য না-থাকায় শুক্রবার কোনও গাড়িই বার হল না পার্কিং থেকে। রাজ্য সরকারের এই পার্কিং চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের জেরেই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপি-র।
বনগাঁ শহরের উপর দিয়ে এশিয়ার বৃহত্তম স্থল-বন্দর পেট্রাপোলে পৌঁছনোর ছাড়পত্র দেওয়া হয় ওই মিলন পল্লি মাঠের পার্কিং থেকেই। এত কাল এই কারবার দেখত বনগাঁ পুরসভা। সম্প্রতি ওই পার্কিং অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতর। তার পরেই পার্কিং চার্জে বদল এনে জারি করা হয় নয়া নির্দেশিকা। ওই নির্দেশিকায় পার্কিং চার্জ দিনের হিসেবে ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০০ হয়ে গিয়েছে। ট্রাকভেদে কোথাও কোথাও তা ৯৬০ টাকা থেকে এক হাজার টাকাও হয়েছে। রফতানিকারক সংস্থার মালিকদের বক্তব্য, কোনও পণ্যবাহী ট্রাক মিলন পল্লি মাঠে এলেই তো তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। অন্তত ৩০-৩৫ দিন পার্কিংয়ে গাড়ি আটকে থাকে। তার পর মেলে ছাড়পত্র। আগে যেখানে পার্কিংয়ের জন্য সব মিলিয়ে ২ হাজার ৪০০ টাকা মতো গুনতে হত, সেখানে এখন দিতে হচ্ছে ২৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা!
পেট্রাপোল এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট মেনটেন্যান্স কমিটির সদস্য অসীম সেন বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের যে আধিকারিকেরা এই নির্দেশিকা জারি করেছেন, তাঁরা হয়তো জানেন না, এখানে কোনও কোনও ট্রাক ৪০-৪৫ দিনও দাঁড়িয়ে থাকে। গত কাল (বৃহস্পতিবার) কালীতলা (মিলন পল্লি মাঠ) পার্কিং থেকে কোনও গাড়ি বার করা যায়নি। কারণ, কারও কাছে এত টাকা ছিল না। এত দিন কোভিডের কারণে এমনিতেই ব্যবসার অবস্থা খারাপ। তার মধ্যে পার্কিংয়ের জন্য এত টাকা কি দেওয়া সম্ভব?’’
রফতানিকারক সংস্থার মালিকদের আরও দাবি, শুধু পেট্রাপোলে যাওয়ার জন্যই মোটা টাকা দিতে হচ্ছে। ঘোজাডাঙা হিলির মতো অন্য সীমান্তে যাওয়ার জন্য পার্কিং চার্জ বাড়ানো হয়নি। তাঁদের হুঁশিয়ারি, রাজ্য পরিবহণ দফতর যদি পার্কিং চার্জ না কমায়, তা হলে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে তাঁরা পণ্য রফতানি করবেন না। অন্য সীমান্তে চলে যাবেন। নয়তো জাহাজ বা রেলে পণ্য পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।
পার্কিং চার্জ কমানোর দাবিতে জেলাশাসকের দফতরেও দরবার করেছেন রফতানিকারক সংস্থার মালিকেরা। বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে। জেলাশাসকের দফতর সূত্রে খবর, পার্কিং চার্জ বাড়ানো হলেও পেট্রাপোলে যাওয়ার ছাড়পত্র যাতে এক-দেড় মাসের পরিবর্তে দু’-তিন দিনের মধ্যেই পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থাই করছে রাজ্য সরকার। এতে মেরেকেটে ওই আগের পরিমাণ টাকাই লাগবে পার্কিংয়ের জন্য। পাল্টা দাবি, রাজ্য সরকার যদি দু’-তিন দিনের মধ্যে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ভাবে, তা কার্যত অসম্ভব। কারণ, তার জন্য যশোর রোডের রাস্তা যতটা চওড়া হওয়া বাঞ্ছনীয়, বাস্তবে তা নয়। ফলত, দিনের সংখ্যা কমে দশ হলেও আগের তুলনায় সেই মোটা টাকাই গুণতে হবে রফতানিকারণ সংস্থার মালিকদের।
পার্কিং চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিজেপি-র বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘বনগাঁর অর্থনীতি সীমান্ত-বাণিজ্যের উপর নির্ভর করে। সেখানে এত টাকা পার্কিং চার্জ! কেউ দিতে পারে নাকি! রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে বনগাঁ ব্যবসায়ীদের।’’
তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নায়ারণ ঘোষ বলেন, ‘‘ঘটনাটা শুনেছি। দলের শীর্ষনেতৃত্বকে আমি জানাব। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy