হাশেম আলি মণ্ডল।
অনেকটা সিনেমায় যেমন হয়!
ধাবমান ট্রেনের সামনে লিকপিকে হাতে লাঠিটা প্রাণপণে উঁচিয়ে ধরেছিল ছেলেটি। লাঠির মাথায় এক চিলতে লাল কাপড়। দূর থেকে এই দৃশ্যটা চোখে পড়তেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে লোকাল ট্রেনের চালকের। যা বোঝার বুঝে নেন তিনি।
কালিকাপুর স্টেশনে ঢোকার মুখে অতঃপর শেষ মুহূর্তে ব্রেক কষে কোনওমতে ট্রেন থামান তিনি। রেলকর্মীরা ছুট্টে নীচে নেমে দেখেন, রেললাইনে দুই থেকে আড়াই ইঞ্চির ফাঁক। শিশুটির তৎপরতা এবং উপস্থিত বুদ্ধির জেরেই প্রাণে বেঁচে যান শ’খানেক ট্রেনযাত্রী। অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় আপ ক্যানিং লোকাল। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার চম্পাহাটি এবং কালিকাপুর স্টেশনের মধ্যে।
রেল ও স্থানীয় সূত্রে খবর, কালিকাপুর স্টেশনের ধারে ঝুপড়িবাসী বালকের নাম হাশেম আলি মণ্ডল। থাকে মা ও দিদির সঙ্গে। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার স্কুলেও যায় চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্র। এ দিন সকালে স্কুলে যাওয়ার পথেই হাশেমের চোখে পড়ে যায়, রেললাইনে বিপজ্জনক ‘হাঁ’। মুহূর্তের মধ্যে সে বুঝতে পারে, ট্রেন চলে এলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দেরি করেনি হাশেম। এক ছুটে বাড়ি গিয়ে দিদি মানকুরা খাতুনকে পুরো ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে মানকুরাই ভাইকে বুদ্ধি দেয়। এক টুকরো লাল কাপড় ভাইকে দিয়ে বলে, সে যেন ট্রেন ঢোকার মুখে কাপড়টা লাঠিতে বেঁধে নাড়াতে থাকে।
রেললাইনের সেই ফাটল। মঙ্গলবার।
লোকাল ট্রেনের চালকের কাছ থেকে পুলিশ জেনেছে, দিদি যা বলেছিল, হাশেম ঠিক তা-ই করেছিল। যত ক্ষণ না চালক দেখতে পেয়েছেন, সে লাঠি নাড়িয়ে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, চালক ফাটল থেকে খানিকটা দূরে ট্রেন থামিয়ে সব দেখেশুনে কন্ট্রোলরুমে খবর দেন। পুলিশ এক বাক্যে মানছে, ছেলেটি না-থাকলে মারাত্মক বিপদ হতে পারত। পরে রেলকর্মীরা এসে লাইনের ফাটল মেরামত করেন।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনার জেরে কোনও লোকাল ট্রেন বাতিল করতে না হলেও প্রায় মিনিট চল্লিশ ওই শাখায় ট্রেন চলাচল ছিল অনিয়মিত। কিছু ট্রেন অনেক দেরিতে চলেছে। তবে নিত্যযাত্রীরা যে প্রাণে বেঁচেছেন, তাতেই নিশ্চিন্ত রেল কর্তৃপক্ষ। সে জন্য ‘বালকবীর’ হাশেমকেই অবশ্য তাঁরা পুরো কৃতিত্ব দিচ্ছেন। হাশেম অবশ্য অতশত বোঝে না। সে শুধু হাসিমুখে বলছে, “এ তো আমি হামেশাই দেখতে পাই, রেললাইনে লাল কাপড় বাঁধা লাঠি বসিয়ে কাজ হচ্ছে। দিদির কথা শুনে তাই আর দেরি করিনি!”
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy