Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

শুভদৃষ্টি ছাড়া চার হাত এক হল দৃষ্টিহীন দম্পতির

শুভদৃষ্টি হল না। কিন্তু মনের দৃষ্টিতেই বিয়ে হল ওঁদের। রবিবার সন্ধ্যায় দৃষ্টিহীন দু’টি মানুষের বিয়ের সাক্ষী রইল ভাঙড়। 

নবদম্পতি: বিবাহ বন্ধনে বাঁধা পড়লেন সঞ্জীব-অঞ্জলি। নিজস্ব চিত্র

নবদম্পতি: বিবাহ বন্ধনে বাঁধা পড়লেন সঞ্জীব-অঞ্জলি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভাঙড় শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৩০
Share: Save:

শুভদৃষ্টি হল না। কিন্তু মনের দৃষ্টিতেই বিয়ে হল ওঁদের। রবিবার সন্ধ্যায় দৃষ্টিহীন দু’টি মানুষের বিয়ের সাক্ষী রইল ভাঙড়।

অনেকটা বলিউডের সিনেমা ‘কাবিল’ এর মতো। যেখানে ছবির নায়িকা ইয়ামি গৌতম ছিলেন অন্ধ। ছোটদের স্কুলে মিউজিক শেখাতেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় দৃষ্টিহীন ঋত্বিক রোশনের। ভালবেসে বিয়ে করেন তাঁরা। রুপালি পর্দার এই বাস্তব প্রতিচ্ছবি দেখা গেল ভাঙড়ের জাগুলগাছিতে।

সেখানে একটি আবাসিক ব্লাইন্ড স্কুলে পড়ান সঞ্জীব মণ্ডল। সেই স্কুলেই ছোটদের গানের দিদিমণি অঞ্জলি লোহার। এক সময়ে অঞ্জলি সঞ্জীবেরই ছাত্রী ছিলেন। শিক্ষকতা সূত্রে ফের তাঁদের দেখা হয়। সম্পর্ক তৈরি হয়। পাঁচ বছরের সেই সম্পর্ক স্বীকৃতি পেল রবিবার সন্ধ্যায়। হোম কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এক হল চার হাত। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন ভাঙড় ১ বিডিও সৌগত পাত্র ও ব্লাইন্ড অ্যাকাডেমির সহকর্মী ও পড়ুয়ারা। হোমের ৩২ জন পড়ুয়া-সহ হাজির ছিলেন প্রায় ২০০ জন। মেনুতে ছিল ফুচকা, কেক, মোমো, ইডলি, ধোসা, ফ্রাইড রাইস, আলুর দম, পনির, মিষ্টি। বিডিও বলেন, ‘‘জীবনে অনেক বিয়ের সাক্ষী থেকেছি। কিন্তু এমন একটি বিয়েতে উপস্থিত থেকে ভাল লাগছে। ওঁদের সুন্দর দাম্পত্য জীবন ও সাফল্য কামনা করছি।’’

বছর তেত্রিশের সঞ্জীবের বাড়ি জীবনতলা থানার মল্লিকহাটি গ্রামে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সঞ্জীব জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। বাবা গোপাল চাষের কাজ করেন। মা গীতা সংসার সামলান। ছোট থেকেই নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের একটি ব্লাইন্ড অ্যাকাডেমিতে বেড়ে ওঠা সঞ্জীবের।

২০১৪ সালে ভাঙড়ের জাগুলগাছিতে একটি হোমে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন তিনি। সেখানেই ২০১৩ সাল থেকে ছাত্রী হিসাবে পড়াশোনা করছিলেন অঞ্জলি। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া থানার মাকালগাছিতে। পরে ওই হোমেই গান শেখাতে শুরু করেন বছর সাতাশের তরুণী।

অঞ্জলি বলেন, ‘‘প্রিয় মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসাবে কাছে পেয়েছি। এর থেকে আর আনন্দের কিছু হয় না।’’ পাত্রের কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, বিয়ে করে অন্যকে বিপদের মধ্যে ফেলব না। কিন্তু অঞ্জলির সঙ্গে আলাপ হওয়ার পরে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি।’’

ব্লাইন্ড স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বিজু নায়ের বলেন, ‘‘যখন জানতে পারি সঞ্জীব ও অঞ্জলি একে অন্যকে ভালবাসেন, সংসার করতে চান, তখন ঠিক করি ওঁদের বিয়ে দেব। হোমে ওঁদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। ওঁরা যত দিন চাইবেন, এখানে শিক্ষকতা করবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Visually Impaired Blind School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy