Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

শিক্ষকের মৃত্যু, বন্ধ ৬৫ স্কুল

বিরোধীরা বন্‌ধ ডাকলেও শিক্ষকদের স্কুলে হাজিরা বাধ্যতামূলক করেছে তৃণমূল সরকার। কিন্তু এক শিক্ষকের মৃত্যুতে শুক্রবার মথুরাপুর-২ ব্লকের দক্ষিণ চক্রের প্রায় ৬৫টি প্রাথমিক স্কুল বন্ধ রাখার ফরমান জারি করার অভিযোগ উঠল সেই শাসকদলেরই শিক্ষা সেলের বিরুদ্ধে!

দিলীপ নস্কর
রায়দিঘি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৭ ০২:২৪
Share: Save:

বিরোধীরা বন্‌ধ ডাকলেও শিক্ষকদের স্কুলে হাজিরা বাধ্যতামূলক করেছে তৃণমূল সরকার। কিন্তু এক শিক্ষকের মৃত্যুতে শুক্রবার মথুরাপুর-২ ব্লকের দক্ষিণ চক্রের প্রায় ৬৫টি প্রাথমিক স্কুল বন্ধ রাখার ফরমান জারি করার অভিযোগ উঠল সেই শাসকদলেরই শিক্ষা সেলের বিরুদ্ধে!

এই ‘ছুটি’র জেরে কোনও স্কুলের মিড-ডে মিল নষ্ট হল। কোনও স্কুলে এসেও ফিরে যেতে হল পড়ুয়াদের। কোনও স্কুলে শুধু প্রার্থনাটুকুই সারা হল। সব মিলিয়ে গোটা ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অভিভাবকেরা। তাঁদের অভিযোগ, কোনও স্কুলের শিক্ষক মারা গেলে শ্রদ্ধা জানাতে সেই স্কুল ছুটি দিতেই পারে। তা বলে ৬৫টি স্কুল ছুটি!

চমকে গিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান ঘনশ্রী বাগও। তিনি বলেন, ‘‘এমনটা হয় নাকি! যে স্কুলের শিক্ষক মারা গিয়েছেন, সেই স্কুল বন্ধ থাকতে পারে। আমি জেলা স্কুল পরিদর্শক এবং ওই চক্রের পরিদর্শককে বলেছি, বন্ধ স্কুলের তালিকা তৈরি করে পাঠাতে।’’ জেলা স্কুল পরিদর্শক উদয়ন ভৌমিকও বলেন, ‘‘এক স্কুলের শিক্ষক মারা গেলে অন্য স্কুল ছুটি থাকবে, এমন কোনও নিয়ম নেই।’’

তবে, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষা সেলের ওই চক্রের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর প্রামাণিক দাবি করেছেন, ‘‘এক শিক্ষকের মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতে আমরা বলেছিলাম কেবলমাত্র খাড়ি পঞ্চায়েতের সব প্রাথমিক স্কুল প্রার্থনার পর বন্ধ রাখা হয়েছিল। অন্য পঞ্চায়েতে স্কুল বন্ধের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’’

যে শিক্ষকের মৃত্যুতে এ দিন এত স্কুল বন্ধ হল, বছর চল্লিশের সেই মনমোহন মণ্ডল খাড়ি পঞ্চায়েতের মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। ওই পঞ্চায়েতেরই ফুলবাগিচা স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে হৃদরোগে তিনি মারা যান। তার পরে এ দিন সকালে ওই পঞ্চায়েতের ১১টি প্রাথমিক তো বটেই, আশপাশের কয়েকটি পঞ্চায়েতের প্রায় সব স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা অন্য শিক্ষকদের মোবাইলে এসএমএস যায়, ‘মনমোহনবাবুর অকালমৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানাতে ওই চক্রের সব প্রাথমিক স্কুল বন্ধ থাকবে’।

তার পরেই শোরগোল পড়ে যায়। এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ খাঁড়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল তালা ঝুলছে। একই অবস্থা কৌতলা নিম্ন বুনিয়াদি-সহ আরও কয়েকটি স্কুলে। খাঁড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুমন মাল বল‌েন, ‘‘আমাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা মিড-ডে মিল রান্না করেন। এ দিন বাজার হয়ে যাওয়ার পরে জানতে পারি স্কুল বন্ধ রাখার ওই নির্দেশের কথা।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি প্রাথমিকের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘অন্য স্কুলের শিক্ষক মারা গেলে আমাদের কেন স্কুল বন্ধ রাখতে বলা হল, এর ব্যাখা নেই। ১৫ মার্চ দুপুরে মৃত শিক্ষকের শোক-জ্ঞাপনের জন্য ওই চক্রের স্কুল পরিদর্শকের অফিসেও সব শিক্ষককে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ ওই চক্রের স্কুল পরিদর্শক রথীন রায়ের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

অভিভাবকেরা বলছেন, এমন ঘটনা বেনজির।

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Death Primary Schools
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE