Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ধুঁকতে থাকা শিল্পই ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে

‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ সিনেমাটা দেখেননি, শ্যামনগরের আদি বাসিন্দাদের মধ্যে এমন মানুষ কমই আছেন। অ্যান্টনি কবিয়ালের বাণিজ্যের যাত্রা শুরু হয়েছিল শ্যামনগরের মাটি থেকেই। ইতিহাস বলে, নুন তৈরির কারখানা ছিল তাঁর। একসময়ে শ্যামনগরে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল নদীপথ।

মূলাজোড় পাওয়ার স্টেশন এখন স্তব্ধ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

মূলাজোড় পাওয়ার স্টেশন এখন স্তব্ধ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

বিতান ভট্টাচার্য
শ্যামনগর শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৬
Share: Save:

‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ সিনেমাটা দেখেননি, শ্যামনগরের আদি বাসিন্দাদের মধ্যে এমন মানুষ কমই আছেন। অ্যান্টনি কবিয়ালের বাণিজ্যের যাত্রা শুরু হয়েছিল শ্যামনগরের মাটি থেকেই। ইতিহাস বলে, নুন তৈরির কারখানা ছিল তাঁর। একসময়ে শ্যামনগরে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল নদীপথ। পথ ঘাট সুগম ছিল না। রেলপথ চালু হওয়ার পরেই কার্যত শ্যামনগরের সঙ্গে যোগাযোগটা অনেক মসৃণ হয়েছিল শহর কলকাতার। আর সড়ক পথে ঘোষপাড়া রোড, যেটি শ্যামনগর শিল্পাঞ্চলের বুক চিরে গিয়েছে তার পুরোদস্তুর ব্যবহার শুরু হয়েছিল যখন শ্যামনগরে শিল্পের রমরমা ছিল।

ছোট্ট শহরে অসংখ্য কারখানা। আর এই কারখানাগুলোকে ঘিরেই তৈরি হয়েছিল এক ব্যস্ত জনপদ। স্বাধীনতার সময়ে শ্যামনগরের কুলিলাইনেও বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী বক্তৃতা দিতে এসেছেন। শ্যামনগরের কিছুটা অংশ পড়ে নোয়াপাড়া থানা এলাকায়। শ্রমিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে এসে ইংরেজ সরকারের পুলিশের হাতে বন্দি হয়ে এই থানাতেই কয়েক ঘন্টা আটক থাকতে হয়েছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সিইএসসি প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি তৈরি করে এই শ্যামনগরেরই। মূলাজোড় পাওয়ার স্টেশন নামে যেটি চিহ্নিত। বিশাল এলাকা জুড়ে গঙ্গার ধারে পাঁচিল ঘেরা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন অবশ্য ফসিলে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞান গবেষণার জন্য বসু বিজ্ঞান মন্দির গড়ে উঠেছিল। বহু কৃতী গবেষক নিয়মিত আসতেন এখানে। সেই বাড়িটিও সময়ের পরিবর্তনে চেহারা বদলেছে। গবেষণা আর নথিপত্র হারিয়ে গিয়েছে। হিন্দুস্থান লিভারের মতো বড় কোম্পানি শ্যামনগর ইউনিটটি এক সময়ে গোটা দেশের মধ্যে অন্যতম লাভজনক ছিল। বহু মানুষ চাকরি করতেন সেখানে। লোকসানের পথে হাঁটতে হাঁটতে সেটিও এখন বন্ধ। ডানবার মিল, রামস্বরূপ ইস্পাত কারখানা একে একে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কুলি লাইনগুলিতে পেটের টানে অসামাজিক কাজকর্ম বেড়েছে। যেনতেন উপায়ে বিকল্প আয়ের পথ বেছেছেন বাড়ির মহিলারাও।

চালু থাকার খাতায় নাম লেখালেও অন্নপূর্ণা কটন মিলের উৎপাদন বন্ধ। ধুঁকে ধুঁকে চলছে নিক্কো কোম্পানি। ওয়েভারলি চটকলটি শুধু মাঝারি মানের বস্তা উৎপাদনেই আটকে আছে বছরের পর বছর ধরে। ঠিকমতো চলার তালিকায় যে নামটি এখনও টিঁকে আছে, সেটি হল এক্সাইড ব্যাটারি।

শ্রমিকদের দাবি, কর্তৃপক্ষের অনীহাই শিল্পের এই হালের কারণ। আর বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, উপযুক্ত কর্মীর অভাবেই মুখ থুবড়ে পড়েছে উৎপাদন। কিন্তু আরও যে সমস্যাগুলি চোখে পড়ার মতো সেগুলি হল, কাজের বরাত ঠিকমতো না মেলায় দিনের পর দিন লোকসানে চলতে থাকা ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলিতে শ্রমিক ছাঁটাই, বেতন বৃদ্ধি না হওয়ায় শ্রমিকদেরও কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যাওয়া, যার ফলে গুণমানে খারাপ হতে থাকা, উৎপাদন বাজার ধরতে না পারা। এ সবের জেরেই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সব থেকে ছোট অথচ শিল্পের আঙ্গিকে সম্ভাবনাময় শ্যামনগরের অধিকাংশ শিল্প মার খাচ্ছে।

নিক্কো কারখানার এক আধিকারিক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘শিল্পকে ধরে রাখার যথেষ্ট সুযোগ আছে এখনও। ছোট্ট শহর হলেও এখন কলকাতা ও বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। এক সময়ে তো ভৌগলিক কারণেই এত কারখানা এখানে গড়ে উঠেছিল। বিভিন্ন কারণে কিছু বন্ধ হয়েছে, কিছু ধুঁকছে। কিন্তু সকলে মিলে উদ্যোগী হলে শ্যামনগরে এখনও শিল্পের জোয়ার আনা যায়।”

(শেষ)

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে
আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ
লিখুন ‘আমার শহর শ্যামনগর’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান:
www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’,
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভাগ,
জেলা দফতর, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal bitan bhattacharya shyamnagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE