Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

সিবিআই জেরা অসমের প্রাক্তন মন্ত্রীকে, নজরে তৃণমূলের মুখপত্র

সারদা তদন্তে এ বার সিবিআই নজরে তৃণমূলের মুখপত্রও। তদন্তকারীরা বলছেন, একটি সাপ্তাহিক-সহ অন্তত তিনটি মুখপত্র রয়েছে তৃণমূলের। যার মধ্যে একটির সম্পাদক তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সৃঞ্জয় বসুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর দৈনিক সংবাদপত্রের অফিসেই ওই মুখপত্রটি ছাপানো হতো বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। সিবিআই সূত্রের খবর, এই মুখপত্রগুলির সঙ্গে সারদার কিছু যোগাযোগ মিলেছে। সে ব্যাপারেই এখন সৃঞ্জয়বাবুকে জেরা করা হচ্ছে।

সিবিআইয়ের দফতরে অসমের প্রাক্তন মন্ত্রী অঞ্জন দত্ত। ছবি: শৌভিক দে

সিবিআইয়ের দফতরে অসমের প্রাক্তন মন্ত্রী অঞ্জন দত্ত। ছবি: শৌভিক দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩২
Share: Save:

সারদা তদন্তে এ বার সিবিআই নজরে তৃণমূলের মুখপত্রও। তদন্তকারীরা বলছেন, একটি সাপ্তাহিক-সহ অন্তত তিনটি মুখপত্র রয়েছে তৃণমূলের। যার মধ্যে একটির সম্পাদক তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সৃঞ্জয় বসুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর দৈনিক সংবাদপত্রের অফিসেই ওই মুখপত্রটি ছাপানো হতো বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। সিবিআই সূত্রের খবর, এই মুখপত্রগুলির সঙ্গে সারদার কিছু যোগাযোগ মিলেছে। সে ব্যাপারেই এখন সৃঞ্জয়বাবুকে জেরা করা হচ্ছে।

সারদা কেলেঙ্কারিতে এ রাজ্যের মতো অসমেরও একাধিক প্রভাবশালীর নাম জড়াচ্ছে। সারদা-তদন্তের গোড়া থেকেই অসমের দুই প্রাক্তন মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও অঞ্জন দত্তের নাম উঠেছে। সোমবার অঞ্জনবাবুকে কলকাতায় ডেকে জেরা করেন তদন্তকারীরা। এ দিন ডেকে পাঠানো হয়েছিল হিমন্তকেও। তিনি অবশ্য হাজির হননি। তবে তাঁর আইনজীবী কিছু তথ্য জমা দিয়েছেন বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

সারদা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের মুখপত্রের ভূমিকা কেন সিবিআই নজরে?

তদন্তকারীরা বলছেন, সৃঞ্জয়বাবুর সংস্থার সঙ্গে সারদার সংবাদমাধ্যমের একটি চুক্তি হয়েছিল। তাতে সারদার সংবাদমাধ্যমকে প্রযুক্তিগত সাহায্য দেওয়ার জন্য মাসিক ৬০ লক্ষ টাকা নেওয়ার কথা সৃঞ্জয়বাবু জানিয়েছেন। কিন্তু ওই চুক্তির বাইরে তৃণমূলের মুখপত্রের জন্য সারদার টাকা খরচ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে সৃঞ্জয়ের বক্তব্যে অনেক অসঙ্গতি পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এ বিষয়ে সৃঞ্জয়বাবুকে বারবার প্রশ্ন করেছেন সিবিআই অফিসারেরা।

তদন্তকারীরা বলছেন, সারদার সঙ্গে তৃণমূলের মুখপত্রের যোগ নিয়ে উত্তর এড়াননি ধৃত সাংসদ। তবে তিনি দায় চাপিয়েছেন সারদা কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষের ঘাড়ে। সিবিআই সূত্রের খবর, সৃঞ্জয়বাবুর অফিসে ওই মুখপত্র ছাপানো হলেও আর্থিক ও প্রকাশনার বিষয়টি কুণাল দেখতেন বলেই তিনি দাবি করেছেন।

তৃণমূলের মুখপত্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ইঙ্গিত শ্যামল সেন কমিশন ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দিয়েছিলেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন। তিনি দাবি করেছিলেন, তৃণমূলের স্লোগানের সঙ্গে মিল থাকা একটি মুখপত্রের পিছনে তাঁর সরাসরি আর্থিক সাহায্য ছিল। ওই পত্রিকার কপিরাইটের জন্য তিনি ৩৩ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। ঢাকুরিয়া এলাকায় পত্রিকা প্রকাশনার জন্য ঘর ভাড়াও করেছিলেন। সব মিলিয়ে ৪০ লক্ষ টাকার বেশি খরচ হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন সুদীপ্ত। সারদা কর্তা তদন্তকারীদের বলেছেন, ওই পত্রিকা মূলত চালাতেন মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ কয়েক জন সাংবাদিক। পত্রিকার প্রথম কপি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যেত। তিনি অনুমতি দিলে বাকি কপি ছাপানো হতো।

সারদা ও তৃণমূলের মুখপত্রের সম্পর্ক নিয়ে সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “এ বিষয়ে কুণাল ও সুদীপ্তকে আগে জেরা করা হয়েছিল। এখন সৃঞ্জয়কে জেরা করা হচ্ছে। বেশ কিছু সূত্র মিলেছে। সেগুলি দেখা হচ্ছে।”

তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, প্রশাসনের উপরে প্রভাব বিস্তার করতেই সারদার সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করতেন সুদীপ্ত। তদন্তকারীদের তিনি জানিয়েছেন, সেটা করতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে একাধিক কাগজ ও টিভি চ্যানেল কিনে ফেলেন এবং নানা ভাবে প্রতারিত হন। সুদীপ্তর দাবি, যাঁরা তাঁকে প্রতারিত করেছেন, তাঁদের মধ্যে অসমের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী অঞ্জন দত্তও রয়েছেন। অঞ্জনবাবুকে সংবাদপত্রের পরিকাঠামো ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৩ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন সারদা-কর্তা। অঞ্জনবাবুর পাল্টা অভিযোগ, তিনি এই মামলায় প্রতারক নয়, প্রতারিত। সারদা অর্থলগ্নি সংস্থা নয়, সারদা প্রিন্টার্স অ্যান্ড পাবলিশার্সের সঙ্গে সারদার একটি পত্রিকা ছাপার জন্য তাঁর চুক্তি হয়েছিল। অঞ্জনের দাবি, “এক সাংবাদিকের মাধ্যমে আমার সঙ্গে সুদীপ্তর আলাপ হয়। সারদা আমাকে ৫০ লক্ষ টাকার ৭টি চেক দিয়েছিল। সব ক’টি চেক বাউন্স করে!” তিনি সারদার থেকে কোনও গাড়ি-বাড়ি নেননি বলেও দাবি অঞ্জনবাবুর। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তলব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি বহু দিন ধরেই সিবিআইয়ের তলবের অপেক্ষায় ছিলাম। ভালই হয়েছে। তদন্ত হলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।”

অসমের প্রাক্তন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তের নামও সংবাদমাধ্যম ব্যবসা সূত্রেই সারদার সঙ্গে জড়িয়েছে। সুদীপ্তর অভিযোগ, হিমন্ত নগদ তিন কোটি টাকা নিয়েছেন। গত অগস্ট মাসে হিমন্তর দু’টি বাড়ি ও তাঁর স্ত্রীর মালিকানাধীন বৈদ্যুতিন চ্যানেলে সিবিআই তল্লাশি হয়। সিবিআই সূত্রের খবর, সারদা-কাণ্ডে ধৃত গায়ক সদানন্দ গগৈ হিমন্তের ঘনিষ্ঠ। গগৈ সারদার যে বিস্কুট কারখানার জন্য গান-বিজ্ঞাপন তৈরি করেছিলেন বলে দাবি করেছেন, তার উদ্বোধনে প্রধান অতিথি ছিলেন হিমন্ত। সারদা-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল অসম পুলিশের প্রাক্তন ডিজি শঙ্কর বরুয়ার বিরুদ্ধেও। পরে তিনি আত্মহত্যা করেন। তিনিও হিমন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে তদন্তকারীরা জানান।

এ দিন অবশ্য সুদীপ্তর অভিযোগ বা সিবিআই তলব নিয়ে মুখ খোলেননি হিমন্ত। তবে নিজের টুইটারে তিনি লিখেছেন, “আমি নিজের বিবেক ও মূল্যবোধের কাছে পরিষ্কার। আমি দোষ করিনি। এর আগেও এমন বহু পরিস্থিতির সামনে পড়েছি। সিবিআই তদন্তকে স্বাগত।” এ দিন হিমন্ত দাবি করেন, কংগ্রেস নেতা সি পি জোশীর সঙ্গে বৈঠক করতে দিল্লি গিয়েছেন তিনি। যদিও এমন কোনও বৈঠকের কথা তাঁর জানা নেই বলেই দাবি করেছেন জোশী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE