বিকাশ সূত্রধর
প্রথম বিবাহবার্ষিকী ছিল আজ, বৃহস্পতিবার। তার ঠিক আগের দিন ঝাড়খণ্ডে মাওবাদীদের বুলেট ঝাঁঝরা করে দিল বাঙালি ‘কোবরা’ জওয়ানকে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার ঘাটশিলা থানার চেকাম জঙ্গলে বুধবার সকালে মাওবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় যৌথ বাহিনীর। সেখানেই প্রাণ হারান বিকাশ সূত্রধর (২৭) নামে ওই জওয়ান। বাড়ি বীরভূমের পাড়ুই থানার বনশঙ্কা গ্রামে। পূর্ব সিংভূমের পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) শৈলেন্দ্র কুমার সিংহ জানান, গুলির লড়াইয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন ‘কোবরা’-র ডেপুটি কমান্ডান্ট অলোক কুমার। তিনি রাঁচির এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুপুর পর্যন্ত ওই এলাকায় সংঘর্ষ চলে।
পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে খবর আসে ওই জঙ্গল এলাকার গ্রামে মাওবাদীদের একটি বড় দল ঢুকেছে। মাওবাদীদের বেলপাহাড়ি স্কোয়াডের নেতা মদন মাহাতো, মাওবাদীদের মিলিটারি কমিশনের প্রথম সারির নেতা রঞ্জিত পাল এবং আকাশ ওরফে অসীম মণ্ডল (মাওবাদীদের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক) সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন বলেও যৌথ বাহিনী জানতে পারে। বুধবার ভোর থেকে শুরু হয় অভিযান। তাতে অংশ নেয় ঝাড়খণ্ডের সিআরপি, পূর্ব সিংভূম জেলা সশস্ত্র পুলিশ, কোবরা বাহিনী, সিআরপি-র ৬৯ ব্যাটেলিয়ন, সিআইএসএফ এবং ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ। ভোর ৫টা নাগাদ বাহিনী জঙ্গলে ঢোকার চেষ্টা করতেই মাওবাদীরা গুলি বর্ষণ শুরু করে। যৌথ বাহিনী প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি চালায়। সংঘর্ষের সময় গুলি লেগে দুই জওয়ান গুরুতর জখম হন। হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথেই বিকাশের মৃত্যু হয়। এলাকায় দু’টি তাজা ল্যান্ডমাইনও নিষ্ক্রিয় করা হয়।
তখনও ছেলের দেহ এসে পৌঁছয়নি। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন
ঝাড়খণ্ডে নিহত কোবরা জওয়ান বিকাশ সূত্রধরের মা মিনতি দেবী।
বুধবার সন্ধ্যায় পাড়ুইয়ের বনশঙ্কা গ্রামে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
এই ঘটনা চিন্তা বাড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের। বিশেষ করে, এ দিনের ঘটনাস্থল থেকে মাওবাদী প্রভাবিত পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলিয়াতোড় ও পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থানার দূরত্ব যখন ৫-৬ কিলোমিটার। ঝাড়খণ্ডের মাওবাদীরা ১৪-১৫ সেপ্টেম্বর বন্ধ ডেকেছিল। ঝাড়খণ্ড পুলিশ ও প্রশাসন তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়েছিল। তার ৪৮ ঘণ্টা পরেই এই ঘটনা। মাওবাদীদের কোন স্কোয়াড ওই জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল, তার খোঁজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ রাজ্যের পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত।
এ দিন দুপুরে দুঃসংবাদ প্রথম পান বিকাশের বাবা। তিনি বলেন, “মেদিনীপুর থেকে টোটনের (বিকাশের ডাকনাম) বন্ধু পরিচয়ে এক জন ফোনে জানায়, ছেলে পাহাড় থেকে পড়ে চোট পেয়েছে।” এর পরে ফোনে বৌমা ইতির কান্নার আওয়াজ শোনেন শরৎবাবু। তিনি বলেন, “তখনই অন্য রকমের আঁচ পাচ্ছিলাম। বিকেলে পাড়ুই থানা থেকে খবর এলে বুঝলাম, আমার আশঙ্কাই সত্যি!”
পুজোর ছুটিতে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। ফোনে বিকাশ বাবাকে বলেন, ক্যাম্প থেকে বাইরে কাজে গিয়েছেন। বুধবার ফিরে আসবেন।
সেই বুধবারই বিকাশ ফিরেছেন। তবে, কফিনবন্দি হয়ে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy