Advertisement
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Viral Video

লিঙ্গপরিচয় নিয়ে বিতর্ক, অলিম্পিক্সে সোনা জিতে অন্য রূপে ধরা দিলেন তরুণী বক্সার

মেয়েদের ৬৬ কেজি বক্সিং ফাইনালে সোনা ছিনিয়ে নিয়েছেন ইমানে খেলিফ। তার পর থেকেই ২৫ বছরের বক্সারকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক, সমালোচনা। জিনগত ভাবে পুরুষ হয়েও মহিলাদের ইভেন্টে নেমেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।

আলজেরিয়ার বক্সার ইমানে খেলিফ।

আলজেরিয়ার বক্সার ইমানে খেলিফ। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৪ ১৪:৫২
Share: Save:

পরনে ফ্লোরাল প্রিন্টের পোশাক। কানে ফুলের নকশা করা দুল, মুখে মেকআপ এবং গলায় জ্বলজ্বল করছে সোনার পদক। অলিম্পিক্সে মহিলা বক্সিংয়ে অংশগ্রহণ করে যে পদক জিতেছেন, তা-ই পরে থাকতে দেখা গিয়েছে আলজেরিয়ার বক্সার ইমানে খেলিফকে। সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে এমনই এক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে ইমানে এই সাজে ধরা দিয়েছেন (যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)

মেয়েদের ৬৬ কেজি বক্সিং ফাইনালে চিনের ইয়াং লিয়ুকে হারিয়ে কাঙ্ক্ষিত সোনা ছিনিয়ে নিয়েছেন ইমানে। তার পর থেকেই ২৫ বছরের বক্সারকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক, সমালোচনা। জিনগত ভাবে পুরুষ হয়েও মহিলাদের ইভেন্টে নেমেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ইমানের বিরুদ্ধে। সমাজমাধ্যমে আক্রমণের মুখে পড়েছেন তিনি। হ্যারি পটারের স্রষ্টা জেকে রাওলিং সমাজমাধ্যমে ইমানেকে কটাক্ষ করে লেখেন, ‘‘এক জন পুরুষ এক জন মহিলাকে মারছেন, বিনোদনের জন্য সেটা সকলের ঠিক মনে হবে? এই ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া হোক। এটা খেলা নয়। যে আয়োজকদের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে তাঁদের ধিক্কার। এ তো মহিলাদের উপর পুরুষদের শক্তি দেখানো।” ইংল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘এই পাগলামি কখন শেষ হবে? পুরুষ কখনও মহিলা হতে পারে না।”

যদিও ইমানে জানিয়ে দিয়েছেন, সমালোচকেরা তাঁকে যতই বিদ্রুপে বিদ্ধ করার চেষ্টা করুন, তিনি আর পাঁচজনের মতোই নারী। সেই সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে দেশে ফিরবেন তিনি। নারী হওয়ার পরেও যে ধরনের অশালীন মন্তব্য তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে, তা যেমন অনৈতিক, তেমনই অপরাধও বটে। তিনি বলেছেন, ‘‘ফাইনালে প্রায় ১৫ হাজার দর্শক আমার লড়াই দেখতে এসেছিলেন। তাঁরা শুরু থেকে আমার নামে জয়ধ্বনি করে গিয়েছেন। এটাই আমার কাছে বড় পাওনা। কিন্তু যে ভাবে আমাকে প্রত্যেকটা দিন সমাজমাধ্যমে কুৎসিত শব্দমালা উপহার দেওয়া হয়েছে, তা কোনও ভাবেই কাঙ্ক্ষিত ছিল না। অলিম্পিক্সে মহিলাদের এমন অপমান কী তবে এখন থেকে গ্রহণযোগ্য হতে চলেছে।’’

২০২৩ সালে দিল্লিতে হওয়া বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের প্রতিযোগিতা থেকে ইমানেকে বাদ দেওয়াও হয়েছিল। জানা গিয়েছিল ইমানের শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বেশি। কিন্তু প্যারিস অলিম্পিক্সে তিনি অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। ইমানের লিঙ্গপরীক্ষা করা হয়। সেখানে দেখা যায়, তাঁর শরীরে এক্সওয়াই ক্রোমোজ়োম রয়েছে, যা ছেলেদের শরীরে থাকে। বেশির ভাগ মেয়েদের শরীরে থাকে এক্সএক্স ক্রোমোজ়োম। আন্তর্জাতিক বক্সিং সংস্থার সভাপতি উমর ক্রেমলেভ এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘ইমানে মহিলা হওয়ার ভান করছেন। সতীর্থদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।’’ অলিম্পিক্স কমিটি জানিয়েছিল যে, খেলিফ খেলতে পারবেন। মুখপাত্র মার্ক অ্যাডামস মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘মেয়েদের খেলায় যাঁরা খেলতে নেমেছেন, তাঁরা সকলেই মহিলা। প্রত্যেকের পাসপোর্টে সেটাই লেখা রয়েছে। সেই কারণেই তাঁদের খেলতে দেওয়া হয়েছে। টোকিয়ো অলিম্পিক্সেও তাঁরা খেলেছিলেন। অনেক বছর ধরেই খেলছেন।”

অলিম্পিক্স কমিটির নিয়মেও বদল হয়েছে। তাদের নিয়ম অনুযায়ী, পুরুষ বা মহিলা নির্ধারণের জন্য টেস্টোস্টেরনের মাত্রা দেখা আবশ্যক নয়। খেলোয়াড়দের কোনও হরমোন পরীক্ষাও দিতে হয় না। অলিম্পিক্স কমিটির দাবি, টেস্টোস্টেরন বেশি হলেই কেউ বাড়তি সুবিধা পাবেন এমন নয়।

ইমানের শরীরে এক্সওয়াই ক্রোমোজ়োম এবং টেস্টোস্টেরনের উপস্থিতির ঘটনাকে খুবই দুর্লভ বলে দেখেছে অলিম্পিক্স কমিটি। কিন্তু এক্সওয়াই ক্রোমোজ়োম এবং টেস্টোস্টেরন যে মহিলাদের শরীরে থাকে, তাঁদের পেশির শক্তি বেশি হয়, হারের জোর বেশি হয়। অনেক তাড়াতাড়ি নড়াচড়া করতে পারেন তাঁরা। অনেকের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গ হয় পুরুষের মতো। বক্সিংয়ের মতো খেলায় যা প্রতিপক্ষের জন্য খুবই সাংঘাতিক হতে পারে। কিন্তু অলিম্পিক্স কমিটি এই ধরনের মহিলাদের বাদ দিতে রাজি নয়। তারা বলছে, এক জন মহিলাকে তখনই বাদ দেওয়া হবে যখন নিরাপত্তার অভাব দেখা দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE