Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Puja 2024 Special

বেড়ানো-পুজো দেখা দুই-ই হবে, কলকাতা থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টা দূরে ঘুরে আসুন ধান্যকুড়িয়া থেকে

পুজো মানেই ছুটি, হুল্লোড়, সকলে মিলে বেড়াতে যাওয়া। কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে গিয়ে সে দিনই ফিরে আসবেন? আনন্দবাজার অনলাইনে রইল এমনই কয়েকটি চেনা-অচেনা ঠিকানা।

ধান্যকুড়িয়ার গায়েন বাড়ি।

ধান্যকুড়িয়ার গায়েন বাড়ি। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১০:৪৩
Share: Save:

এ এক এমন গাঁ, যেখানে কয়েক পা গেলেই দেখা মেলে প্রাসোদোপম অট্টালিকার। খিলান দেওয়া বাড়ি সংলগ্ন বাগান, রকমারি মূর্তি। বহু বছর আগেও যে এই গ্রামে বৈভব উপচে পড়ত, ভগ্নপ্রায় বিশাল বাড়িগুলি তারই প্রমাণ। এককথায় এ যেন প্রাসাদের গ্রাম।

ধান্যকুড়িয়া। টাকি কিংবা বসিরহাট যাওয়ার পথে ঢুঁ মেরে নেওয়া যায় এই গ্রামে। ধান্যকুড়িয়ায় এলে মূল রাস্তার পাশেই দেখতে পাবেন সিংহ দরজা। তারই মাথায় অপূর্ব ভাস্কর্য। সিংহের সঙ্গে যু্দ্ধরত পুরুষ। সেই কারুকাজ অবশ্য অযত্নে নষ্ট হতে বসেছে। বসিরহাট-বেড়াচাঁপার দিকে টাকি যাওয়ার রাস্তার ধারে ধান্যকুড়িয়ার এই স্থানটি পরিচিত 'গায়েন গার্ডেন' নামে। প্রায় দেড়শো বছর আগে ধান্যকুড়িয়ার পাট ব্যবসায়ী মহেন্দ্রনাথ গায়েন দুর্গের আদলে ৩৩ বিঘা জমি জুড়ে ভবনটি নির্মাণ করেন। ইন্দো-ইউরোপীয় মিশ্র আঙ্গিকের সুদৃশ্য অট্টালিকাটি এখনও মানুষকে অবাক করে।

তবে এই স্থান ছাড়িয়ে আরও খানিক এগোলে, দূর থেকেই চোখে পড়বে প্রাসোদোপম অট্টালিকা। সেটির অবশ্য হতশ্রী অবস্থা নয়। পুজোয় গেলে দূর থেকে শুনতে পাবেন ঢাকের বাদ্যি। বছরভর এখানে প্রবেশ অনুমতি ছাড়া সম্ভব না হলেও, পুজোর দিনগুলিতে সকলের অবারিত দ্বার।

গায়েন বাড়ি ও বল্লভ বাড়ি, ধান্যকুড়িয়ার দু’টি পুরনো পরিবারে এখনও নিয়ম মেনে পুজো হয়। আগের ঠাটবাট না থাকলেও, বর্তমান প্রজন্ম পরিবারের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন। গায়েন গার্ডেনের ভগ্নদশা দেখার পর ঝাঁ চকচকে গায়েন বাড়ি দেখে লোকজন অবাক হতেই পারেন। সাজানো বাগান, তার মধ্যে দিয়ে রাস্তা। আসলে এই বাড়ি এখন জনপ্রিয় শুটিং স্পট। বাড়ি নয়, ঠিক যেন ইংরেজি এল অক্ষরের মতো বিশাল প্রাসাদ।

গায়েন বাড়ির দুর্গা প্রতিমা।

গায়েন বাড়ির দুর্গা প্রতিমা। ছবি: সংগৃহীত।

ভিতরে প্রবেশ করলে, সামনে উঠোন। তার পরেই ঠাকুর দালান। সেখানেই দুর্গাপুজোর আয়োজন। গায়েন বাড়ির পুজো ১৮০ বছরের বেশি পুরনো। একচালার প্রতিমা। জানা যায়, পুজো শুরু করেছিলেন গোবিন্দচন্দ্র গায়েন।

নিও ক্লাসিক্যাল এবং ভারতীয় ধারার সংমিশ্রণ পাওয়া যায় প্রাসোদোপম বাড়িটির আনাচ-কানাচে। গায়েন বাড়ির পিছনেই রয়েছে পরিবারের নিজস্ব মন্দির। সেখানে পূজিত হন রাধাকৃষ্ণ। বাড়ির ভিতরে প্রবেশের অনুমতি না মিললেও, বাগান, আশপাশটা দেখে নিতে পারেন। বাড়ি সংলগ্ন চত্বরেই রয়েছে তিনতলা নজরমিনার। করিন্থিয়ান স্তম্ভের উপর এটি তৈরি। শীর্ষে রয়েছে গোলাকার গম্বুজ।

গায়েন বাড়ি থেকে কিছুটা গেলেই চোখে পড়বে সাদা রঙের বিশাল বল্লভ বাড়ি। বাড়ির ছাদে পুতুল-মূর্তি। বল্লভ বাড়ি স্থানীয়দের কাছে 'পুতুলবাড়ি' নামেও পরিচিত। বিশাল বাড়িতে সাদা স্তম্ভগুলির মাথায় সবুজ রঙের কারুকাজ। ঠাকুর দালানে পুজোর আয়োজন হয়। একমাত্র দুর্গাপুজোতেই এই বাড়িতে বাইরের লোকজনের প্রবেশাধিকার থাকে।

এ ছাড়াও ঘুরে নিতে পারেন সাহু বাড়ি। দেখে নিতে পারেন সেন বাড়ি, বিশ্বাস বাড়ি। জানা যায়, ধান্যকুড়িয়াতে আটটি জমিদারবাড়ি ছিল। এই গ্রামের স্কুল, হাসপাতাল তৈরি হয়েছিল এই ব্যবসায়িক পরিবারগুলির হাত ধরে।

এক সময়ের সেই বৈভব এখন কালের গর্ভে বিলীন। তবে ক্ষয়ে যাওয়া স্মৃতি নিয়ে কিছু বাড়ি এখনও দাঁড়িয়ে। এখানে এলে শোভাবাজার রাজবাড়ি, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির কথা মনে পড়তে পারে।

ধান্যকুড়িয়ায় দুই বাড়ির পুজো দেখে চলে যেতে পারেন আড়বেলিয়ায় বসু বাড়ির পুজো দেখতে।

যেতে কত ক্ষণ সময় লাগবে?

কলকাতা থেকে বসিরহাট বা টাকির রাস্তা ধরে গেলে ধান্যকুড়িয়ার দূরত্ব ৫১ কিলোমিটার। যেতে মোটামুটি আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগবে।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে খড়িবাড়ি রোড হয়ে টাকি রোড ধরে নিতে পারেন। দেগঙ্গা, বেড়াচাঁপা, স্বরূপনগর বাজার, মাটিয়াবাজার পার হয়ে ধান্যকুড়িয়া। আবার কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ব্যারাকপুর অয়্যারলেস মোড় হয়েও যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন?

ধান্যকুড়িয়া সকালে গিয়ে ঘুরে চলে আসা যায়। এখান থেকে টাকি খুব কাছে। সেখানে বিভিন্ন মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।

আর কী দেখবেন?

নবমীতে ধান্যকুড়িয়া গিয়ে টাকিতে রাত্রিবাস করে দশমীর প্রতিমা নিরঞ্জন দেখে নিতে পারেন। টাকিতে গোলপাতার জঙ্গল-সহ বেশ কয়েকটি দ্রষ্টব্য জায়গা রয়েছে। এ ছাড়া দেখে নিতে পারেন ঐতিহাসিক স্থান চন্দ্রকেতুগড়।

অন্য বিষয়গুলি:

Dhanyakuria Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy