ওড়িশার বানিয়া এবং চিকিলি গ্রামে গেলে দেখা পেতে পারেন কৃষ্ণসার মৃগের। নিজস্ব চিত্র।
ঢেউখেলানো টিলা, সামনেই চাষের ক্ষেত। তারই সামনে সপরিবার নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায় কৃষ্ণসার মৃগ। তবে দুলকি চাল ঠিক তত ক্ষণই, যত ক্ষণ না তারা টের পাচ্ছে আশপাশে কেউ আছে। এক বার পদশব্দ পেলেই নিমেষে দৌড়।
কৃষ্ণসার মৃগ দর্শনের জন্য ওড়িশার ভেটনাইয়ের নাম আছে। তবে এই রাজ্যের গঞ্জাম জেলায় আরও দুই গ্রামে বানিয়া-চিকিলিতেও দেখা মেলে তাদের, তা এখনও অনেকের কাছে অজানা।
ওড়িশার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র রম্ভা। পাহাড় ঘেরা চিল্কা ঘুরে নেওয়া যায় এখান থেকে। রম্ভায় এসে বেশির ভাগ পর্যটক বরকুল, গোপালপুর, তারাতারিণী মন্দির দর্শনে গেলেও, খাল্লিকোটের দিকে চট করে কেউ আসেন না। বানিয়া-চিকিলি তো নয়ই!
কলকাতা থেকে পুজোর ছুটিতে চারচাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লে, আদর্শ স্থান হতে পারে ওড়িশার গঞ্জাম জেলা। রম্ভা, বানিয়া-চিকিলি, খাল্লিকোট ছাড়াও আশপাশে অনেক কিছু দেখে নেওয়া যায়। ঢেউখেলানো পাহাড়, চিল্কার সৌন্দর্য মন ভাল করে দেয়। ভোরে যদি যাত্রা শুরু করেন, রাতের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন রম্ভা।
তবে কৃষ্ণসার হরিণ দর্শনের ইচ্ছে থাকলে কাকভোরে রম্ভা থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে। কারণ, রোদ মাথার উপরে উঠলে কৃষ্ণসারের দর্শন পাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে। কৃষ্ণসার মৃগ হল অ্যান্টিলোপ। সম্বর, চিতল কিংবা পারা হরিণের (হগ ডিয়ার) মতো অ্যান্টিলোপদের শিং শীতকালে ঝরে গিয়ে বসন্তে নতুন করে গজায় না। সারা জীবনই মাথায় বয়ে বেড়াতে হয়। উল্লেখ্য, পুরুষ কৃষ্ণসারেরই কেবল শিং থাকে।
রম্ভা থেকে বানিয়া এবং চিকিলি দুই গ্রামের দূরত্ব ১০ কিলোমিটারের মতো। পিচের মসৃণ রাস্তা। তারই পাশে ঢেউখেলানো পাহাড়। পাকা রাস্তার দু’পাশে কখনও নির্ভেজাল প্রকৃতি, কখনও আবার গ্রাম। এই পথে গাড়ি ছোটাতে যে দারুণ লাগবে, বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে, যে প্রশ্নটা উঁকি দেবে, কৃষ্ণসার কোথায়?
আশপাশে জঙ্গল নেই, সাধারণ মাঠঘাট। তবে কি রাস্তার পাশে তারা ঘুরে বেড়ায়? তা কিন্তু মোটেই নয়। নিজেরা গাড়ি নিয়ে গেলে স্থানীয় গাইডের সাহায্য দরকার।
আসলে গ্রামের ক্ষেতে ঘুরে বেড়ায় কৃষ্ণসারের দল। স্থানীয় লোকজনের থেকেই জানা যায়, ভোরের নরম রোদেই সাধারণত দেখা মেলে তাদের। বেলা বাড়লে আসে না। মূল সড়কের গা ঘেঁষে বিস্তীর্ণ চাষের ক্ষেত। সেখানে কোনও আড়াল না থাকায়, বহু দূরেও কৃষ্ণসার থাকলে বোঝা সম্ভব। তবে দূর থেকে কৃষ্ণসার বলে চিনে নেওয়ার জন্য অভিজ্ঞ চোখ দরকার। দূরবিন থাকলে আরও ভাল। কপাল ভাল হলে, এখানেই দেখা পেতে পারেন শাবক-সহ একাধিক কৃষ্ণসার মৃগের।
তাদের কাছাকাছি যেতে হলে, নিঃশব্দে আলপথ বেয়ে একটু একটু করে এগোতে হবে। ছবি তুলতে গেলে দিতে হবে ধৈর্যের পরীক্ষা। কারণ, সামান্য শব্দ হলেই দৌড় দেবে তারা।
নির্মল ঝার
কৃষ্ণসার মৃগ দেখে পাহাড়ি রাস্তা ধরে আরও আধ ঘণ্টার মতো এগিয়ে গেলে পৌঁছবেন পাহাড়ের কোলে এক সুন্দর মন্দিরে। তার নাম নির্মল ঝার। এই মন্দিরের গঠনশৈলী বেশ আলাদা।
প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকলেই সামনে জলাশয়। তার চারপাশে বিভিন্ন মন্দির। সেই জায়গা পেরিয়ে রয়েছে আরও একটি দ্বার। এই মন্দিরে দু’টি জলাশয় রয়েছে। যেখানে অনবরত জল আসছে। মনে করা হয়, পাহাড়ের কোনও ঝোরা সেই জলের উৎস। এই জলকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করেন স্থানীয়েরা। কেউ কেউ বলেন, এই জলের জন্যেই এখানকার নাম নির্মল ঝার।
মন্দিরের দ্বিতীয় প্রবেশপথটি দিয়ে ভিতরে গেলে দেখা যাবে, সেখানে আরও কয়েকটি মন্দির। মাঝে চৌকো গহ্বরে সশব্দে স্বচ্ছ জলধারা বয়ে চলেছে। সেখান থেকেই আবার সিঁড়ি উঠে গিয়েছে উপরে।
সিঁড়ি দিয়ে একেবারে উপরে গেলে মাঝের অংশে পাওয়া যায় একটি চাতালের মতো স্থান। সেই স্থান থেকে সমগ্র মন্দির এবং আশপাশের দৃশ্যপট ছবির মতোই মনে হয়। এই মন্দিরে রয়েছে বিষ্ণুর দশাবতারের মূর্তি। এখানে বিষ্ণু, নীলকণ্ঠেশ্বর, লক্ষ্মী, বিমলা, সূর্য, জগন্নাথদেবেরও পুজো হয়।
জগন্নাথ মন্দির
নির্মল ঝার থেকে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গেলে ১৫ কিলোমিটার দূরেই পৌঁছে যাবেন খাল্লিকোটের জগন্নাথ মন্দিরে। গুরুত্বে, মাহাত্ম্যে এই জগন্নাথ মন্দিরেরও নাম রয়েছে। পাহাড়ের কোলে বিশাল চত্বরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মন্দির। উৎসবে না এলে, নিরিবিলিতেই জগন্নাথ দর্শন করা যায়। সবচেয়ে ভাল লাগবে এখান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
যেতে কত ক্ষণ সময় লাগবে?
কলকাতা থেকে রম্ভার দূরত্ব ৫৬৮ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে খাল্লিকোটের দূরত্ব ৫৫৯ কিলোমিটার। টানা গাড়ি চালালে ১৩-১৪ ঘণ্টায় পৌঁছনো যাবে।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে খড়গপুর, বালেশ্বর, ভদ্রক, কটক, ভুবনেশ্বর হয়ে খুরদা জেলা, বালুগাঁও পার করে রম্ভা। গঞ্জাম জেলায় পড়ে এটি। রাত্রিবাসের জন্য ভুবনেশ্বর বা কটক, কোথাও থেকে যেতে পারেন। রম্ভা থেকে খাল্লিকোটের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন?
রম্ভায় ওড়িশা পর্যটন দফতরের পান্থনিবাস রয়েছে। একেবারে চিল্কার ধারেই তার অবস্থান। খাল্লিকোটেও ছোট-বড় কয়েকটি হোটেল পাবেন।
আর কী দেখবেন?
তারাতারিণী মন্দির, বরকুল, গোপালপুর, মহুরি কালুয়া মন্দির ঘুরে নিতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy