প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• পৃথিবীর প্রথম খুন
খুন। রহস্য উপন্যাস বা সিনেমার চিত্রনাট্য পেরিয়ে দৈনিক পত্রিকার হাত ধরে এখন তার সাকিন মধ্যবিত্তের ড্রইংরুম। প্রতিদিন খুনের খবর পড়তে পড়তে খুনের ঘটনা এখন আর সাধারণ মানুষের মনে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। কিন্তু পৃথিবীর প্রথম খুন কোথায় হয়েছিল জানেন কি? বিজ্ঞানীদের অনুমান পৃথিবীর প্রথম খুনের সাক্ষী অধুনা স্পেন।
সম্প্রতি স্পেনের পিট অফ বোনস্ প্রত্নতাত্ত্বিক অ়়ঞ্চল থেকে পাওয়া ৪ লক্ষ তিরিশ হাজার বছর আগের একটি খুলি তারই প্রমাণ দিচ্ছে। একটি গুহায় মোট সাতাশটি শায়িত দেহের সঙ্গে ওই খুলিটি পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর প্রথম সামাজিক প্রাণঘাতী হিংসার বলি ছিলেন ওই খুলির অধিকারী। প্রায় তিন দশক ধরে ওই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে গবেষণা চলছে।
মাদ্রিদের সালুড কার্লোস থ্রি প্রতিষ্ঠানের প্রধান গবেষক নোহেমি সালার মতে, “হিংসা প্রাণীর খুব স্বাভাবিক একটি ধর্ম। পারস্পরিক হিংসার ঘটনায় অবাক হওয়ার কোনও কারণ নেই। সামাজিক হিংসার ফলেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল।” গবেষকদের মতে, সম্ভবত পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে পৃথিবীর প্রথম খুনটি করা হয়েছিল। আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে খুলির সামনের দিকে দু’টি অংশ একই রকম ভাবে ভাঙা। আর তা পাথরের আঘাতে বলেই মনে করা হচ্ছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে একাধিকবার আঘাতের ফলেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক গবেষকরা।
কিন্তু কিভাবে ওই দলটি গুহায় এসে পৌঁছল? ফরেন্সিক গবেষণার মাধ্যমে এখন তা জানার চেষ্টা চলছে। গবেষক নোহেমি আরও মনে করেন, গত পাঁচ লক্ষ বছরে মানব চরিত্রের এই মনোভাবের কোনও পরিবর্তনই হয়নি। তাই পৃথিবীর প্রথম খুন কি কোনও অব্যর্থ সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করাল আমাদের?
• সাইবেরিয়ায় তামার পাতে মোড়া মমির খোঁজ
সাইবেরিয়ায় একসঙ্গে প্রায় ৩৪টি মমি আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা। এত দিন পর্যন্ত যেখানে যখনই কোনও মমি উদ্ধার হয়েছে, সেই অঞ্চলের ইতিহাস সম্বন্ধে নতুন করে জেনেছেন ঐতিহাসিকরা। এ বারে কিন্তু এই মমিগুলি উত্তরের থেকে প্রশ্নই তৈরি করেছে বেশি। বিচিত্র দর্শণ মমিগুলি তামার আচ্ছাদনে ঢাকা। এদের বেশির ভাগেরই খুলি ভাঙা ছিল। কিছু ক্ষেত্রে তা ছিলই না। পাঁচটি মমির দেহ পুরোপুরি তামার চাদরে ঢাকা। বাকিদের কারও বল্গা হরিণের চামড়া, কারও নেকড়ের, কারও বা ভল্লুকের চামড়া দিয়ে দেহ ঢাকা ছিল। আশ্চর্যজনক ভাবে, কবরস্থানটিতে একটি দেহও কোনও পূর্ণবয়স্ক মহিলার ছিল না। তামার পাতে মুখ ঢাকা অবস্থায় একটি শিশুকন্যার দেহ ছিল সেখানে। কাছেই একই রকম ভাবে রাখা ছিল তিনটি শিশুর দেহ। এদের দেহগুলি আবার তামার বাক্সে আটকে রাখা অবস্থায় ছিল। মমিগুলির পা গর্নি-পলুই নদীর দিকে রাখা অবস্থায় ছিল। বিজ্ঞানীদের অনুমান, কোনও ধর্মীয় কারণেই এই ভাবে শায়িত ছিল দেহগুলি। কিন্তু এ ছাড়া আর কিছুই জানাতে পারেননি তাঁরা। কেন দেহগুলি তামার পাতে মোড়া ছিল, কেনই বা কোনও মহিলার দেহ সেখানে ছিল না, উত্তর মিলছে না কোনও কিছুরই। সমাধিক্ষেত্রটি দশম শতকের। এর মধ্যে যে সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শণ মিলেছে, সেগুলি সুদূর ইরানের। এর থেকে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই অঞ্চলের সঙ্গে প্রাচীন পারস্যের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মমিগুলি তামার পাতে কেন মোড়া ছিল, সেই রহস্যের এখনও কিনারা করা যায়নি।
ঐতিহ্য
• মুম্বইয়ে কিপলিঙের জন্মভিটের সংরক্ষণ
গাছগাছালির ছায়াঘেরা মুম্বইয়ের বিখ্যাত স্যর জে জে স্কুল অব আর্ট। আর এর মাঝেই রয়েছে মোগলি-র জনক রাডিয়ার্ড কিপলিঙের জন্মভিটে। আর্ট স্কুলের বিশাল ক্যাম্পাসের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী হেরিটেজ বিল্ডিং। ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস, ক্রফোর্ড মার্কেট এবং মুম্বই পুলিশ কমিশনারেট বিল্ডিং। ক্যাম্পাসের মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সেই বাড়ি, যেখানে ৩০ ডিসেম্বর ১৮৬৫ সালে জন্মেছিলেন নোবেলজয়ী লেখক কিপলিং। জীর্ণ- অবহেলিতকিপলিঙের সেই ভিটে সংস্কার করে তা সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে মুম্বই সরকার। গত মার্চে রাজ্যের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক দফতরের মন্ত্রী বিনোদ তাওড়ে জানিয়েছেন, সংস্কারের পর ওখানে গড়ে তোলা হবে কিপলিং সংগ্রহালয়, গ্রন্থাগার। বসবে সাহিত্য ও সংস্কৃতির আসরও।
শিল্পকলার শিক্ষক, অলঙ্কারিক এবং কিউরেটর জন লকউড কিপলিং এবং অ্যালিসের সন্তান রাডিয়ার্ডের জীবনের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে মুম্বইয়ের এই ভিটেতে। এর পর ইংল্যান্ডে পাড়ি দেন কিপলিং। ষোলো বছর বয়সে লাহৌরে ফেরেন তিনি। দ্য জাঙ্গল বুক, কিম, ইফ—, দ্য ম্যান হু উড বি কিং-এর স্রষ্টা কিপলিং প্রথম ইংরেজ লেখক হিসেবে ১৯০৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পান।
কিপলিঙের জন্মভিটের অদূরেই রয়েছে আরও একটি বাংলো— কিপলিং হাউস। ১৮৫৭ সালে বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও জনহিতৈষী স্যর জামসেদজি জিজিভয়ের দান করা এক লক্ষ টাকায় গড়ে ওঠে জে জে স্কুল অব আর্ট। ১৮৬৬ সালে সে স্কুল অধিগ্রহণ করে তত্কালীন সরকার। স্কুলের প্রথম ডিন হন লকউড। ১৮৮২ সাল নাগাদ স্কুলের ক্যাম্পালেই গড়ে ওঠে কিপলিং হাউস। ডিন হিসেবে সেখানেই বসবাস করতেন তিনি। ২০০২ থেকে ০৮ পর্যন্ত সেখানে সংস্কারকাজ হয়।
কিপলিঙের জন্মভিটেতেও বেশ কয়েক বার সংস্কার করা হয়। এক বার প্রায় পুরোটাই ভেঙে সারানো হয় বাড়িটি। কিন্তু, কালের নিয়মেই অবহেলিত হতে থাকে সেটি। জীর্ণ সেই বাড়ির সামনে রাডির্য়াড কিপিলিঙের একটি আবক্ষ মূর্তি রয়েছে। ফলকে খোদাই করা — রাডির্য়াড কিপিলিং, স্যর জে জে স্কুল অব আর্ট-এর প্রথম প্রিন্সিপাল লকউড কিপলিঙের পুত্রসন্তান ৩০।১২।১৯৬৫ সালে এখানে জন্মেছিলেন।
নোবেলজয়ী কিপলিং ১৯৩০ সালে তাঁর জন্মভিটেয় ফিরে এসেছিলেন। ১৯৭০-এর জানুয়ারিতে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান সত্তর বছরের কিপলিং।
• হিমালয়ের অজিণ্ঠা তাবো
একাদশ শতকীয় তাবো মনাস্টেরির ক্ষয়িষ্ণু চেহারা নিয়ে চিন্তিত হিমাচল সরকার। বহু বছর ধরে প্রকৃতির ঝড়-ঝাপটা সামলে হিমালয়ের কোলে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই মঠ। কিন্তু, কালের নিয়মেই এর চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি এর রক্ষণাবেক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০৫০ মিটার উচ্চতায় হিমাচল প্রদেশের লাহাউল-স্পিটি জেলায় পাহাড়ে ঘেরা এক উপত্যকায় রয়েছে এই বৌদ্ধ মঠ। খ্রিস্টপূর্ব ৯৯৬-তে মঠের গোড়াপত্তন করেছিলেন এক তিব্বতী রাজা ও তাঁর দুই ছেলে।
গামলার আকারের এক উপত্যকাস্থিত এই মঠটি হিমালয়ের অজিণ্ঠা নামে পরিচিত। নয়টি মন্দির, চারটি কারুকাজ করা স্তূপা এবং অসংখ্য গুহা দিয়ে তৈরি মঠে রয়েছে সে কালের শিল্পীদের আঁকা ম্যুরাল পেন্টিং। ওই পেন্টিং-এর মধ্যে মেলে বৌদ্ধ সংস্কৃতির ঝলক। এ ছাড়া এখানে রয়েছে প্রাচীন পুঁথিপত্রের এক বিরল সংগ্রহ।
তবে এই প্রাচীন মঠেক ক্ষতি হতে শুরু করেছে। গত কয়েক বছরে এখানে অত্যাধিক বৃষ্টিপাতের ফলে এলাকায় আদ্রতার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মঠের মাটির কাঠামোয় যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও এই উপত্যকার চারপাশের যছেচ্ছ নির্মাণকাজের ফলেও প্রভাব পড়েছে। এমনকী, আর্কিলজিক্যাল সার্ভে-র করা সংস্কারকাজেও ক্ষতি হয়েছে এর কাঠামোয়।
সুখের কথা, মঠ বাঁচাতে এ বার নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে নির্মাণকাজে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। গত ৩০ মে রাজ্যের ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতি দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব উমা চৌধুরী বলেন, “তাবো মনাস্টেরির স্থাপত্য রক্ষা নিয়ে উপায় বের করতে এখানে এক সেমিনারের আয়োজন করা হবে।” সেমিনারে এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া, পুরাতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদদের কাছেও এ বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া হবে প্রশাসন সূত্রে খবর। তাবো মনাস্টেরির ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা নিয়ে কেন্দ্রকে আগেই জানিয়েছে হিমাতল সরকার। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে ফের কেন্দ্রের কাছে দরবার করবে রাজ্য।
• লন্ডনে টিপুর অস্ত্রভাণ্ডারের নিলাম
বিলেতের মাটিতে নিলাম হল টিপু সুলতানের তলোয়ার-সহ অস্ত্রশস্ত্রের বড় অংশ। গত ২১ এপ্রিল লন্ডনের নিলামঘর বনবহ্যামস-এ ছয় মিলিয়ন পাউন্ডে বিকিয়েছে টিপুর অস্ত্রভাণ্ডারের ৩০টি বস্তু। এৱ মধ্যে রয়েছে টিপু সুলতানের তলোয়ার থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত বর্ম, শিরোস্ত্রাণ, পিস্তল-কামান ইত্যাদি।
১৭৮২ সালে হায়দার আলির মৃত্যুর পর মহীশূরের শাসক হন তাঁর বড় ছেলে টিপু সুলতান। মহীশূরের বাঘ নামে পরিচিত টিপু ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করে গিয়েছেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধেই ১৭৯৯-এ শ্রীরঙ্গপত্তনমের যুদ্ধে নিহত হন তিনি।
লন্ডনে নিলাম শেষে বনহ্যামস-এর ক্লেয়ার পেলহ্যালুরিক এক বিবৃতিতে বলেন, টিপুর ব্যবহৃত জিনিসপত্রের নিলামের আগে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে দর পাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। এ ধরনের জিনিসপত্রের জহুরীরা এর শিল্পমূল্য বুঝতে পারেন বলেই যে কোনও মূল্যে তা পাওয়ার চেষ্টা করেন।
সংস্থা সূত্রে খবর, বনহ্যামস ইসলামিক অ্যান্ড ইন্ডিয়ান আর্ট নামের ওই নিলামে টিপু সুলতানেরর রত্নখচিত তলোয়ার বিকিয়েছে ২১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫০০ পাউন্ডে। ৬০ থেকে ৮০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত তার দাম উঠতে পারে বলে নিলামের আগে মনে করা হয়েছিল। এ ছাড়া, কামানবাহী-সহ তিন পাউন্ড ওজনের একটি কামান বিকিয়েছে ১৪ লক্ষ ২৬ হাজার ৫০০ পাউন্ডে। সংস্থার তরফে যার দর ভাবা হয়েছিল ৪০ থেকে ৬০ হাজার পাউন্ড। একটি দোনলা বন্দুকের দাম উঠেছে ৭ লক্ষ ২২ হাজার ৫০০ পাউন্ড। নিলামের আগে টিপুর অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে সংস্থার তরফে লন্ডনে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল।
পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• মানুষ যদি হয় যন্ত্রমানব
মানুষের শরীরে প্রযুক্তি অনেক আগেই জায়গা করে নিয়েছে। হৃদযন্ত্র কাজ না করলে পেসমেকার বসানো হয়। কিন্তু মানুষ যদি পুরোটাই যন্ত্র মানবে পরিণত হয়!
সেই দিন নাকি আর বিশেষ দেরি নেই যখন মানুষ আর মানুষ থাকবে না! সকলেই যন্ত্র মানবে পরিণত হবে। আগামী ২০০ বছরের মধ্যেই এই পরিবর্তন আসতে চলেছে। সম্প্রতি একটি ইংরেজি সংবাদপত্রে প্রকাশিত এই খবরে স্বভাবতই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। আর এই দাবি করেছেন ইজরায়েলের জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুবালনোয়া হারারি।
হারারির মতে, যে ভাবে প্রযুক্তি এগোচ্ছে তাতে প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে ‘আপগ্রেড’ করে আযু বাড়িয়ে নিতে চাইবে এক শ্রেণির মানুষ। আর তার জন্যই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করে নিজেকে যন্ত্রমানব বা সাইবর্গে পরিণত হবেন তাঁরা। আর ফলে সমাজের বিত্তবান মানুষদের সঙ্গে মধ্যবিত্তের দূরত্বও অনেক বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, শিম্পাঞ্জির সঙ্গে বর্তমান মানুষের যে ফারাক ঠিক তেমনই আর এক বিবর্তনের ঘটনা ঘটতে চলেছে ওই সময়ে। তিনি প্রযুক্তির ব্যবহারের দৌড়ে এগিয়ে রেখেছেন সিলিকন ভ্যালিকে। তাঁর মতে, মানুষের বিশ্বাস এটি এমন এক জায়গা যেখানে সমস্ত সমস্যাই প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।
• মাছেরাও নাকি এ বার থেকে সিঙ্গল মাদার!
বলিউডের সুস্মিতা সেন বা বাঙালি অভিনেতা স্বস্তিকার কথা সকলেই শুনে থাকবেন। বাদ যায়নি ‘হ্যারি পর্টার’-এর স্রষ্টাও। বংশধরের জন্য তাঁদের কেউই আর আলাদা করে পিতার উপর নির্ভরশীল নয়। যদিও সন্তানের জন্য তাঁদেরকে জৈবিক পিতার উপর নির্ভর করতেই হয়েছে। কিন্তু জেনে আশ্চর্য হবেন, সম্প্রতি এমন কিছু মাছের সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন যাদেরকে এতটুকুও জৈবিক পিতার উপর নির্ভর করতে হয় না।
সম্প্রতি মাছেদের এমন একটি প্রজাতির খোঁজ মিলেছে যারা নাকি কোনও পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই প্রজননক্ষম। কারেন্ট বায়োলজি নামক একটি জার্নালে এমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণা করে জানা গিয়েছে, ফ্লোরিডার মোহনায় বসবাস করা করাত মাছের তিন শতাংশেরও বেশি মাছের কোনও জৈবিক পিতা নেই। পুরুষ মাছের থেকে আর এক জোড়া জিন পাওয়ার পরিবর্তে তারা নাকি শুধুমাত্র মায়ের কাছ থেকেই উত্তরাধিকারসূত্রে জিন পেয়ে থাকে। ছোট ছোট দাঁতযুক্ত এসব স্ত্রী মাছ কখনও কখনও প্রজনন ছাড়াই বংশবৃদ্ধি করতে পারে। মাছগুলির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এমন তথ্যই পেয়েছেন। এর আগে অবশ্য বেশ কিছু পাখি, সরীসৃপ ও হাঙরের ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রজননের প্রমাণ মিলেছে।
মহম্মদ আলির মতো দোর্দন্ডপ্রতাপ বক্সারকেও কাবু করেছিল স্নায়ুরোগ। এ বার সেই স্নায়ু রোগের লাগাম টানার ব্যবস্থা করেছেন ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-র বি়জ্ঞানীরা। যাঁদের মধ্যে ধীরজ রায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
কিন্তু কী ভাবে এই কাজ করবেন বিজ্ঞানীরা?
বি়জ্ঞানীদের দাবি, অ্যালজাইমার্স থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের কোনও গুরুতর আঘাত এমনকী অত্যধিক চাপও নিয়ন্ত্রণে আনা যায় শুধুমাত্র ব্রেন সেলকে আলোর দ্বারা সক্রিয় করার মাধ্যমে। এই আবিষ্কার নিউরো সায়েন্সে এক নতুন দরজা খুলে দেবে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় ইঁদুরের উপরে নীল আলো ব্যবহার করে মস্তিষ্কের স্মৃতি নিয়ন্ত্রক কোষগুলিকে সক্রিয় করতে সমর্থ হয়েছেন তাঁরা। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও মানুষের উপরে এই আবিষ্কার প্রয়োগ করা হয়নি। বিজ্ঞানীদের আশা, অ্যালজাইমার্স বা স্মৃতিভ্রংশ রোগকে কাবু করতে এই গবেষণা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
পর্যটন কেন্দ্র
• কারুকৃষ্টির শহর ক্যান্ডি
মধ্য শ্রীলঙ্কার অপূর্ব পাহাড়ি শহর ক্যান্ডি। রাজধানী কলম্বো থেকে ১১৫ কিমি দূরে ৫০০ মিটার উচুঁতে এই শহরের অবস্থান। অতীতে ক্যান্ডির নাম ছিল সেনকাডাগোলা বা সেনগাডাগোলাপুরা। তবে লোকশ্রুতি ক্যান্ডির প্রতিষ্ঠা রাজা তৃতীয় বিক্রমবাহুর স্ত্রীর নাম ‘সেনকান্ডা’ থেকে পরিবর্তিত হয়ে পরে ক্যান্ডি হয়েছে। আদতে ক্যান্ডি মানে ‘পাহাড়ের দেশ’। তবে সিংহলিরা একে আদর করে ‘মহানুয়ারা’ বা ‘গ্রেট সিটি’ বলে ডাকে। তবে সমগ্র বিশ্বে ক্যান্ডির খ্যাতি অন্য কারণে। এখানে ‘টুথরেলিক টেম্পল’—এর মধ্যে সযত্নে রাখা আছে ভগবান বুদ্ধের একটি দাঁত। বৌদ্ধধর্মালম্বীদের কাছে ক্যান্ডির মাহাত্ম্য এই কারণেই। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পেয়েছে টুথরেলিক টেম্পল। কথিত, গৌতম বুদ্ধের মহাপ্রয়ানের পর তাঁর একটি দাঁত পৌঁছয় লঙ্কাপত্তনায় বর্তমানে যা আজকের শ্রীলঙ্কা। মহারাজা পাণ্ডুর কন্যা হেমমালা এবং তাঁর স্বামী ছদ্মবেশে দাঁতটি শ্রীলঙ্কায় নিয়ে আসেন। কীর্তি মেগাভেন্না তখন শ্রীলঙ্কার রাজা। তিনি রাজপ্রাসাদে একটি সুদৃশ্য বিহার নির্মাণ করে দাঁতটি সেখানে সংরক্ষিত করে রাখেন। আঠারো শতকে দাঁতটি নিয়ে প্রথম পেরাহেরা উত্সবের আয়োজন করেন তিনি। বর্তমান মন্দিরটি রাজা বীর নরেন্দ্র সিংহের আমলে নির্মিত। এর পাশেই রয়েছে পাত্থিরিপুরা টাওয়ার। সেটি নির্মাণ করেন রাজা বিক্রমারাজাসিংহে। ১৯৯৮ সালে তামিল টাইগার্সদের হামলায় প্রবল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মন্দিরটি। পরে প্যাগোডার আঙ্গিকে গড়ে তোলা হয় মন্দিরটি। দেওয়াল জুড়ে কাঠ এবং হাতির দাঁতের কারুকাজের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে বুদ্ধের জীবনের নানা কাহিনি। মন্দিরজুড়ে রয়েছে ছোট ছোট কুলুঙ্গি। দোতলা মন্দিরের নীচের তলার নাম পাল্লেমালায়া। উপর তলার নাম উদুমালায়া। মন্দিরের যে অংশে বুদ্ধের দাঁতটি রাখা আছে তার নাম হানদুনকুনাম। দাঁতটি রত্নসিংহাসনে মনিমুক্তোখচিত গয়নার বাক্সে রাখা থাকে। বছরে এক বার এসালাপেরাহেরা উত্সবের সময় পালকির মধ্যে গয়নার বাক্সে দাঁতটিকে রেখে সুসজ্জিত হাতির পিঠে চাপিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হয়। মন্দিরের গর্ভগৃহে আছে বুদ্ধদেবের মূর্তি। দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীতে নির্মিত গদালাদেনিয়া মন্দিরটি ক্যান্ডির আরও একটি উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য। চোদ্দ শতকে নির্মিত এই মন্দিরটি ক্যান্ডির হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র। বেড়িয়ে আসা যায় পিন্নাওয়ালা থেকেও। হাতিদের অনাথ আশ্রম হিসেবে পিন্নাওয়ালার খ্যাতি। ক্যান্ডি থেকে দূরত্ব ৭০ কিমি।
হিমাচল প্রদেশের এক নির্জন পাহাড়ি গঞ্জ সারাহানের খ্যাতি তার সৌন্দর্য আর গুরুত্বপূর্ণ তীর্থভূমির জন্য। পাহাড়জুড়ে পাইন-ওক-ফার গাছের সারি এবং তার সঙ্গে আপেল বাগান— এক কথায় অসামান্য। তবে সারা ভারতে সারাহানের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হল এখানের প্রসিদ্ধ ভীমকালী মন্দির— যা এক প্রসিদ্ধ তীর্থস্থানও বটে।
বরফাবৃত শ্রীখণ্ড শৃঙ্গের পাদদেশে শতদ্রু নদীর তীরে ২১৬৫ মিটার উচুঁতে অবস্থিত সারাহান। কিন্নর অঞ্চলের দ্বার বলা হয় সারাহানকে। সিমলা থেকে দূরত্ব প্রায় ১৭০ কিমি। বাস অথবা গাড়িতে পৌঁছতে সময় লাগে ৭-১০ ঘণ্টা।
অতীতের বুশাহার রাজাদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী সারাহানের প্রাচীন নাম ছিল শোনিতপুর। হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ সারাহান রাজপরিবারের সন্তান।
ভীমকালী মন্দির এই জনপদকে তীর্থের রূপ দিয়েছে। লোকমতে এখানে সতীর কান পড়েছিল। যার জন্য এটি বিখ্যাত সতীপীঠও বটে। কাঠ এবং পাথরের সংমিশ্রণে তৈরি তিনতলা এই প্যাগোডাধর্মী মন্দিরটি হিন্দু এবং বৌদ্ধ স্থাপত্যের এক অনবদ্য নিদর্শন। কাঠের অপূর্ব কারুকাজ গোটা মন্দির জুড়ে। বুশাহার রাজাদের কুলদেবী ভীমকালী অধিষ্ঠিত আছেন মন্দিরের সর্বোচ্চ তলে। মন্দির চত্বরে রয়েছে আরও কিছু ছোট ছোট মন্দির। কথিত, অজ্ঞাতবাসে থাকার সময় পঞ্চপাণ্ডব এখানে এসেছিলেন। অতীতে, এখানে নরবলি হত। নবরাত্রীতে জমকালো উত্সব হয় মন্দির প্রাঙ্গনে।
মন্দিরের পাশেই আছে বুশাহার রাজাদের প্রাসাদ ‘পদম প্যালেস’। ১৯২৫ সালে নির্মিত হয় এই রাজপ্রাসাদ। প্রাসাদের ভিতর সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। এই প্রাসাদের কাছেই আছে পাখিরালয়। পায়ে হেঁটে এই পাখিরালয়ে দেখে নেওয়া যায় নানা বিরল প্রজাতির পাখি। হিমাচলের রাজ্যপাখি মোনাল-সহ অন্য পাখিদের প্রজনন এবং সংরক্ষণ করা হয় এখানে। তবে শুধু পাখি দেখা নয় শ্রীখণ্ড, ঘিসু-পিসু ইত্যাদী শৃঙ্গগুলি দারুণভাবে দৃশ্যমান। হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র ৫১৫৫ মিটার উচুঁ শ্রীখণ্ড শৃঙ্গটি। এই পাহাড়টিলায় দাঁড়িয়ে সমগ্র উপত্যকার ছবি এককথায় অসাধারণ। সারাহান থেকে ঘুরে আসা যায় হাওয়া ঘর, ভাবা উপত্যকা থেকেও। ট্রেকিংয়ের জন্যও বিখ্যাত সারাহান।
• অচেনা কারনালা
মহারাষ্ট্রের সহ্যাদ্রি পর্বতমালার কোলে এক টুকরো স্নিগ্ধ, সবুজ কমনীয় জায়গা হল রায়গড় জেলার কারনালা। কারনালার খ্যাতি তিনটি কারণে— প্রকৃতি, পাখি এবং দুর্গ। মুম্বই থেকে ৪৯ কিমি দূরে মুম্বই-পুণে জাতীয় সড়কের ধারে কারনালা। পানভেল হয়ে আসা যায় কারনালা। দুরত্ব ১০ কিমি।
ছোট ছোট পাহাড়ি টিলা দিয়ে ঘেরা, সবুজ ঘন বনাঞ্চল এবং মনোরম আবহাওয়া কারনালার প্রধান আকর্ষণ। বাড়তি আকর্ষণ হিসাবে পাওয়া যাবে দেশ-বিদেশের নানা রকম পাখির দর্শন। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির নিত্য দর্শনের জন্যই গড়ে তোলা হয়েছে একটি পাখিরালয়। ৪.৮ বর্গ কিলোমিটারের এই পাখিরালয়ে প্রায় ১৫০টি প্রজাতির দেশি এবং ৩৭টি প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। পক্ষীদর্শনের টানেই কারনালায় বারবার ছুটে আসেন পর্যটকরা।
পাখিরালয় ছাড়া এখানে রয়েছে একটি শতাব্দী প্রাচীন দুর্গ। ৪৫০ মিটার উচুঁতে এই দুর্গটি তৈরি করেন মরাঠি শাসকরা।
• বিশ্ব বডি পেন্টিং উত্সব
শরীরে নানা রঙের আঁকিবুকি, নকশা বা ছবি আঁকার চলটা নতুন কিছু নয়। বরং বেশ কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন। কারণ যুগ যুগ ধরেই মানুষ শরীরে উল্কি করে বা ট্যাটু করে নানা ধর্ম বিশ্বাস ফুটিয়ে তুলেছে। এখন ট্যাটু করাটা অবশ্য এক ধরনের ফ্যাশনে ও প্যাশন-ও বটে! হলিউড অভিনেতা স্ট্যালন থেকে বলিউডের অজয় দেবগন বা টলির দেব—ট্যাটু করে শরীর সাজানোতে সব্বাই এক সারিতে। কিন্তু কাগজ, ক্যানভাস, দেওয়ালের গণ্ডি পেরিয়ে মানুষের শরীর যখন ছবি আঁকার পট হয়ে ওঠে তখন শরীর আর রং মিলেমিশে এক নতুন শিল্পধারার সৃষ্টি করে। রং হয়ে ওঠে শরীরের আবরণ। শরীর হয়ে ওঠে বর্ণময়, সুন্দর। এই অদ্ভুত সুন্দর শিল্পধারাটি বিশ্বে ‘বডি পেন্টিং’ নামেই পরিচিত। ট্যাটু যেমন সারা বিশ্বে কম বেশি জনপ্রিয়, বডি পেন্টিং এখনও তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে অস্ট্রেলিয়ায় এই বডি পেন্টিং-এর বিষয়টি রীতিমতো উত্সব হিসাব পালন করা হয় । সে দেশের ছোট্ট শহর সিবডনে ফি বছর ওয়ার্ল্ড বডি পেন্টিং ফেস্টিভল বা বিশ্ব বডি পেন্টিং উত্সব মহাধুমে পালিত হয়। চলে প্রায় সাত দিন ধরে। প্রথম চার দিনে চলে নানা কর্মশালা। শেষ তিন দিন উত্সবের মূল পর্ব বা আকর্ষণ। উত্সবে যোগদান করেন আট থেকে আশি— সকল বয়সের মানুষ। শরীর সেজে ওঠে চল্লিশেরও বেশি দেশ থেকে আসা বডি পেন্টিং শিল্পীর হাতের যাদুতে। আর রঙে নিজেদের সাজিয়ে উত্সবকে বর্ণময় করে তোলেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য মডেল।
এক সপ্তাহ ধরে চলে নানা ধরণের প্রতিযোগিতা। বডি পেন্টিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে ফেস পেন্টিংয়েরও আসর বসে এখানে। পেশাদার বা অপেশাদার, শিক্ষানবিশ— সকলেই অংশগ্রহণ করেন এই উত্সবে।
এই উত্সবের সূচনাও বেশ অদ্ভুত। ১৯৯৮ সালে সিবডনের একটি পর্যটন সংস্থা তাদের কর্মী অ্যালেক্স ব্যারেনড্রেগকে একটি গ্রীষ্মকালীন ইভেন্টের আয়োজনের দায়িত্ব দেয়। অ্যালেক্সের উদ্যোগে সে বছরই প্রথম হয় বডি পেন্টিং উত্সব। সে বছরে তেমন সারা না মিললেও ক্রমশ এটি সেখানকার এবং বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার একটি অন্যতম জনপ্রিয় উত্সবের জায়গা নিয়েছে।
সন্ন্যাস নিয়ে শান্তিপুরে ফিরেছেন শ্রীচৈতন্য। নিমাই পণ্ডিতের সন্ন্যাস নেওয়ার কথা ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসের গতিতে। দলে দলে মানুষ আসছেন দেখতে। ভক্তদের জোয়ারে শান্তিপুর ডুবুডুবু। এমনই এক সকালে শান্তিপুরের গঙ্গার ঘাটে ভিড়ল একখানি সুসজ্জিত নৌকা। সুদর্শন এক যুবক নেমে এসে সবিনয়ে জানতে চাইলেন, ‘কোথায় গেলে ওই নবীন সন্ন্যাসীর দেখা মিলবে?’ ঘাটের মানুষ জবাবে জানালেন— পথের সব মানুষ যে দিকে চলেছেন, সেই পথেই তাঁর সাক্ষাৎ মিলবে।
কিন্তু, আগন্তুকটি কে? নৌকো, মূল্যবান পোশাক, লোকলস্কর দেখে মনে হচ্ছে যে সে নন। খোঁজ করে জানা গেল দেশের অন্যতম প্রধান নৌ-বাণিজ্য কেন্দ্র সপ্তগ্রামের বিখ্যাত ধনী বণিক হিরণ্য গোবর্ধনের একমাত্র বংশধর ওই যুবক। বার্ষিক উপার্জন প্রায় বারো লক্ষ টাকা। এ হেন পরিবারের যুবক চৈতন্যদেবকে দেখে সম্মোহিত! সিদ্ধান্ত নিলেন সন্ন্যাস নেবেন। সে কথা চৈতন্যদেবের কানে পৌঁছতেই ফল হল উল্টো। কার্যত তিরস্কার করে ফিরিয়ে দিলেন যুবককে। বিষন্ন মনে ফিরে গেলেন সেই যুবক। গোটা ঘটনার সাক্ষী থাকলেন চৈতন্য সখা নিত্যানন্দ। এরপর এক দিন চৈতন্যদেব পুরী চলে গেলেন। এ দিকে বিষয়কর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন যুবক। পরমাসুন্দরী কন্যার সঙ্গে বিয়ে দিয়েও সংসারে মন ফেরানো গেল না!
এক বছর পরে পুরী থেকে নিত্যানন্দকে নাম প্রচারের দায়িত্ব দিয়ে বঙ্গদেশে পাঠালেন শ্রীচৈতন্য। নিত্যানন্দ এসে উঠলেন সেই পণ্যহট্ট বা পানিহাটির রাঘবভবনে। নাম-সংকীর্তনের কাজ শুরু করলেন নিত্যানন্দ। পানিহাটিতে রোজই উৎসব। গঙ্গার পাড়ে এক বট গাছের তলায় নিত্যানন্দ কথা বলেন ভক্তদের সঙ্গে, কখনও কীর্তনের সঙ্গে উদ্বাহু নাচেন। পিছনে বসে সে সব দেখেন প্রত্যাখ্যাত যুবক। একদিন তাঁকে ডেকে নিলেন নিজের কাছে। নিত্যানন্দের সান্নিধ্যে যুবক দ্রুত নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগলেন। একদিন নিত্যানন্দ তাঁকে আদেশ দিলেন সমবেত ভক্তদের জন্য আহারের ব্যবস্থা করতে। ধনী যুবক প্রত্যেক ভক্তের জন্য মাটির হাড়িতে পর্যাপ্ত চিড়ে দই ফলের আয়োজন করেন।
সে দিন ছিল জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ত্রয়োদশী তিথি। সেই থেকে বৈষ্ণব সমাজে দিনটি ‘দণ্ড মহোৎসব’ নামে পরিচিত। আর, সেই যুবক হলেন পরবর্তী কালের অন্যতম চৈতন্যপার্ষদ দাস রঘুনাথ। ধনী ভক্তকে দিয়ে নিত্যানন্দ অর্থদণ্ডের ছলে মহোৎসবের আয়োজন করেছিলেন বলে এই উৎসবের নাম দন্ড মহোৎসব। নবদ্বীপের প্রবীণ ভাগবত পাঠক গোরাচাঁদ ভট্টাচার্য একটানে বলছিলেন দণ্ড মহোৎসবের ইতিহাস। তাঁর কথায়, চৈতন্যদেবের কাছে দায়িত্ব পাওয়ার পরে নিত্যানন্দ যে দক্ষতার সঙ্গে প্রচারের কাজটি করেছেন এই উৎসব তারই অঙ্গ।
প্রতি বছর এই দিনে বড় উৎসবটি হয় পানিহাটিতে। বিতরণ করা হয় চিঁড়ে দই। বিভিন্ন বৈষ্ণব মঠমন্দিরে উৎসব পালিত হয়। এই প্রথম নবদ্বীপে শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য ভাবনামৃত সেবাশ্রমের আয়োজনে বড়ালঘাটে উৎসব পালিত হয়েছে। কয়েক কুইন্ট্যাল চিড়ে এবং দই ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
পরিষেবা
• বর্ষার মরসুমে ছাড় এয়ার ইন্ডিয়ায়
বর্ষা উপলক্ষে বিমানের টিকিটে ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করল এয়ার ইন্ডিয়া। দেশের এক শহর থেকে অন্য শহরে তাদের বিমানের টিকিট পাওয়া যাবে ১৭৭৭ টাকায়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরিষেবামূলকসমস্ত কর নিয়েই টিকিটের এই মূলর্য ধার্য করা হয়েছে। ৬৬টি শহর থেকে এই সুবিধা পাওয়া যাবে, যার মধ্যে রয়েছে কলকাতাও। সংস্থার তরফে আরও জানানো হয়েছে, ১২ জুনের মধ্যে টিকিট কাটলে এই বিশেষ ছাড় পাওয়া যাবে। সেই টিকিট ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।
এত দিন যেতে হতো ‘ব্রেক জার্নি’ করে। এখন থেকে সেই পাট চুকে গেল। আগে কলকাতা থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে আগরতলা বাস রুট চালু ছিল আলাদা-আলাদা ভাবে। এ বার পুরো রুটটিকেই সরাসরি জুড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কলকাতার সল্টলেক থেকে ঢাকা ছুঁয়ে বাস পৌঁছবে আগরতলায়। পরিবহণ কর্তারা বলছেন, কলকাতা থেকে সরাসরি বাস চালু হলে ১৪-১৫ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছনো যাবে আগরতলায়। সপ্তাহে তিন দিন কলকাতা থেকে ছাড়বে এই বাস। আর আগরতলা থেকে বাসটি ছাড়বে অন্য তিন দিন। ভাড়া লাগবে ২০০০ টাকারও কম।
সংবাদ সংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy