নৈহাটির বড়মা। —ফাইল ছবি।
কোথাও তিনি মুণ্ডমালিনী। কোথাও অভয়দায়িনী। কখনও তিনি উগ্ররূপী, কখনও তিনি শান্ত। কালী। নানা রূপে, নানা নামে তিনি পূজিত হন। রাজ্য জুড়েই রয়েছে একাধিক কালীক্ষেত্র। রয়েছে একাধিক মন্দির। কোনওটি বহু পুরনো, কোনওটি নতুন। প্রায় প্রতিটি দেবস্থানের সঙ্গেই জড়িয়ে নানা কাহিনি।
কালীকথা জানতে, মাতৃমূর্তি দর্শনে এই কালীপুজোয় ঘুরে নিতে পারেন ৫ মন্দির।
নৈহাটির বড়মা
প্রকাণ্ড তাঁর মূর্তি। তেজদৃপ্ত ভঙ্গিমা। সালঙ্কারা দেবীর সামনে গেলেই বিশালত্বের কাছে মাথা নত হয়ে যায়। তিনি নৈহাটির বড়মা।
কলকাতার আশপাশে যে কালীমন্দিরগুলিতে বছরভর ভক্তদের ঢল নামে, তার মধ্যে রয়েছে নৈহাটির বড়মায়ের মন্দিরও। পুজোর বয়স একশো পার হলেও, মন্দিরটি বেশ নতুনই। তবে এই পুজোয় দর্শকদের ঢল নামে ২২ ফুটের কালী এবং তাঁর সোনার গয়না দেখতে। সঙ্গে দেবীমাহাত্ম্য তো আছেই। লক্ষ্মীপুজোর দিনে কালীমূর্তি তৈরি শুরু হয়। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এই পুজোয় ভক্তেরা আসেন।
কী ভাবে যাবেন?
শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে চেপে নৈহাটি স্টেশন থেকে বেরিয়ে পশ্চিম পারে ঋষি অরবিন্দ রোড ধরে গঙ্গার দিকে একটু হাঁটলেই বড়মা’র পুজো।
শ্যামসুন্দরী কালী
রুদ্ররূপ নয়, কালী এখানে শান্ত, যেন ছোট্ট মেয়েটি। চতুর্ভুজা এলোকেশী শ্যামসুন্দরী কালীর রূপ বড় শান্ত, মধুর। পরনে লাল পাড়, সাদা শাড়ি। কপালে টিকলি। নাকে নথ। গলায় রুদ্রাক্ষ। প্রতিমার মুখে যেন খেলা করছে হাসি। কলকাতার সুকিয়া স্ট্রিটে রয়েছে মন্দিরটি। পুজো নিয়ে প্রচলিত রয়েছে জনশ্রুতি। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ইন্দ্রসেন ভট্টাচার্য জানান, এখানে কালী বালিকা রূপে পূজিত হন। কিন্তু কেন? পুরোহিত কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্যের কথায় জানা যায়, বহু বছর আগে একটি ঘটনা ঘটেছিল। কালীপুজো করতেন এক সেবায়েত। তিনি যখন বাজারে গিয়েছিলেন একটি ছোট্ট মেয়ে তাঁর কাছে এক টাকা চেয়েছিলেন চালকলা খাওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি মেয়েটিকে উপেক্ষা করেই চলে আসেন। পরে তিনি দেখেন, পূজার স্থানে মহাদেব থাকলেও কালী নেই। সেই সময় অন্ধকার থেকেই একটি হাত বেরিয়ে আসে। ভেসে ওঠে মুখ। সেবায়ত শুনতে পান ছোট্ট মেয়েটি বলছে, “দিবি না চালকলা খেতে?” জ্ঞান হারান সেবায়েত। সেই থেকেই শ্যামসুন্দরী পুজো শুরু হয়। গড়পারের হরিনাথ দে রোডের একটি পুরনো বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন ‘শ্যামসুন্দরী’। অন্ধকারেই কালীপুজোর রীতি প্রচলিত রয়েছে এখানে।
কী ভাবে যাবেন?
শিয়ালদহ থেকে আসতে হবে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ। সেখান থেকে হাঁটাপথে পৌঁছনো যাবে সুকিয়া স্ট্রিটের নিকটবর্তী কালী মন্দিরটিতে।
হংসেশ্বরী
হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় রয়েছে দেবী হংসেশ্বরীর মন্দির। তিনি মা কালীরই এক রূপ। পদ্মের উপর দেবী অধিষ্ঠিতা। চতুর্ভুজা মূর্তির গাত্রবর্ণ নীল। উপরের বাম হাতে তরবারি, নীচের বাম হাতে নৃমুণ্ড, উপরের ডান হাতে অভয়মুদ্রা, নীচের ডান হাতে বরাভয়। তবে শুধু মাতৃপ্রতিমা নয়, হংসেশ্বরী মন্দিরও দেখার মতো। হুগলির অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনক্ষেত্র এটি। এখানে এলে প্রথমেই নজর কাড়ে দেবস্থানের স্থাপত্যশৈলী যা, আর পাঁচটা মন্দিরের চেয়ে আলাদা। পাঁচ তল বিশিষ্ট এই মন্দিরে রয়েছে ১৩টি চূড়া। প্রতিটি চূড়ার মাথায় পদ্মের কুঁড়ি। হংসেশ্বরী মন্দিরের নির্মাণশৈলীতে তন্ত্রোক্ত একাধিক বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে। মন্দির ঘিরে রয়েছে সাজানো বাগান। তারই একপাশে অনন্ত বাসুদেব মন্দির। অপূর্ব টেরাকোটার কাজ তাতে।
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া-কাটোয়া লাইনে বাঁশবেড়িয়া স্টেশনে নেমে হংসেশ্বরী মন্দিরে আসতে পারেন। ব্যান্ডেল স্টেশনে নেমে অটো বুক করেও এখানে আসতে পারেন। কলকাতা থেকে দিল্লি রোড ধরেও গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন। কলকাতা থেকে দূরত্ব মোটমুটি ৫০ কিলোমিটার।
রাজপুর-সোনারপুর বিপত্তারিণী
দেবী এখানে পূজিতা বিপত্তারিনী চণ্ডী রূপে। সিংহবাহিনী দেবীর কৃষ্ণবর্ণের রূপেই রয়েছে প্রশান্ত ভাব। শোনা যায়, এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা দুলালচন্দ্র দাস। সাধক হিসাবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। দেবী চণ্ডীকে তিনি বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন সেই মন্দির বেশ ঝাঁ-চকচকে। বিশাল গেট পেরিয়ে ঢুকলে বাঁধানো চত্বর। তার পরে মন্দির।
কী ভাবে যাবেন?
শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে সোনাপুর স্টেশনে নেমে অটো ধরে যেতে হবে বিদ্যানিধি স্কুল। সেখান থেকে হাঁটাপথে মন্দির। মেট্রোয় এলে নামতে হবে কবি নজরুল স্টেশনে।
শিবপুরের হাজার হাত কালী
কৃষ্ণবর্ণা কালীর রূপ এখানে আর পাঁচটা পরিচিত মূর্তির চেয়ে ভিন্ন। দেবী নীলবর্ণা। জিভও বার করা নয়। সিংহের উপরে ডান পা তুলে দাঁড়িয়ে দেবী। তবে এই মূর্তির বিশেষত্ব হাতে। শিবপুরের এই দেবীমূর্তি ‘হাজার হাত কালী’ নামে খ্যাত। শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরে প্রতি বছর ধুমধাম করে পুজোর আয়োজন করা হয়। মন্দিরকে ঘিরে হাজারো জনশ্রুতি। জানা যায়, কলকাতার চোরবাগানের আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই মন্দির গড়ে ওঠে। লোকে তাঁকে তান্ত্রিক আশুতোষ তর্করত্ন নামেও চেনেন। তিনি দেশের বিভিন্ন তীর্থস্থান ঘুরে বেড়াতেন। পুজোপাঠ, ধ্যান, সাধনা নিয়ে থাকতেন তিনি। এক বার স্বপ্নে কালীর এই হাজার-হাতের রূপ দেখতে পান আশুতোষ। তারই ফলশ্রুতি এই মন্দির।
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া শিবপুরের ওলাবিবিতলায় মন্দিরটি। মন্দিরতলা স্টপেজে নেমে অটো অথবা টোটো ধরে হাজার হাত কালীমন্দির যাওয়া যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy