Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প

পুতুল

এত দিন একটা সন্তানের জন্য শ্বেতার কষ্টের শেষ ছিল না। গড়িয়াহাটার চড়চড়ে রোদে হাঁটতেও তার আজ যেন কোনও কষ্ট নেই।

ছবি: বৈশালী সরকার

ছবি: বৈশালী সরকার

কৌশিক ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

রুমিকে বাড়িতে নিয়ে আসার দিন সাত আগেই শ্বেতা অনেক রকমের খেলনা কিনেছিল। ছোট বড় নানা রংয়ের টেডি বিয়ার, ডোরেমন, বার্বি ডল আর রান্নাবাটি। এক সময় এগুলো সবই ছিল তার ছোটবেলার পছন্দ। বাড়িতে ছোট্ট বছর তিনেকের রক্তমাংসের যে শিশুটি আসবে, তাকে তো খেলনা দিয়েই ভোলাতে হবে! একরত্তি ফুটফটে মেয়েটা বাড়িতে আসার পরেই যদি কেঁদে ওঠে, তা হলে তাকে সামাল দেবে কে? গত সাত দিন ধরেই এই প্রশ্ন তার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর আগে বাচ্চা সামলানোর অভিজ্ঞতা তো তার নেই। আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব—সব্বাইকে প্রায় জনে জনে জিজ্ঞেস করে জেনেছে কী করে ছোট শিশুকে সামলাতে হয়। রুমির সবচাইতে পছন্দ কথা-বলা পুতুল। রুমিকে হোমে দেখতে গিয়ে প্রথমেই তার ভাল লাগার খেলনার কথা জিজ্ঞেস করাতে সে উত্তর দিয়েছিল, কল দেওয়া পুতুল। শ্বেতা তাকে কিনে দেওয়ার কথাও দিয়েছে। রুমিকে ঘরে নিয়ে আসার আগে কথা-বলা পুতুল আনতেই হবে।

এত দিন একটা সন্তানের জন্য শ্বেতার কষ্টের শেষ ছিল না। গড়িয়াহাটার চড়চড়ে রোদে হাঁটতেও তার আজ যেন কোনও কষ্ট নেই। তার চেনা দু’তিনটি দোকানে ঘুরে ওই ধরনের পুতুল না পাওয়া গেলেও সে কোথাও না কোথাও পাবে। রুমিকে সে কী ভাবে পেল? সেও তো পুতুলের মতোই। রুমি যখন বাড়ি আসবে, তখন ওই পুতুলটাই তার চোখের সামনে রাখা হবে। তার পর, দম দিয়ে চালালেই পুতুলটি মেঝেতে চলতে শুরু করলে, কথা বললে রুমি কী করে সেটাই দেখার! জীবনে প্রসব যন্ত্রণা হয়তো তার হয়নি, কিন্তু শুধু ‘মা’ ডাক শোনার আশায় গনগনে রোদে একটি বাচ্চার মুখ দেখার জন্য সারাদিন বসে ছিল শ্বেতা। রুমিকে হোমে তার সামনে এনে হোমের কর্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘ওই দেখো তোমার মা!’’ কেমন এক সরল বিশ্বাসে প্রথম অদেখা এক মহিলার গলা জড়িয়ে রুমি চুমু খেয়ে আধো-আধো গলায় বলেছিল, ‘‘মা তুমি কী সুন্দর! তোমার গা থেকে কী সুন্দর গন্ধ বেরোচ্ছে।’’ তার পরেই সোজা চলে গিয়েছিল কলের পুতুলের বায়নায়। সেই জীবনে প্রথম ‘মা’ ডাক শোনা। হোক না অন্যের সন্তান। তাতে কী এসে যায়। সে দিন দু’চোখ তার জলে ভরে গিয়েছিল। এই দৃশ্য দেখে হোমের কর্ত্রীও কেঁদে ফেলেছিলেন।

শ্বেতা রুমিকে আদর করে বলেছিল, ‘‘হ্যাঁ রে মা! পুতুলের কী দরকার? তুই-ই তো আমার পুতুল।’’

রুমি, শ্বেতার কথায় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বায়না করেছিল, ‘‘দাও না মা!’’

এই সব ভাবতে ভাবতে শ্বেতা যে কখন যে বড় ‘টয়শপ’-এর সামনে এসে দাঁড়াল তা নিজেই বুঝতে পারেনি। দোকানের শোকেসে সাজানো কত রংবেরঙের পুতুল। সেলসম্যান শ্বেতাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘ম্যাডাম! আপনার ছেলে না মেয়ে!’’

উচ্ছ্বসিত হয়ে শ্বেতা বলল, ‘‘মেয়ে। এই বছর তিনের। ভারী পুতুলের শখ।’’

ভদ্রলোক মুচকি হেসে বললেন, ‘‘তা হলে ‘ক্ল্যাপিং ডল’ নিন। সামনে হাততালি দিলেই লাফিয়ে উঠবে। আপনি চালিয়ে দেখে নিতে পারেন।’’

ভদ্রলোক একটা রংচঙে জামা পরা পুতুল শোকেস থেকে বের করে টেবিলে রাখলেন। এই পুতুল দম দিলে হাসে। হাততালি দিলে লাফায়। আর কথা বললে চোখ পিটপিট করে তাকায়। ঠিক যেন তার সদ্য দেখা মেয়ে রুমি। শ্বেতা পুতুলের দামই জিজ্ঞেস করল না। সোজা পুতুলটাকে প্যাক করে দিতে বলল। বহু, বহু দিন পরে শ্বেতা আনন্দে এক রকম ভাসতে ভাসতে বাড়িতে ফিরল। অনেক দিনের দুঃখের গুটি ভেঙে আজ যেন সুখের প্রজাপতি বেরিয়েছে।

বেডরুমের এক দিকে ছোট্ট টেবিল। সেখানে বসানো ওই পুতুল। দরজা দিয়ে ঢুকলেই যে কেউ মুখোমুখি হবে ওই পুতুলের। রুমিকে পুতুল দেখাতে প্রথমেই তাকে এই দরজা দিয়ে ঘরে ঢোকাবে। তার পর, পুতুল নিয়ে খেলবে। গুনে গুনে আরও সাত দিন। ক্যালেন্ডারে ইতিমধ্যে রোজই গোল দাগ দিয়ে রুমির আসার দিনটিকে এগিয়ে আনতে চায় শ্বেতা।

বাড়িতে তিনজন মাত্র প্রাণী। স্বামী চন্দন, পেশায় চিকিৎসক। কাজের স্বার্থেই তাঁকে বেশির ভাগ সময়ে বাইরে থাকতে হয়। আর আছেন শ্বেতার বৃদ্ধা মাসি-শাশুড়ি আর শ্বশুর। শ্বেতা এক সময়ে চাকরি করলেও পরে ছেড়ে দেয়। এখন সে গৃহবধূ। বহু বার চেষ্টা করেছে মাতৃত্বের। শহরের কোনও ইনফার্টিলিটি ক্লিনিক ছিল না যেখানে সে যায়নি। অবশেষে একজন বৃদ্ধ চিকিৎসক তার সমস্ত মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখার পরেই তাকে বলেছিলেন, ‘‘মা, মনকে শক্ত করো। তোমার মাতৃত্বে সমস্যা আছে।’’

শ্বেতা জানতে চেয়েছিল তার সমস্যাটা ঠিক কোথায়।

বৃদ্ধ ডাক্তার আমতা আমতা করে বলেছিলেন, ‘‘ধরে নাও না আনএক্সপ্লেন্ড ইনফার্টিলিটি। সবার তো সব কিছু হয় না। তোমার এই সব জেনে কী হবে মা? তোমার বর জানে। সেও তো ডাক্তার। তাকে আমি সমস্তই বুঝিয়ে বলেছি।’’ ভদ্রলোক আবার চুপ থেকে বললেন, ‘‘ডেসটিনিই তো সব। সেটাকে খণ্ডাবে কী করে? যতই বিজ্ঞান এগিয়ে যাক...’’ সেই দিনটিকে শ্বেতা কোনও দিন ভুলতে পারেনি। মাতালের মতো সে দিন রাস্তা পেরিয়েছিল সে। তার জীবনের অন্যতম একটি ইচ্ছে ‘মাতৃত্ব’ কী ভাবে কোথায় যেন কর্পূরের মতো উড়ে গিয়েছিল। তার পর থেকেই সেই চরম একাকিত্ব তাকে গ্রাস করছিল। মাঝেমধ্যে সিনেমা দেখা আর বই পড়া ছাড়া আর কিছুই ছিল না। জন্ম নিচ্ছিল অবসাদ। সেই সময় হঠাৎই কলেজের বন্ধু ঐন্দ্রিলার সঙ্গে গড়িয়াহাটে দেখা। সঙ্গে তার বছর সাতেকের ফুটফুটে একটি মেয়ে। ঐন্দ্রিলাই এগিয়ে এসে বলেছিল, ‘‘দত্তক নিলাম। তার পর তোর কী খবর?’’ উত্তর দিতে পারেনি শ্বেতা। বিষয়টি বুঝেই বোধহয় ঐন্দ্রিলা কোনও মন্তব্য করেনি। সন্তান না থাকার জন্য অপমানিত কম হয়নি শ্বেতা। নিজের মাসতুতো বোনের বিয়েতে বরণ করতে দেওয়া হয়নি তাকে। এ সব কথা বড্ড মনে পড়ে শ্বেতার।

সে দিন বাড়ি ফিরে ঐন্দ্রিলাকে ফোন করে কী ভাবে দত্তক নিতে হয় জানতে চেয়েছিল শ্বেতা। জানতে চেয়েছিল হোমের ঠিকানাও। তার পর থেকে প্রায় দীর্ঘ চার বছর লড়ে গিয়েছে সামান্য একটি শিশুর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য। সে দিন চন্দন চেম্বার থেকে বাড়ি ফিরে পুতুলটিকে দেখেই বলেছিল, ‘‘ভারী সুন্দর দেখতে হয়েছে। তোমার মেয়ে বলেই মনে হচ্ছে। কেমন কোঁকড়ানো চুল। টানা টানা চোখ। রুমিও খুব খুশি হবে।’’

মেয়ের খুশি হওয়ার সময় হতে বাকি এখনও সাত দিন। তার আগে মেয়ের পুতুলের ওপরেই চলতে পারে মাতৃত্বের পরীক্ষানিরীক্ষা। শ্বেতা পুতুলটিকে সুন্দর একটা জামা পরাল। একটা প্লেটে খাবার নিয়ে তার সামনে রেখে বেশ গুরুগম্ভীর ভাবে বলল, ‘‘খেয়ে নাও। বেশি দেরি কোরো না। এর পরে বই নিয়ে বসতে হবে না? কালকে যে ক্লাস টেস্ট আছে।’’

পুতুলের সঙ্গে কথা বলতে বলতে শ্বেতা নিজেই হোহো করে হেসে উঠল। পুতুল কেনার পরে প্রায় এক দিন পেরিয়ে গেল। পরের দিন সকাল পেরিয়ে দুপুর। দুপুর পেরিয়ে বিকেল, সন্ধে এবং অবশেষে রাত এল। দিনের এক-একটি সন্ধিক্ষণে পুতুলটিরও যেন দ্রুত পরিবর্তন হল। শেষ বিকেলে শ্বেতার কোলের কাছে ঘুমিয়ে এখন যেন সে অনেকটাই তরতাজা। এ বারে এক গ্লাস দুধ খেয়ে সে খেলবে। তার পরে বসে হোমটাস্ক করবে। কিন্তু সে তো কথা বলতে পারে না। তাই নিজের মধ্যেই মা আর মেয়ের দু’টি ভিন্ন রূপ কল্পনা করে সে একটি শিশুর পরিচর্যার যাবতীয় বিষয় করায়ত্ত করতে ব্যস্ত।

চন্দন এল অনেক রাতে। শ্বেতা বোধহয় ঘুমিয়েই পড়েছিল। হঠাৎ সে চন্দনকে দেখে উঠে বলল, ‘‘দেখেছ মেয়েটা কেমন ঘুমিয়ে পড়েছে! বেশি চেঁচামেচি কোরো না। কালকে সকালে উঠতে দেরি হলে স্কুল যেতে পারবে না।’’ চন্দন অবাক হয়ে তার দিকে চেয়ে বলল, ‘‘তুমি কি পাগল হয়ে গিয়েছ? পুতুল কি তোমার মেয়ে হয়ে গিয়েছে না কি?’’ শ্বেতা এ বার একটু লজ্জা পেয়ে হেসে বলল, ‘‘মেয়ে কি না জানি না। তবে সারাক্ষণই মাথার মধ্যে রুমির দৈনন্দিন রুটিন কেমন কী হতে পারে তা নিয়েই ভাবছি। ওই যে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন না... ‘ছিলি আমার পুতুলখেলায়...’’ চন্দন এ বার খুনসুটির ছলে বলল, ‘‘ও আসলে তোমার বড় মেয়ে। রুমির চেয়ে সাত দিনের বড়। বুঝতে পারছি, তুমি ওভারএক্সাইটেড।’’

অবশেষে সেই দিন উপস্থিত হল। সকাল থেকেই হোমে নতুন জামা পরে বসে রুমি। রুমি তার হোমের নাম নয়। ওখানকার নাম দুর্গা। শ্বেতার রুমি নামটাই বেশি পছন্দের। রুমিকে আনতে সেই পুতুল নিয়েই এ দিন সাতসকালে হোমে হাজির হল শ্বেতা আর চন্দন। সমস্ত সরকারি প্রক্রিয়া শেষ করে একটি গাড়িতে করে তারা তিন জন ধীরে ধীরে চলতে শুরু করল গ্রামের ধানখেতের মধ্যে দিয়ে রাস্তা কেটে কেটে শহরের দিকে। শরতের মুখ। সারা আকাশ সোনা রোদে ভেসে উঠেছে। আকাশের মেঘের মধ্যেই যেন কে বার্তা দিয়েছে নতুন কারও বাড়িতে আসার। চন্দনের মতো এক জন আপাদমস্তক কাঠখোট্টা ডাক্তার, সেও এ দিন না বলে পারল না, ‘‘তোমায় দেখে মনে হচ্ছে মা দুর্গা যেন সরস্বতীকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়ি ফিরছে।’’

বাপের বাড়ি বলতে শ্বেতার কেউ নেই। বাইপাস করতে গিয়ে বাবা অপারেশন টেবিলেই মারা গিয়েছিলেন। তার পরে মা-ও চলে গেলেন। সেই নিঃসঙ্গতাও অজগরের মতো তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। এই বন্ধন থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র রুমি। তার আর তর সইছে না। কখন আসবে বাড়ি! আজ এক মিনিটও বড় দীর্ঘ মনে হচ্ছে। ছোট্ট রুমি কখনও হাসছে, কখনও কাঁদছে। প্রথমে ক্ল্যাপিং ডল বাড়িতে রাখার কথা ভাবলেও পরে সঙ্গে নিয়ে যায় শ্বেতা। আজ চন্দনও উত্তেজিত, আনন্দিত। ফুরফুরে। কিন্তু রুমির ছটফটানিতে মাঝে মাঝে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে চন্দন। শ্বেতা তাকে বোঝায়, ‘‘অত বিচলিত হলে চলে? একটা ছোট্ট শিশু অচেনা অজানা একটা পরিবেশ থেকে এক্কেবারে নতুন জায়গায় আসছে। তার তো মন খারাপ হতেই পারে!’’

বাড়িতে এসে অবশ্য রুমি শান্ত হল অনেক। শ্বেতার শ্বশুর আর মাসি শাশুড়ি রুমিকে সাদরে গ্রহণ করলেন। শ্বেতা মেয়েকে নিয়েই এখন ব্যস্ত। মেয়েকে দেখতে সে দিন থেকেই বাড়িতে অনেকে হাজির। রুমিকে প্রত্যেকের বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য নিমন্ত্রণের বন্যা বইল।

দু’এক দিনের মধ্যে রুমি অনেকটাই নতুন পরিবেশে ধাতস্থ হল। তবে, শ্বেতার মতো তারও এখন সর্বক্ষণের সঙ্গী ওই পুতুল। শ্বেতার পুতুলের দিকে তাকানোর আর কোনও সময় নেই। তার স্থান দখল করে নিয়েছে রুমি। ঘুম থেকে উঠেই পুতুলের কাছে গিয়ে হাততালি দেয়। রাতে শুতে যাওয়ার সময়ও তাকে ছাড়ে না। মাথার বালিশের এক দিকে পুতুল নিয়ে শুয়ে থাকে।

কয়েক দিন পরে শ্বেতা এক রবিবার দেখে তাকে নিয়ে গেল শ্রীরামপুরে তার এক জ্যাঠামশাইয়ের বাড়িতে। বাপের বাড়ির লোক বলতে এই জ্যাঠামশাই আছেন। বাড়িটি বেশ বড় এবং খোলামেলা। শ্বেতার মনে হয়েছিল, ভদ্রলোককে অবাক করে দেবে। শ্বেতার সঙ্গে রুমিকে দেখে তিনি গম্ভীর ভাবে বললেন, ‘‘এই বুঝি তোমার দত্তক মেয়ে? তোমার মতো দেখতে হয়নি!’’ শ্বেতা প্রথমেই দমে গেল। ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘শান্ত না দুষ্টু?’’ উত্তরের আগেই রুমি নিজেই তার দুষ্টুমির পরিচয় দিল। তার সঙ্গী পুতুলকে নিয়ে তত ক্ষণে এই ঘর-ওই ঘর দৌড়োদৌড়ি করতে শুরু করেছে সে। দৃশ্যটি দেখে ভদ্রলোক বেশ রেগে বললেন, ‘‘তোমার নিজের সন্তান হলে বোধহয় এত দুষ্টু হত না। আসলে দুধের সাধ কি ঘোলে মেটে!’’ শ্বেতার মনে হল ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ভদ্রতার খাতিরেই সে পারল না। রুমিকে কড়া গলায় বকুনি দিতে বাড়ির সিঁড়ি থেকে লাফাতে গিয়ে ফেলে দিল পুতুলটা। পুতুলটা এখন হাততালি আর লাফাচ্ছে না। মাথাটাও কেমন থেঁতলে গিয়েছে। তার চোখও আর পিটপিট করছে না। রুমি কাঁদতে শুরু করল। শ্বেতার জ্যাঠামশাইয়ের মুখে বিরক্তির ছাপ আরও স্পষ্ট।

সব মিলিয়ে শ্বেতার আর ভাল লাগছিল না। কোনও রকমে রুমিকে ভুলিয়ে তাকে বাইরে নিয়ে এসে গাড়িতে উঠল। শুকনো কাগজের মতো অভিমান দলা পাকিয়ে শ্বেতার গলা টিপে ধরছে। বুকের ভিতরটা যেন নিমেষে খালি হয়ে গেল। শ্বেতার মা যে দিন মারা গিয়েছিলেন, সে দিনও এ রকমই এক শূন্যতা তাকে গ্রাস করেছিল। কোনও প্রিয়জনকে হারানোর সেই ব্যথা। এখন তো তার সেই শূ্ন্যতা পূরণ করেছে রুমি। তা হলে সেই দুঃখের উৎস কোথায়?

হাত দিয়ে দেখল, গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে। চামড়ার নীল ধমনীর আঁচড়ে কে যেন সাদা দাগ বুলিয়ে দিয়েছে। সে কি মৃত? সেই মুহূর্তে নিজেকে কেমন অসহায় লাগল তার। পাশে মেয়েটা ভাঙা পুতুল নিয়ে একমনে খেলতে ব্যস্ত।

ভয়ার্ত মুখে তার দিকে চেয়ে চিমটি কাটল সে। চেঁচিয়ে উঠল রুমি। ধড়ে যেন তার প্রাণ এল। রুমির হাত থেকে ভাঙা পুতুলটিকে নিয়ে তার আঁচলের তলায় লুকোলো শ্বেতা। তার পর দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল রুমিকে। এ বার সে নিজেই বুঝতে পারল, ভেঙে যাওয়া পুতুলই তার হৃদয় কুরে কুরে খাচ্ছে। কান্নাভেজা গলায় সে রুমিকে বলল, ‘‘ওই পুতুল আর চেয়ো না মা। ওটা ছিল আমারই পুতুল। আমাকেই ছেড়ে সে চলে গিয়েছে। তোমাকে আর একটা পুতুল কিনে দেব।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Short Story Literature
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy