Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
chess

Chess: আনন্দ থেকে প্রজ্ঞানন্দ, কী ভাবে ভারতের দাবাড়ু তৈরির কারখানা হয়ে উঠল দক্ষিণ ভারত

বর্তমানে দাবাকে পাঠ্য বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তামিলনাড়ুতে। সেখানকার প্রতিটি স্কুলে নিয়ম মেনে করে শেখানো হয়। ফলে অনেক ছোট থেকেই দাবার প্রতি উৎসাহ তৈরি হয়। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান বলছে, শুধু মাত্র তামিলনাড়ুতে নথিভুক্ত দাবাড়ুর সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। নথিভুক্ত নয় এমন দাবাড়ুর সংখ্যা লাখের বেশি। প্রতি বছর শুধু তামিলনাড়ুতে ২০০-র বেশি দাবা প্রতিযোগিতা হয়।

আনন্দ, প্রজ্ঞানন্দ দু’জনেই চেন্নাইয়ের বাসিন্দা।

আনন্দ, প্রজ্ঞানন্দ দু’জনেই চেন্নাইয়ের বাসিন্দা। ফাইল চিত্র।

দেবার্ক ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২২ ২০:৩১
Share: Save:

সালটা ১৯৬১। ভারতের প্রথম ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার হন ম্যানুয়েল অ্যারন। ১৯৮৮ সালে ভারতের প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার হন বিশ্বনাথন আনন্দ। ২০০১ সালে ভারতের প্রথম মহিলা গ্র্যান্ড মাস্টারের নাম সুব্বারমন বিজয়লক্ষ্মী। চলতি বছরই মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনকে হারিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ড মাস্টার আর প্রজ্ঞানন্দ। এই চার জনের মধ্যে মিল কোথায়? চার জনেরই বাড়ি তামিলনাড়ুতে। শুধু এই চার জন নন, বর্তমানে ভারতে যে ৭৩ জন গ্র্যান্ড মাস্টার রয়েছেন তার মধ্যে ২৪ জনই দক্ষিণ ভারতের। কী ভাবে এত দাবাড়ু উঠে আসছে ভারতের দক্ষিণ থেকে? কী ভাবে দাবাড়ু তৈরির কারখানা হয়ে উঠছে দক্ষিণ ভারত?

তামিলনাড়ুতে দাবা সংস্থা গড়ে ওঠে ১৯৪৭ সালে। শুরুর দিকে খুব একটা প্রচার ও প্রসার না হলেও ম্যানুয়েল ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার হওয়ার পরেই বিশ্বের নজর গিয়ে পড়ে তামিলনাড়ুর উপর। ১৯৭২ সালে সোভিয়েত সাংস্কৃতিক সেন্টারে একটি দাবা ক্লাব শুরু করেন ম্যানুয়েল। সেই ক্লাবে দাবার প্রসারে সাহায্য করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। দাবার সরঞ্জাম থেকে শুরু করে প্রশিক্ষক আসতেন সে দেশ থেকে। ধীরে ধীরে স্থানীয়দের মধ্যে দাবা নিয়ে উৎসাহ জন্মায়।

বাংলার প্রথম তথা ভারতের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড মাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়ার মতে, দক্ষিণ ভারতে দাবা নিয়ে উৎসাহ বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ জেলা স্তরে দাবার প্রসার। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘বিশ্ব জুড়ে দাবায় যেমন সোভিয়েত ইউনিয়ন, ফুটবলে যেমন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ঠিক তেমনই ভারতীয় দাবায় সেরা দক্ষিণ ভারত। সেখানকার রাজ্যগুলিতে জেলা স্তরের সংস্থাগুলি অনেক বেশি সচল। প্রতিটি জেলায় দাবার উন্নতি হয়েছে। ৮০-র দশক থেকে নিয়ম করে প্রতি বছর জেলা স্তরে বড় প্রতিযোগিতা হয়। এখন তো তামিলনাড়ু, কেরলে গ্রামে গ্রামে দাবা প্রতিযোগিতা হয়। ফলে অনেক বেশি দাবাড়ু উঠে আসে। সেখান থেকে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিনিধিত্ব করে।’’

বর্তমানে দাবাকে পাঠ্য বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তামিলনাড়ুতে। সেখানকার প্রতিটি স্কুলে নিয়ম মেনে করে শেখানো হয়। ফলে অনেক ছোট থেকেই দাবার প্রতি উৎসাহ তৈরি হয়। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান বলছে, শুধু মাত্র তামিলনাড়ুতে নথিভুক্ত দাবাড়ুর সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। নথিভুক্ত নয় এমন দাবাড়ুর সংখ্যা লাখের বেশি। প্রতি বছর শুধু তামিলনাড়ুতে ২০০-র বেশি দাবা প্রতিযোগিতা হয়। আর সেখানে প্রত্যক্ষ মদত থাকে রাজ্য সরকারের। তামিলনাড়ু সরকার খেলার দিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তাই তো দাবা অলিম্পিয়াডের আসর চেন্নাইয়ে বসার পরে টুইট করে নিজের আনন্দের কথা জানান তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন।

দক্ষিণ ভারতের মতো না হলেও বাংলা থেকেও তো অনেক গ্র্যান্ড মাস্টার উঠে এসেছে। তা হলে কেন বাংলায় দাবার প্রসার তত বেশি হয় না। দিব্যেন্দুর মতে, তার কারণ জেলা স্তরে দাবাকে জনপ্রিয় করতে না পারা। তিনি বললেন, ‘‘বাংলায় সব খেলা কলকাতা কেন্দ্রিক। জেলা স্তরে কম ছড়িয়েছে। ফুটবল ছাড়া জেলা থেকে কতগুলো খেলোয়াড় উঠে আসে। তার ফলে দেখা যাচ্ছে একটা সময়ের মধ্যে কয়েক জন দাবাড়ু উঠছে। তার পরে আবার অনেক বছর কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দাবাড়ুর সংখ্যা কমছে। জেলা স্তরে যত দিন না দাবার জনপ্রিয়তা বাড়ছে তত দিন এই সমস্যার কোনও সমাধান নেই।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE