স্বপ্নপূরণ: সফল রাখি। (ডান দিকে) চানুর সঙ্গে নিজস্বী। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বাংলার সোনার মেয়ে রাখি হালদার যখন ক্লিন অ্যান্ড জার্ক ইভেন্টে নতুন রেকর্ড করতে গেলেন, তখন স্কোরবোর্ড তাঁর লক্ষ্যের ওজন দেখাল ১২৫ কেজি। বিস্ময়ে সে দিকে তাকিয়ে মঞ্চের কাছেই বসে থাকা মীরাবাই চানুও। চিৎকার করে উৎসাহও দিচ্ছিলেন চব্বিশ ঘণ্টা আগে তিনটি রেকর্ড গড়ে সোনা জেতা মণিপুরের মেয়ে।
পুরো ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে তখন স্তব্ধতা। রাখির স্বামী, মা এবং পরিবারের লোকজনও রয়েছেন সেই দলে। বিস্ময়ের কারণ, দ্বিতীয় ‘বারবেল’-এ ১২১ কেজি তুলতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পরে কেন এমন ঝুঁকি নিলেন নদিয়ার হাবিবপুরের মেয়ে? মাটি থেকে সেই ওজনটা শেষ পর্যন্ত তুলতেই পারলেন না বছর আঠাশের মেয়ে। বারবেল মাটিতে ফেলে মঞ্চ থেকে নেমে পায়ের পিছনের পেশি ধরে বসে পড়লেন। ফিরে গেলেন ড্রেসিংরুমে।
কেন ১২৫ কেজি ওজন তুলতে গেলেন? মেয়েদের ৬৪ কেজি বিভাগে অনায়াসে সোনা জেতা রাখি বলে দিলেন, ‘‘আমরা কত ওজন তুলব, সেটা ঠিক করে দেন কোচ। উনি বললেন সোনা যখন জিতে গিয়েছি তখন রেকর্ডের জন্য ঝাঁপাও। সেটারই চেষ্টা করেছিলাম। বিশ্বাস করুন, জাতীয় শিবিরে আমি পাঁচ-ছয় বার করে ১২৫ কেজি ওজন তুলি। এখানে কেন পারলাম না বুঝতে পারছি না। পেশিটা টেনে ধরল।’’ বলতে বলতেই বাঁ দিকের কোমরের নীচের অংশ দেখান তিনি।
রাখি যে সোনা জিতবেন তা ঠিক হয়ে গিয়েছিল দিনের শুরুতেই। স্ন্যাচে ৭৩ কেজি ওজন তোলার পরে ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১১৭ কেজি তুলে (মোট ২১০ কেজি) নিজের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন তিনি। রুপো জেতা হরজিন্দর কৌর শেষ করলেন অনেক পিছনে (২০০ কেজি)। রাখির এ দিন লক্ষ্য ছিল এক মাস আগে কাতার আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপে করা ২১৮ কেজি টপকে নিজের রেকর্ড ভাঙা। বলছিলেন, ‘‘নতুন রেকর্ড গড়ার ইচ্ছে নিয়েই এখানে নেমেছিলাম। সেটা করতে পারলে অলিম্পিক্সের যোগ্যতা পাওয়ার রাস্তাটা আরও মসৃণ হত।’’ বলার পরে টোকিয়ো অলিম্পিক্সের দিকে অনেকখানি এগিয়ে যাওয়া রাখি বলে দেন, ‘‘আমি যদি দু’মাস চোটমুক্ত থাকি, তা হলে অলিম্পিক্সে যাওয়া কেউ আটকাতে পারব না। কাজ়াখস্তানে এপ্রিলে নামছি। ওখানে আশা করছি টোকিয়োতে নামার যোগ্যতা পেয়ে যাব।’’
অলিম্পিক্সে নামার জন্য রাখি ওজন স্থির করেছেন মোট ২২৬ কেজি। স্ন্যাচে ৯৮ এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১২৮। ডোপ টেস্ট দিতে যাওয়ার আগে বলছিলেন, ‘‘জাতীয় শিবিরে এটা আমি করছি নিয়মিত। চেষ্টা তো করবই।’’
রেলে চাকরি করলেও অচিন্ত্যের মতো রাখিও নিয়মিত পুষ্টিকর খেতে পারেন না আর্থিক সমস্যার জন্য। বলছিলেন, ‘‘আমাকে মা-বাবাকে নিয়মিত টাকা পাঠাতে হয়। আমি ডোপের কারণে বাইরের খাবার খাই না। পাতিয়ালার শিবিরে বছরের পর বছর থাকলেও নিজেই পুষ্টিকর খাবার কিনে খাই। বিদেশ থেকে সলমন মাছ কিনে আনতে হয়। যে মাছের এক কেজির দাম চার হাজার টাকা। সারা বছর ওটা সেদ্ধ করে খেলে শারীরিক সক্ষমতা অনেক বাড়ে। কিন্তু দু’মাসের বেশি তা খেতে পারি না টাকার অভাবে। এখানে পিছিয়ে পড়ছি অন্যদের কাছে। আমার একটা স্পনসর দরকার। তা হলে এই সমস্যা মিটবে।’’
চানু, রাখি, অচিন্ত্য ছাড়াও এ দিন ক্ষুদিরাম কেন্দ্রের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন দু’বারের অলিম্পিয়ান গোপাল খাঁড়া। শতবর্ষ পার করে সদ্য ১০১-এ পা দিয়েছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতির স্তরে অসংখ্য পদক জেতা গোপালবাবু হাওড়ার বাড়ি থেকে চলে এসেছিলেন জাতীয় প্রতিযোগিতার আসরে। বাংলার এবং সর্বভারতীয় ভারোত্তোলনের সবচেয়ে প্রবীণ ক্রীড়াবিদকে দেখে তাঁর আশীর্বাদ নিতে ছুটে আসেন অসংখ্য ভারোত্তোলক ও বিভিন্ন রাজ্যের কর্তারা। যাঁর বাড়িতে বাংলার ভারোত্তোলনের জন্ম, সেই গোপালবাবু বলছিলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস মীরাবাই চানু টোকিয়ো থেকে পদক আনবেই। খুব ভাল ওজন তুলছে মেয়েটা। স্ন্যাচ এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্ক দুটোই ভাল করছে।’’ তাঁকে রাজ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সংবর্ধিত করা হয়।
এ দিন পুরুষদের ৮১ কেজি বিভাগে সোনা জেতেন এসএসবি-র পাপুল চাঙ্গমাই। ৮৮ কেজি বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হলেন সাম্বো পালুং।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy